Lead Newsরাজনীতি

২১ আগস্ট: স্প্লিন্টারের ব্যথা আজও ভুলতে পারি না

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট। দিনটি অন্য দশটি দিনের মতো নয়। ১৬ বছর আগের ওই দিনের বিভীষিকাও ভুলে যাওয়ার মতো নয়। সেদিনের সেই ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার কথা মনে হলে এখনো অন্য অনেকের মতো কেঁপে উঠেন মাহবুবা পারভীন। বিস্ফোরিত গ্রেনেডের স্প্লিন্টার শরীরে বয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছেন গত প্রায় দেড় যুগ ধরে। স্প্লিন্টারের ব্যথা সেই দুঃসহ স্মৃতিকে প্রতিমুহূর্তে চোখের সামনে ভাসিয়ে তুলে।

সেদিন বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে সেই সময়ের বিরোধীদলীয় নেতা ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলায় আহত হন মাহবুবা পারভীন। হামলার ১৬তম বার্ষিকীতে তিনি এনটিভি অনলাইনের কাছে নিজের জীবন-যন্ত্রণার কথা তুলে ধরেন। তিনি বর্তমানে স্বেচ্ছাসেবক লীগ ঢাকা জেলা উত্তর শাখার সহসভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। ঘটনার সময় তিনি ঢাকা জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন।

ওই দিন ঘটনার পর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে মৃত ও ক্ষত-বিক্ষত দেহগুলোর মধ্যে মাহবুবা পারভীনও ছিলেন। তাঁর সেই ছবি গণমাধ্যমে প্রকাশ হলে তা মানুষের মনকে ব্যাপক নাড়া দেয়।

সেদিনের দুঃসহ স্মৃতির কথা উল্লেখ করে মাহবুবা পারভীন বলেন, ‘ওই দিন বিকেলে আওয়ামী লীগের পূর্বনির্ধারিত সন্ত্রাসবিরোধী শোভাযাত্রার কর্মসূচি ছিল। আমাদের নেত্রীর বক্তব্যের পরই শোভাযাত্রা শুরুর কথা। নেত্রীর বক্তব্যের শেষপর্যায়ে বিকট শব্দ শুনতে পাই। স্প্লিন্টারের আঘাতে মাটিতে শুয়ে পড়েছিলাম। অসংখ্য মানুষ আমার উপর দিয়ে হুড়াহুড়ি করে দৌড়ে গিয়েছিল। আমি গ্রেনেডের স্প্লিন্টাবিদ্ধ অবস্থায় প্রায় অচেতন হয়ে পড়েছিলাম। ডান হাত কনুই থেকে আলাদা হয়ে গিয়েছিল। বাঁ হাঁটুর নিচে বিঁধেছিল শতাধিক স্প্লিন্টার।’

মাহবুবা পারভীন বলেন, ‘পরে শুনেছি আমাকে মৃত মনে করেই ঢাকা মেডিকেলে নেওয়া হয়। সেখানেও আমাকে মৃত মনে করে মর্গে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এরপর একজন চিকিৎসক এসে আমার হৃদস্পন্দন পেয়ে দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। আমার শরীরে এক হাজার ৮০০ স্প্লিন্টার বিদ্ধ হয়েছিল।’ শরীরে এখনো প্রায় সাড়ে ৫০০ স্প্লিন্টার বয়ে বেড়াচ্ছেন বলেও জানান তিনি।

এখন কেমন আছেন? এ প্রশ্নের জবাবে মাহবুবা পারভীন বলেন, ‘ভালো নেই, ভাই। দুঃসহ যন্ত্রণা নিয়ে চলছি। মনেও জোর পাচ্ছি না। ভালোভাবে হাঁটতে পারি না, চলতে পারি না। স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারি না। যন্ত্রণায় রাতে ঘুমাতে পারি না। এটাকে কি জীবন বলে?’ পাল্টা প্রশ্ন মাহবুবার।

এ সময় ক্ষোভ প্রকাশ করে স্বেচ্ছাসেবক লীগের এ নেত্রী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী ও জননেত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া কোনো নেতা আমার খোঁজ-খবর নেননি। স্বেচ্ছাসেবক লীগ করেছি। এখনো পদে আছি অথচ আমার সংগঠনের কেউই আমার খোঁজ নেয়নি।’

ওই দিনের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে মাহবুবা পারভীন বলেন, “যখন সাভার থেকে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে এসে পৌঁছাই তখন ৪টা বাজে। আমি আইভি আপার (আইভি রহমান) পাশে ট্রাকের পেছনের চাকার সামনে দাঁড়িয়ে ছিলাম। কারণ সেখান থেকে নেত্রীকে দেখতে পাওয়া যায়। শীর্ষ নেতারা একের পর এক বক্তব্য দিলেন। এরপর নেত্রী বক্তব্য শেষ করে ‘জয় বাংলা’ বলার সঙ্গে সঙ্গে পুরো এলাকা বিকট শব্দের পর অন্ধকার হয়ে যায়। শুধু চিৎকার আর চিৎকার। আমি দাঁড়ানো অবস্থা থেকে পড়ে গেলাম।”

‘পরে জানলাম, কাপড়ের ব্যানারে করে দুই পাশ থেকে ধরে আমাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। আমার একপাশ প্যারালাইজড হয়ে যায়। বাম হাত, বাম পা অবশ হওয়ার কারণে দাঁড়াতে পারছিলাম না। এজন্য আমাকে ব্যানারে করে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। স্বেচ্ছাসেবক লীগের প্রচার সম্পাদক আশীষ কুমার মজুমদার আমাকে সেখান থেকে তুলে হাসপাতালে নিয়ে যান।’

মাহবুবা পারভীন আরো বলেন, ‘আমার ভাই ডাক্তারের কাছে আমার অবস্থা জানতে চাইলে ডাক্তার বললেন, এখনি কিছু বলা যাচ্ছে না, ৭২ ঘণ্টা পর বোঝা যাবে। আমার পরিস্থিতি দেখে আমার ভাই অজ্ঞান হয়ে যায়। পরে ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন থাকাবস্থায় চিকিৎসকদের বোর্ড মিটিং বসানো হয়। বোর্ড মিটিংয়ে বলা হয়, আমার অবস্থা খুবই আশঙ্কাজনক। পরে আমাকে কলকাতার প্যালেস হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। ডা. পি কে ব্যানার্জির অধীনে চিকিৎসা হয় আমার। ওখানে কয়েকদিন পর আমার জ্ঞান ফিরে আসে। তবে আমার হাত-পা প্যারালাইজড হয়ে যায়। ২৫ দিন পর হাসপাতালে আমি আমার সন্তান ও ভাইকে চিনতে পারি। দীর্ঘদিন চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরে আসি। কিন্তু এখনো অসহ্য যন্ত্রণা নিয়ে বেঁচে আছি।’         

প্রধানমন্ত্রী ২০ লাখ টাকা ও একটি ফ্ল্যাট দিয়েছেন মাহবুবা পারভীনকে। এ ছাড়া প্রতি মাসে তাঁকে দেওয়া হয় ১০ হাজার টাকা। মাহবুবা পারভীনের শেষ চাওয়া, এ হামলায় দায়ীদের বিচারের রায় কার্যকর করা। সূত্র এনটিভি অনলাইন

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

four × three =

Back to top button