Lead Newsজাতীয়

হাসিনাকে নিয়ে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের ভয়ংকর তথ্যফাঁস

এবার ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে রীতিমত ভয়ংকর ও চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার প্রতিষ্ঠান হিউম্যান রাইটস ওয়াচ তথা এইচআরডব্লিউ। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে জুলাই আন্দোলন নিয়ে একটি প্রতিবেদন হস্তান্তর করেছে প্রতিষ্ঠানটি, যা নিয়ে ইতোমধ্যে সারাদেশে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। সেখানে তারা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদেরকে উদ্ধৃত করে জানিয়েছে- ক্ষমতাচ্যুত বাংলাদেশি একনায়ক শেখ হাসিনা সরাসরি গুম-হত্যায় নির্দেশ দিয়েছিলেন।

এছাড়া এইচআরডব্লিউ র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন তথা র‍্যাবের বিলুপ্তির সুপারিশ করে বলেছে, হত্যাকাণ্ড এবং জোরপূর্বক গুমের জন্য দায়ী কর্মকর্তাদের তাদের অপরাধের জন্য জবাবদিহি করতে হবে। কিছু জবাবদিহিতা থাকা দরকার। পিয়ারসন বলেন, শেখ হাসিনার ২০০৯-২০২৪ সালের শাসনামলে নিরাপত্তা বাহিনী রাজনীতিকরণ করা হয়েছিল এবং তারা দলীয় ক্যাডারদের শাসন করার মতো আচরণ করেছিল। এটির জন্য পদ্ধতিগত সংস্কার প্রয়োজন।

জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের সময় অধিকার প্রতিষ্ঠা ছিল মূলনীতি, তা তুলে ধরে তিনি বলেন, বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ এখন জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে মানবাধিকারের গুরুত্ব উপলব্ধি করেছে। মানবাধিকার সংস্থাটির এশিয়া পরিচালক এলাইন পিয়ারসনের নেতৃত্বে এইচআরডব্লিউর একটি প্রতিনিধিদল মঙ্গলবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় ডঃ ইউনূসের সাথে দেখা করে প্রতিবেদনতি হস্তান্তর করেন। এসময় বাংলাদেশের অধিকার পরিস্থিতির উন্নয়নে অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার উদ্যোগের প্রশংসা করেন তিনি। এইচআরডব্লিউ-এর এশিয়া প্রধান বলেন, ‘এখন পর্যন্ত যে অগ্রগতি হয়েছে তার আমরা প্রশংসা করি।’

এইচআরডব্লিউয়ের প্রচেষ্টার প্রশংসা করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, শেখ হাসিনার স্বৈরশাসনের গত ১৬ বছরে তাদের প্রতিবেদনগুলো সরকার দ্বারা সংঘটিত ব্যাপক অপরাধের উন্মোচন করেছে। র‌্যাব তার অপরাধের জন্য ক্ষমা চেয়েছে, তবে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড এবং জোরপূর্বক গুমের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিচারের মুখোমুখি হতে হবে এবং শাস্তি পেতে হবে।

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস বলেন, আমরা স্বচ্ছতার প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা সমস্ত সংস্কার সুপারিশ প্রকাশ করছি, জনগণকে কাঙ্ক্ষিত সংস্কারের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ করে দিচ্ছি। যেমনটি আপনি উল্লেখ করেছেন, ১৫ বছরের নিপীড়ন ও অপরাধের অবসান ঘটানো একটি চ্যালেঞ্জিং প্রচেষ্টা হবে।

এইচআরডব্লিউয়ের ঐ প্রতিবেদন অনুসারে, বলপূর্বক গুমের সাথে জড়িত কর্মকর্তারা হিউম্যান রাইটস ওয়াচকে আরও বলেছেন যে, শেখ হাসিনা বা ঊর্ধ্বতনরা সরকার আটকের বিষয়ে অবগত ছিলেন এবং কিছু ক্ষেত্রে হাসিনা সরাসরি জোরপূর্বক গুম এবং হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন।

এর আগে, প্রতিষ্ঠানটি এক রিপোর্টে গতবছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্রজনতার আন্দোলনে পুলিশি বর্বরতায় সরাসরি রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা ছিল বলে মন্তব্য করে। এছাড়া গতবছরের ওই আন্দোলনের সময় পুলিশের ভূমিকা মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের চেয়ে রাজনৈতিক নেতারাই বেশি নির্ধারণ করে দিতেন বলেও রিপোর্টে উঠে এসেছে। এমনকি রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর দীর্ঘদিন ধরে দায়মুক্তির ব্যবস্থা থেকে উপকৃত হওয়া শক্তিশালী এবং রাজনৈতিক নিরাপত্তাবাহিনীর সাথে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার লড়াই করছে বলেও ঐ প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়ে।

এইচআরডব্লিউয়ের এশিয়া প্রধান বলেছেন, তার সফরের সময় তিনি সংস্কার কমিশনের বেশ কয়েকজন প্রধান এবং রোহিঙ্গা ইস্যুতে প্রধান উপদেষ্টার উচ্চ প্রতিনিধির সাথে দেখা করেছেন। প্রধান উপদেষ্টা হাজার হাজার বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের জন্য রাখাইনে তাদের জন্মভূমিতে একটি নিরাপদ অঞ্চল তৈরির আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি আশা করেছেন যে, জাতিসংঘ, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং প্রধান বিদ্রোহী গোষ্ঠী, আরাকান আর্মি, নিরাপদ অঞ্চলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

nine − 3 =

Back to top button