ভাইরাল

‘হিন্দুদের রক্তস্নান’ শিরোনামে ভাইরাল ভিডিওর মানুষটি একজন মুসলিম

করোনাভাইরাসে সংক্রমিত কয়েকজন মুসলমান কোয়ারেন্টিনে না যেতে চাওয়াকে কেন্দ্র করে পশ্চিমবঙ্গের হুগলী জেলার তেলেনিপাড়ায় গত সপ্তাহে যে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হয়েছে, সেই সময়ের একটি ভিডিওতে রক্তাক্ত এক মুসলিম ব্যক্তিকে ‘হিন্দুদের রক্তস্নান’ বলে ভাইরাল করা হয়েছে।

ওই দাঙ্গায় যেমন হিন্দুদের ঘর-বাড়ি-দোকান জ্বালানো হয়েছে, তেমনই মুসলমানদের ঘর-বাড়িও পোড়ানো হয়েছে। আহত হয়েছে দুই সম্প্রদায়ের মানুষই। দুই ধর্মাবলম্বী কয়েকশ মানুষ ঘর-বাড়ি হারিয়ে এখন আশ্রয়শিবিরে আছেন। সেরকমই একটি আশ্রয়শিবিরে আছেন চটকল শ্রমিক মঞ্জুর আলম। হাসপাতাল থেকে সদ্য ছাড়া পেয়েছেন আলম।

মাথায় ৫২টা সেলাই পড়েছে, হাতে কোপানো হয়েছিল, সেখানে ১১টা আর কান কেটে অর্ধেক ঝুলছিল, তা জোড়া লাগাতে সাতটি সেলাই করতে হয়েছে, খবর বিবিসি।

সেখান থেকেই টেলিফোনে তিনি বলেন, ‘১০ তারিখ রোজা ভাঙ্গার পরে আমি আর দুএকজন ঘরের বাইরে বেরিয়েছিলাম। চারদিকে হাঙ্গামা হচ্ছিল। হঠাৎই আমাদের দুজনকে আক্রমণ করে বাঁশ, লোহার রড, নেপালি চাকু দিয়ে। ওখান থেকে আমাদের উদ্ধার করে নিয়ে আসে আমার এক ভাই আর অন্য একজন। তখনই কেউ আমার একটা ভিডিও তুলেছিল।’

সেই ভিডিওটি বহু মানুষ দেখেছেন আর শেয়ারও করেছেন নানা সামাজিক প্ল্যাটফর্মে। মূল ভিডিওটিতে দেখা যাচ্ছে এক মধ্যবয়সী মানুষের মাথা থেকে অঝোরে রক্ত বেরচ্ছে, তার গায়ের জামা ভিজে গেছে বৃষ্টির জল আর রক্তে। সন্ধ্যাবেলার ঘটনা সেটি। আশপাশ থেকে কয়েক জন তার শুশ্রূষা করছেন। ওই ভিডিওটি বেশ কয়েকজন বিজেপি নেতাও শেয়ার করেছেন।

ভিডিওর ক্যাপশনটা এরকম: ‘আর কত দিন হিন্দুদের রক্ত ঝরবে দিদি? আপনি আর আপনার রাজনীতি বাংলার হিন্দুদেরকে কোন জায়গায় পৌঁছেছে দিয়েছে, সবাই বুঝতে পারছে।… হুগলী জেলার তেলেনিপাড়া এলাকার ঘটনা।’

দিদি বলতে এখানে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীকে বোঝানো হয়েছে। যে রক্তাক্ত ব্যক্তির ভিডিও দেখিয়ে হিন্দুদের রক্তস্নান বলে মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে প্রশ্ন তোলা হয়েছে, সেটা আসলে মঞ্জুর আলমের আহত হওয়ার পরে তোলা সেই ভিডিওটি।

শ্যামনগর নর্থ জুটমিলে কর্মরত মঞ্জুর আলম বলছিলেন, ‘যে ভিডিও তুলেছিল, সে আমার নাম দেয়নি, কিন্তু হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার পরে শুনছি ওই ভিডিওটা মনোজ নামের কারো বলে ফেসবুকে সারা দেশে ছেয়ে গেছে! আমি মুসলমান, আর ভিডিওর ওপরে লেখা হল একজন হিন্দু রক্তে ভেসে যাচ্ছে,’ বলছিলেন আলম।

ভিডিওটি ভাইরাল হওয়া প্রশ্নে আরএসএসের বাংলা পত্রিকা স্বস্তিকার সম্পাদক ও বিজেপি নেতা রন্তিদেব সেনগুপ্ত অবশ্য বলছেন, ‘আমি ওই ভিডিওগুলি দেখিনি, তাই বলতে পারব না কোনটা ভুয়া আর কোনটা সত্যি। ফেক ভিডিও ছড়ানো নিশ্চয় উচিত নয়। কিন্তু ভুয়া ভিডিও কেন ছড়ানো হচ্ছে, সেই প্রশ্ন তুলে কিন্তু তেলেনিপাড়ার ঘটনাটা লঘু করা যায় না।’

‘সেখানকার বাসিন্দারা বলছেন একটি সম্প্রদায়ের মানুষই প্রথম হাঙ্গামা শুরু করে। নিশ্চয় তার জন্য সেই সম্প্রদায়ের সবাইকে দায়ী করা যায় না। কিন্তু ঘটনা এটা যে ওই বিশেষ সম্প্রদায়ের মানুষ দাঙ্গাটা সৃষ্টি করে এবং আক্রান্ত হন হিন্দুরা। অনেক হিন্দু পরিবারকে তেলেনিপাড়া ছেড়ে চলে আসতে হয়েছে। ভুয়া ভিডিও যেমন ছড়ানো উচিত নয়, তেমনই সত্যটাকে চাপা দেওয়ার চেষ্টা করাও ঠিক নয়,’ বলছিলেন সেনগুপ্ত।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

three × three =

Back to top button