জাতীয়

হাসপাতালের খাদ্য নিয়ে রিপোর্ট করায় ঠাকুরগাঁওয়ে সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা ও গ্রেফতার

বাংলাদেশের  উত্তরাঞ্চলের জেলা ঠাকুরগাঁওয়ে শনিবার রাতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দায়ের মামলায় একজন সাংবাদিককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

দৈনিক ইত্তেফাক ও ইনডেপেনডেন্ট টেলিভিশনের ঠাকুরগাঁও জেলা প্রতিনিধি তানভীর হাসান তানুর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি সদর হাসপাতালে করোনা রোগীদের জন্য সরবরাহ করা খাবারের মান নিয়ে একটি “মিথ্যা ও ভিত্তিহীন” প্রতিবেদন করার মাধ্যমে হাসপাতালটির “মানহানি” করেছেন।

গেলো রাতে এই গ্রেপ্তারের ঘটনার পর রোববার সকালের কিছু ছবি বিবিসি বাংলা প্রকাশ করেছে, যেখানে দেখা যায় সাংবাদিক হাসান হাসপাতালের বেডে শুয়ে আছেন, তাঁর হাতে হাতকড়া লাগানো। পুলিশ বলছে, গ্রেপ্তারের পর অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাকে ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এই হাসপাতালটির কর্তৃপক্ষই হাসানের বিরুদ্ধে মামলাটি করেছে।

হাসানের পরিবার বলছে, তিনি শারীরিকভাবে অসুস্থ, তাকে অবিলম্বে মুক্তি দেয়া হোক। এদিকে এই গ্রেপ্তারের ঘটনায় ঠাকুরগাঁওয়ে সাংবাদিকদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। এই গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে এবং তার মুক্তির দাবিতে শনিবার রাতেই বিক্ষোভ করেছে ঠাকুরগাঁও প্রেসক্লাব।

যা হয়েছিল ঠাকুরগাঁওয়ে?

ঠাকুরগাঁওয়ের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন বিবিসি বাংলাকে জানান, আধুনিক সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক নাদিরুল আজিজ বাদী হয়ে শুক্রবার তিনজন সাংবাদিকের নামে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা করেছেন। তানভীর হাসান তানু সেই মামলার ১ নম্বর আসামি।

তিনি জানান, হাসানকে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কক্ষ থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি সেখানে মামলার খোঁজ নিতে গিয়েছিলেন।

হাসানের বড় ভাই মাহবুব আলম সোহাগ বিবিসিকে জানান, এ মাসের শুরুতে ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালের করোনা ইউনিটে সরবারহ করা খাবারের মান নিয়ে একটি রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। হাসান একটি অনলাইন নিউজ পোর্টালে কাজ করেন, এবং উল্লেখিত খবরটি সেখানেই প্রকাশিত হয়েছিল।

প্রকাশিত ওই খবরকে “মিথ্যা, ভিত্তিহীন এবং মানহানিকর” উল্লেখ করে ৯ই জুলাই ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়ের করে বলে জানিয়েছে পুলিশ। এজাহারে বলা হয়েছে যে, ওই সংবাদ প্রকাশের উদ্দেশ্য অসৎ।রিপোর্টটির মাধ্যমে সরকারকে বেকায়দায় ফেলার চেষ্টা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে এজাহারে।

তানভীর হাসান তানু ছাড়াও ওই একই রিপোর্ট আরো কয়েকজন সাংবাদিক করেছিলেন, যে কারণে তার সঙ্গে মামলায় আসামি করা হয় আরো দুইজন সাংবাদিককে।পুলিশ জানিয়েছে, তানভীর হাসান তানুকে আদালতে হাজির করার হবে।

বাংলাদেশে মহামারির মধ্যে স্বাস্থ্য খাত ও হাসপাতাল বিষয়ে সংবাদ প্রকাশের ক্ষেত্রে নানা বিধিনিষেধ দেখা যাচ্ছে। মাত্র কয়েকদিন আগে ঢাকার সিভিল সার্জন একটি নোটিশ জারি করে হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের গণমাধ্যমকে তথ্য দিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন। এদিকে, তানভীর হাসান তানুর বড়ভাই আলম বিবিসিকে জানান, “তার ভাই করোনাভাইরাস আক্রান্ত ছিলেন।গতকালই তানভীর হাসানের কোভিড-১৯ রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে”।
তিনি আরও জানান, “সন্ধ্যায় একটি খবরের বিষয়ে খোঁজ নিতে থানায় গিয়ে গ্রেপ্তার হয় সে। করোনার কারণে এমনিতেই তার নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা ছিল কিছুটা। পরে রাতে তার শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায়।আমার ভাই অসুস্থ, আমরা চাই তাকে কারাগারে বা হাসপাতালে না রেখে অবিলম্বে মুক্তি দেয়া হোক।”

এদিকে, তানভীর হাসান তানুকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে এবং তার মুক্তির দাবিতে শনিবার রাতেই বিক্ষোভ করেছেন ঠাকুরগাঁও প্রেসক্লাব।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

18 − two =

Back to top button