দেশবাংলা

২০ বছর কারাভোগের পর ‘ফাঁসির আসামি’ নির্দোষ প্রমাণিত

বাগেরহাটে স্ত্রী ও মেয়েকে হত্যার অভিযোগে দীর্ঘ ২০ বছর কারাভোগের পর নির্দোষ প্রমাণিত হওয়ায় মুক্তি পেয়েছেন ফাঁসির আসামি শেখ জাহিদুর রহমান জাহিদ। গত ২৫ আগস্ট উচ্চ আদালত তাঁকে খালাস দেন। পরে গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় খুলনা জেলা কারাগার থেকে মুক্তি পান তিনি। খুলনা জেলা কারাগারের সুপার মো. ওমর ফারুক বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

মুক্তি পাওয়ার পরই সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে জাহিদ বলেন, ‘জীবনটা কখনো ভালো কেটেছে, কখনো কষ্টে কেটেছে। প্রতিনিয়ত মৃত্যু কামনা করতাম। অনেক দিন রাতের বেলা ঘুম না এলে দরজা ধরে দাঁড়িয়ে থাকতাম।’

মা-বাবার মৃত্যুর সময় শেষ দেখা করতে না পারার আক্ষেপের কথা জানান জাহিদ। তিনি বলেন, ‘মা-বাবা মারা গেছে, নানা কষ্ট, জ্বালা-যন্ত্রণা। মা-বাবাকে চোখের দেখা দেখতে পারিনি।’

বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলার সদর ইউনিয়ন উত্তরপাড়া এলাকায় স্ত্রী রহিমা ও দেড় বছরের মেয়ে রেশমা হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি ছিলেন জাহিদ।

মামলার এজাহারে জানা যায়, ১৯৯৭ সালের ১৫ জানুয়ারি জাহিদের শ্বশুরবাড়িতে তাঁর স্ত্রী রহিমা ও সন্তানের লাশ উদ্ধার করা হয়। ১৬ জানুয়ারি রহিমার বাবা মঈনুদ্দিন ফকিরহাট থানায় হত্যা মামলা করেন। পুলিশ ১৯৯৭ সালের জুনে জাহিদকে আসামি করে অভিযোগপত্র দাখিল করে। ২০০০ সালের ২৫ জুন বাগেরহাট জেলা ও দায়রা জজ তাঁকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন।

এরপর ২০০৪ সালে বিচারিক আদালতের মৃত্যুদণ্ডাদেশ অনুমোদনের শুনানির জন্য তা (ডেথ রেফারেন্স) হাইকোর্টে আসে। শুনানি শেষে হাইকোর্ট বিচারিক আদালতের রায় বহাল রাখেন। এদিকে, ২০০৭ সালে মামলাটি আপিল বিভাগে আসে। দীর্ঘদিন ঝুলে থাকা মামলাটি প্রধান বিচারপতির নজরে আসে। এর পর থেকেই মামলাটির শুনানি শুরু হয় এবং শুনানিতে মামলাটির বিভিন্ন অসংগতি প্রকাশ পায়। যার পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৫ আগস্ট জাহিদ শেখকে খালাস দেওয়ার নির্দেশ দিয়ে রায় দেন আপিল বিভাগ।

মুক্তি পাওয়ার পর জাহিদ বলেন, ‘উপরওয়ালা আমাকে খালাস দিয়েছেন, আমার খুব ভালো লাগছে। এখন আমি যে কিছু করে খাব, আমার তো টাকা-পয়সা নাই।’

রাষ্ট্রপক্ষের কাছে ক্ষতিপূরণ দাবি করেছেন জাহিদ। তিনি বলেন, ‘২০ বছর কারাগারে… এ সময়টা তো আর ফিরে পাব না। এখন রাষ্ট্রপক্ষ যদি আমাকে কিছু ক্ষতিপূরণ দেয়, তাহলে সেটা দিয়ে কিছু করতে পারব। ভারী কাজ করতে পারব না।’

হত্যার অভিযোগ আনা শ্বশুর-শাশুড়ির শাস্তি দাবি না করে জাহিদ বলেন, ‘আমার শ্বশুর-শাশুড়ি ভালো মানুষ। তাঁরা আমার যা ক্ষতি করেছেন, ওই পর্যন্তই।’

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

5 × one =

Back to top button