৫ লাখ চাঁদা না দেয়ায় ১২ বছর ধরে রাস্তা দিচ্ছেন না আ.লীগ নেতা
লহ্মীপুরে এক কৃষক পরিবারকে ১২ বছর ধরে চলাচলের রাস্তা দিচ্ছেন না আওয়ামী লীগ নেতা গোলাম মাওলা। তিন বছর আগে জমি কিনেও আওয়ামী লীগ নেতার দাবি করা চাঁদা না দেয়ায় রাস্তা করতে পারছে না ওই কৃষক পরিবার। এমন অভিযোগ করেছেন লহ্মীপুর সদর উপজেলার বাঙ্গাখাঁ ইউনিয়নের রাধাপুর গ্রামের অলি হাজির নতুন বাড়ির বাসিন্দা কৃষক শাহাব উদ্দিন।
স্থানীয়রা জানান, স্ত্রী, সাত ছেলে ও দুই মেয়ে নিয়ে কৃষক শাহাব উদ্দিনের সংসার। যখন গোলাম মাওলা রাস্তা কেটে নিয়ে যায়, তখন প্রতিবাদ করার কোনো সুযোগ ছিল না শাহাব উদ্দিনের। এখন ছেলেরা বড় হয়েছেন। নিজেদের জমিতে রাস্তা নির্মাণে বাধা দেয়ায় তারা প্রতিবাদে নেমেছেন। বাবাকে নিয়ে নিজেদের জমিতে রাস্তা নির্মাণে অনবরত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তারা।
অভিযুক্ত গোলাম মাওলা বাঙ্গাখাঁ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক।
স্থানীয় সূত্র জানায়, প্রায় ২০ বছর আগে রাধাপুর গ্রামে কৃষক শাহাব উদ্দিন নতুন বাড়ি নির্মাণ করেন। তখন বাড়ি থেকে বের হওয়ার জন্য অন্যদের সঙ্গে একই রাস্তা ব্যবহার করতেন তিনি। ২০১২ সালে ওই রাস্তা আওয়ামী লীগ নেতা গোলাম মাওলা নিজের দাবি করে মাটি কেটে নিয়ে যান। এতে রাস্তাটিতে চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
অন্য পরিবারগুলোর বিকল্প রাস্তা থাকলেও শাহাব উদ্দিনদের বাড়ি থেকে বের হওয়ার কোনো পথ ছিল না। পরে সামনেই অন্য একটি বাড়ির ভেতর দিয়ে চলাফেরার সুযোগ করে নেন। পুকুর পাড়ের সরুপথ দিয়ে তার পরিবারের সদস্যদের চলাচল করতে হয়।
তিন বছর আগে স্থানীয় নুরুল আমিনের কাছ থেকে শাহাব উদ্দিন বাড়ির সামনে একটি ডোবার ১১ শতাংশ জমি (৯১৯ দাগ/দেবানন্দ রায়েরখিল মৌজা) ক্রয় করেন। জমিটি বকশাল মিয়ার পোল থেকে মিত্রের সড়কের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে। তবে কৃষক শাহাব উদ্দিনের অভিযোগ, পাঁচ লাখ টাকা চাঁদার দাবিতে গোলাম মাওলা রাস্তা নির্মাণ করতে দিচ্ছে না। তিনি বিভিন্নভাবে শাহাব উদ্দিনের পরিবারকে হয়রানি করে আসছেন।
স্থানীয় কৃষক তাজুল ইসলাম বলেন, ‘প্রায় ১২ বছর ধরে শাহাব উদ্দিনদের বাড়ির রাস্তা নেই। একসময় আমরা একই রাস্তা দিয়ে চলাফেরা করতাম। গোলাম মাওলা ওই রাস্তা নিজেদের দাবি করে মাটি কেটে নিয়ে যান। পরে আমরা বাড়ির অন্য পাশ দিয়ে চলাফেরা করি। কিন্তু বিপাকে রয়েছেন শাহাব উদ্দিনরা। এখন জমি কিনেও তারা রাস্তা করতে পারছেন না।’
কান্নাজড়িত কণ্ঠে কৃষক শাহাব উদ্দিন বলেন, ‘তিন বছর আগে আমরা রাস্তার জন্য ১১ শতাংশ জমি কিনেছি। পাঁচ লাখ টাকার চাঁদার জন্য গোলাম মাওলা আমাদেরকে রাস্তা করতে দিচ্ছেন না। আমরা একরকম গৃহবন্দি অবস্থায় আছি। ওই জমিতে শনিবার (২৯ মে) সবজি গাছ রোপণ করতে গেলে মাওলা এসে আমার স্ত্রীকে মারধর করেন। আমাদের জমিতে রাস্তা নির্মাণে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।’
শাহাব উদ্দিনের স্ত্রী নুরজাহান বেগম বলেন, ‘গোলাম মাওলা আমাদের বাড়ির রাস্তা কেটে নিয়ে গেছেন। বাড়ির চারপাশে বেড়া দিয়েও রেখেছে কয়েক বছর। অন্যের বাড়ির ভেতর দিয়ে অনেক কষ্টে চলাফেরা করি। একজন মেহমান আসলে তাকে বাড়িতে নেয়ার মতো অবস্থা থাকে না। ছেলেদেরকে বিয়েও করাতে পারছি না।’
তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বাঙ্গাখাঁ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক গোলাম মাওলা। তিনি বলেন, ‘একই দাগে আমারও জমি আছে, তাদেরও আছে। রাস্তা করতে আমি তাদের বাধা দেইনি। চাঁদা চাওয়ার অভিযোগটিও মিথ্যা। তারা জমি পেতে আদালতে অভিযোগ দিয়ে ১৪৪ ধারায় আমাকে নোটিশ করেছেন। কিন্তু তারা ওই জমিতে কাজ করছিলেন। বাধা দিলে তারা আমার ওপর হামলা করেন।’
বাঙ্গাখাঁ ইউনিয়ন সহকারী ভূমি কর্মকর্তা হাফিজুর রহমান জহির বলেন, ‘ঘটনাটি নিয়ে আদালতের তদন্তের নির্দেশ এসেছে। আমি তদন্ত করে প্রতিবেদন যথাসময়ে জমা দেব। তবে শাহাব উদ্দিনের মালিকানা সঠিক। একই দাগে অন্য ব্যক্তিদেরও জমি আছে। এখন দখল নিয়েই সমস্যা হচ্ছে।’
জানতে চাইলে বাঙ্গাখাঁ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান কাজী আনোয়ার হোসেন কাজল বলেন, ‘শাহাব উদ্দিনদের বাড়ি থেকে বের হওয়ার রাস্তা না থাকার বিষয়টি জেনে আমি একবার ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। বিষয়টি সমাধানের জন্য দুপক্ষকেই ডাকা হয়েছে, কিন্তু তারা আসেননি।’
এ ব্যাপারে লহ্মীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ মাসুম বলেন, ভুক্তভোগী পরিবারের লিখিত অভিযোগ পেলে সহকারী কমিশনার ভূমির (এসিল্যান্ড) মাধ্যমে তদন্ত করে সত্যতা যাচাই করা হবে। অভিযোগের সত্যতা মিললে রাস্তা নির্মাণের ব্যবস্থা করে দেয়া হবে। খবর জাগোনিউজ