ধর্ম ও জীবন

৩য় তালাকের পরও স্ত্রীর সাথে সম্পর্ক কি বৈধ?

ইসলাম শান্তির ধর্ম। এ শান্তি বজায় রাখা প্রতিটি ঈমানদারের দায়িত্ব ও কর্তব্য। শুধুমাত্র ইসলামই এক চিরন্তন জীবন ব্যবস্থা, যেখানে রয়েছে বিশ্বমানবতার সার্বিক কল্যাণে এক নিখুঁত, পরিপূর্ণ এবং সময়োপযোগী পরিকল্পনা। যার প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো সার্বিক বিষয়ে সবার প্রতি সুবিচার প্রতিষ্ঠা করা।

কোরআন-হাদীস ও ইতিহাস গ্রন্থ একথা সুস্পষ্ট সত্য যে, ইসলাম আগমনের পূর্বে আইয়ামে জাহেলিয়াতের যুগে নারী সমাজ ছিল সর্বাধিক নির্যাতিত, অবহেলিত, লাঞ্চিত ও উপেক্ষিত। এ নির্যাতন এবং অবহেলা থেকে নারী সমাজকে মুক্ত করতে শুধুমাত্র ইসলামই গ্রহণ করেছে উন্নতির বাস্তব কর্মসূচি। যার প্রমাণ পাওয়া যায় কুরআনুল কারিমের ঘোষিত বিভিন্ন আয়াত ও রাসূল সাঃ এর হাদীসে।

ইসলামের প্রাথমিক যুগে স্ত্রীদের প্রতি অত্যাচার নির্যাতনের লক্ষ্যে স্বামীরা তাদের স্ত্রীদেরকে বারবার তালাক দেয়া এবং ফিরিয়ে নেয়ার মধ্যে সময় অতিবাহিত করতো। কারণ এ অবস্থার ফলে স্ত্রীরা স্বামীর সঙ্গেও বসবাস করতে পারতো না। আবার অন্যত্র বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারতো না।

আবার অনেকে তিন তালাক দেয়ার পর পুনরায় তাদের স্ত্রীদের ফিরিয়ে নেয়ার ইচ্ছা পোষণ করতো। অথচ দ্বিতীয় তালাকের পর তৃতীয় তালাকের সাথে সাথে স্ত্রীদের ফিরিয়ে নেয়া ইসলামে নিষিদ্ধ হয়ে যায়। এ অবস্থার করণীয় প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা সুস্পষ্টভাবে ঘোষণা দেন-

فَاِنۡ طَلَّقَهَا فَلَا تَحِلُّ لَهٗ مِنۡۢ بَعۡدُ حَتّٰی تَنۡکِحَ زَوۡجًا غَیۡرَهٗ ؕ فَاِنۡ طَلَّقَهَا فَلَا جُنَاحَ عَلَیۡهِمَاۤ اَنۡ یَّتَرَاجَعَاۤ اِنۡ ظَنَّاۤ اَنۡ یُّقِیۡمَا حُدُوۡدَ اللّٰهِ ؕ وَ تِلۡکَ حُدُوۡدُ اللّٰهِ یُبَیِّنُهَا لِقَوۡمٍ یَّعۡلَمُوۡنَ

অর্থঃ অতঃপর যদি সে স্ত্রীকে তালাক দেয় তবে সে স্ত্রী তার জন্য হালাল হবে না, যে পর্যন্ত সে অন্য স্বামীর সাথে সংগত না হবে(১)। অতঃপর সে (দ্বিতীয় স্বামী) যদি তালাক দেয় আর তারা উভয়ে (স্ত্রী ও প্রথম স্বামী) মনে করে যে, তারা আল্লাহর সীমারেখা রক্ষা করতে পারবে তবে তাদের পুনর্মিলনে কারো কোন অপরাধ হবে না(২)। এগুলো আল্লাহর সীমারেখা, যা তিনি স্পষ্টভাবে এমন কওমের জন্য বর্ণনা করেন, যারা জানে।

আয়াত পরিচিতি ও নাজিলের কারণ
সুরা বাকারার ২৩০ নং আয়াতে আল্লাহ তাআলা ওই সব স্বামীর বিষয়ে আলোকপাত করেছেন। যারা তাদের স্ত্রীদেরকে তিন তালাক দেয়ার পর পুনরায় ফিরিয়ে নিতে চাইতেন। তাদের করণীয় সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা এ আয়াতে সুস্পষ্টভাবে ঘোষণা দিয়েছেন।

আয়াতে বলা হয়েছে, যদি তিন তালাক দেয়া হয়; তবে-
স্বামী যদি স্ত্রীকে তৃতীয় তালাক দেয়ার পর পুনরায় সে স্ত্রীকে বিয়ে করার কামনা করে; তবে করণীয় কী? এ প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন, ‘অতঃপর স্বামী যদি স্ত্রীকে তৃতীয় তালাক দেয় তবে অন্য লোকের সাথে বিবাহ দেয়া ব্যতিত সেই স্ত্রী (প্রথম) স্বামীর জন্য হালাল নয়।

পরে যখন (দ্বিতীয় স্বামী সহবাসের পর) স্ত্রীকে তালাক দেয়, তখন তারা যদি এ ধারণা করে যে, আল্লাহ পাকের সীমার ভেতর থাকতে পারবে অর্থাৎ আল্লাহর বিধি-বিধান অনুযায়ী জীবন-যাপন করতে পারবে) তবে উভয়ে পুনঃ বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলে তাদের জন্য কোনো গোনাহ নেই। এ সব আল্লাহ তাআলার নির্ধারিত সীমা।

কোনো স্বামী যদি তার স্ত্রীকে তিন তালাক দেয়ার পর তাকে পুনরায় বরণ করে নেয়ার ইচ্ছা পোষণ করে। তবে তার জন্য একমাত্র বৈধ ব্যবস্থা হলো ‘হালালাহ’ করা। অর্থাৎ অন্য স্বামীর নিকট নিয়মিত বিবাহ দেয়া এবং তাদের মধ্যে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক গড়ে ওঠা।

অতঃপর তাদের মাঝে সংসার জীবনে কোনো কারণে যদি ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়; তবে ইদ্দত পালনের পর ওই স্ত্রী প্রথম স্বামীর জন্য হালাল হবে।

মনে রাখতে হবে-
প্রথম স্বামীর বিবাহের উদ্দেশ্যে কোথাও স্ত্রীকে বিয়ে দিয়ে তালাকের ব্যবস্থা করা ইত্যাদি পরিকল্পনামাফিক বিয়ে এবং তালাক সম্পাদন করা ‘হালালাহ’-এর অন্তর্ভূক্ত নয়।

আলোচ্য আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমাম রাজি রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, ‘তিন তালাকের পরও যদি স্ত্রী স্বামীর নিকট গমন করতে ইচ্ছুক হয় তবে পাঁচটি কাজ অবশ্যই সম্পাদন করতে হবে। আর তা হলো-

>> তিন মাস ইদ্দত অতিবাহিত করতে হবে;

>> দ্বিতীয় স্বামীর সাথে বিবাহ হতে হবে;

>> দ্বিতীয় স্বামীর সাথে শুধু নামে মাত্র বিবাহ হলে চলবে না, বরং তার সাথে যথারীতি সহবাস করতে হবে;

>> দ্বিতীয় স্বামী কর্তৃক তাকে তালাকপ্রাপ্ত হতে হবে এবং এ তালাকের জন্য পুনরায় তিন মাস ইদ্দত পালন করতে হবে।

>> পুনরায় প্রথম স্বামীর সাথে নিয়মিতভাবে বিবাহ হতে হবে।

পরিষেশে…
ইসলামে বৈধ সবচেয়ে নিকৃষ্ট কাজ হলো তালাক। যখন একেবারেই সংসার করা আর সম্ভব না হয় তখনই এ তালাকের ব্যবস্থা। যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে কুরআনে নির্ধারিত বিধান মেনে চলার তাওফিক দান করুন। স্বামী-স্ত্রী উভয়কে জুলুমের মতো অপরাধ থেকে হেফাজত করুন। আল্লাহর সীমা লংঘন থেকে হেফাজত করুন। আমিন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

20 + 19 =

Back to top button