১৫ বছরে চরম বাজে অবস্থার মুখোমুখি মেসি!
শৈশবের ক্লাব বার্সেলোনা ছেড়ে প্যারিস সেন্ট জার্মেইতে (পিএসজি) যোগ দিয়েছেন লিওনেল মেসি। এখানে আসার পর এখনো নিজেকে খুঁজে পাননি আর্জেন্টিনা সুপারস্টার। বিশেষ করে ছয়বারের বর্ষসেরা ফুটবলার ধুঁকছেন ফ্রেঞ্চ লিগ ওয়ানে। ব্যতিক্রম উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগ।
ইউরোপের মঞ্চে এই মৌসুমে পিএসজির হয়ে তিন ম্যাচে তিন গোল করেছেন মেসি। কিন্তু ফ্রেঞ্চ লিগে পাঁচ ম্যাচ খেলে ফেললেও গোল পাচ্ছেন না আর্জেন্টিনা অধিনায়ক। গত ১৫ বছরের মধ্যে এমন অভিজ্ঞতা প্রথম যে ঘরোয়া শীর্ষস্থানীয় লিগে মৌসুমের গোলমুখ খুলতে এতো সময় লাগছে মেসির।
২০০৯ মৌসুমে লা লিগায় প্রথম গোলের জন্য মেসিকে অপেক্ষা করতে হয়েছে লিগের অষ্টম রাউন্ডের জন্য। যদিও ওখানে মেসির দায় নেই। বার্সেলোনার হয়ে প্রথম পাঁচ রাউন্ড তিনি খেলতে পারেননি ইনজুরির কারণে। এর আগে ২০০৫-০৬ মৌসুমে প্রথম গোলের জন্য অষ্টম ম্যাচ অবধি অপেক্ষা করতে হয়েছে মেসিকে।
ফ্রেঞ্চ লিগে এই মৌসুমে ইতোমধ্যে ১৩টি ম্যাচ খেলেছে পিএসজি। ইনজুরি ও অভিষেক আনুষ্ঠানিকতার কারণে আট ম্যাচে খেলতে পারেননি মেসি। পাঁচ ম্যাচে ৩২৫ মিনিট খেলেও গোল পাননি। ফরাসি লিগে মেসির গোলের অপেক্ষা ক্রমেই বাড়ছে। অথচ চ্যাম্পিয়নস লিগে ঠিকই গোল করছেন তিনি। এখানে সমস্যা নেই।
ফ্রেঞ্চ লিগে মেসির গোলখরার বেশ কয়েকটা কারণ খুঁজে পাওয়া গেছে। এনিয়ে মেসিও কথা বলেছেন সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে। জানালেন কেন ফরাসি লিগের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে পারছেন না তিনি। অথচ নিন্দুকেরা ফরাসি লিগকে ‘ফার্মার্স লিগ’ আখ্যা দিয়ে থাকেন। সেখানে গোল পাচ্ছেন না গোলমেশিন। এটা বড় বিস্ময়ের।
গোল না পাওয়ার ব্যাখ্যায় মেসি জানালেন ফরাসি লিগে শারীরিক ফুটবলটাই বেশি হয়। পিএসজির সুপারস্টার সম্প্রতি বলেছেন, ‘লিগ ওয়ানটা আরো বেশি শারীরিক লিগ। ম্যাচগুলো অধিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়। খেলোয়াড়রা শক্তিশালী এবং দ্রুতগতির। শারীরিকভাবে এটা অনেক পরিবর্তনশীল।’
মেসি যোগ করেন, ‘স্পেনে বল নেওয়ার জন্য বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কৌশলের ওপর নির্ভর করতে হয়। এটাই (স্প্যানিশ লিগ ও ফরাসি লিগের মধ্যে) সবচেয়ে বড় পার্থক্য।’ মেসির গোল না পাওয়ার আরেকটা কারণ পজিশন। এই মৌসুমে কয়েকটি ম্যাচে তাকে রাইট উইং-এ খেলানো হয়েছে।
আর নেইমারকে বাঁ দিকে খেলাচ্ছেন পিএসজি কোচ মাওরিসিও পচেত্তিনো। কিলিয়ান এমবাপ্পে খেলছেন সেন্টার ফরওয়ার্ড ভূমিকায়। ফরাসি লিগে আর্জেন্টাইন কোচের ছক ৪-৩-৩। পচেত্তিনোর রণ কৌশলের ছক ও পজিশন বদলের করণে গোলমুখের সামনে নিজেকে হারিয়ে খুঁজছেন মেসি।
লা লিগার ইতিহাসে সর্বোচ্চ গোলদাতা মেসি। ফরাসি লিগে তার গোল না পাওয়ার আরেকটা বড় কারণ আছে। সতীর্থদের কাছ থেকে তুলনামূলক কম বল পাচ্ছেন মেসি। লা লিগার চেয়ে ফরাসি লিগে ৪০ শতাংশ বল কম পাচ্ছেন তিনি। তাই গোলের সুযোগও বেশি তৈরি হচ্ছে না।
মেসির সমস্যা চলছে মাঠের বাইরেও। নতুন ঠিকানা প্যারিসে এখনো থিতু হতে পারেননি তিনি। প্রথম দেড় মাস স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে হোটেলে থেকেছেন মেসি। এখন যেখানে তার আবাসস্থল সেখান থেকে বাচ্চাদের স্কুল এবং পিএসজির কোচিং সেন্টারের মাঝে দূরত্বটা পর্যাপ্ত।
এনিয়ে কিছুটা অস্বস্তির মধ্যে আছেন মেসি। প্যারিসের রাস্তাঘাটও কাতালান শহরের মতো অতো শান্ত নয়। ফ্রান্সের রাজধানীর রাস্তারঘাটের ব্যস্ততা অনেক। এসব প্রতিকূল পরিবেশের প্রভাব পড়ছে মাঠে। আপাতত ইনজুরি নিয়ে মাঠের বাইরে আছেন মেসি। তার ফেরার সময় ঘনিয়ে এসেছে। এখন অপেক্ষা কেবল ঘরোয়া লিগে মেসির প্রথম গোলের।