তথ্য প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্যের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করেছে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ
রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম নয় এবং অচিরেই বাহাত্তরের সংবিধানে ফিরে যাওয়ার বিল সংসদে উত্থাপন করা হবে বলে তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান যে বক্তব্য দিয়েছেন তার সাথে একাত্মতা প্রকাশ করেছে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ।
একাত্মতা প্রকাশ করে শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে ‘বিএনপি-জামায়াতের সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস প্রতিরোধে নাগরিক সমাজের করণীয় ও পঁচাত্তর পরবর্তী বীর মুক্তিযোদ্ধা সামরিক সদস্যদেরকে বিনা বিচারে হত্যার অপরাধে অবৈধ সামরিক শাসক জিয়ার মরণোত্তর বিচারের দাবি’ শীর্ষক আলোচনা সভার আয়োজন করে তারা।
আলোচনা সভায় ইতিহাসবিদ অধ্যাপক ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘বাহাত্তরের সংবিধান প্রতিষ্ঠিত না হলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়। অবৈধ সামরিক শাসক জিয়া ও এরশাদ লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত বাহাত্তরের সংবিধান ধ্বংস করে দিয়েছিল। হাজার হাজার মুক্তিযোদ্ধা সামরিক সদস্যদের বিনা বিচারে হত্যা করেছিল। একটি উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন তদন্ত কমিশন গঠন করে অবৈধ সামরিক শাসক জিয়া ও এরশাদের মুখোশ জাতির সামনে উন্মোচন করা উচিত।’
তিনি বলেন, ‘সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস বাংলাদেশে নতুন কিছু নয়। পূর্বের হামলার ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার হলে এ ধরনের ঘটনা আমাদেরকে দেখতে হতো না। নাসির নগরের ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদন এখনো প্রকাশ হয়নি, বিচার হয়নি। সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস বন্ধ করতে চাইলে অবশ্যই প্রতিটি সাম্প্রদায়িক হামলার দ্রুত বিচার করে অপরাধীদের কঠোর শাস্তি দিতে হবে।’
ভাস্কর শিল্পী রাশা বলেন, ‘সম্প্রতি হিন্দু সম্প্রদায়ের সর্বজনীন দূর্গা পূজা উৎসবকে কেন্দ্র করে কুমিল্লা, ফেনী, চট্টগ্রাম, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় মন্দির ও বাড়িঘরে হামলা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করেছে সাম্প্রদায়িক অপশক্তির দোসর বিএনপি-জামায়াতের ক্যাডাররা। কুমিল্লায় মন্দিরে কোরআন শরীফ রেখে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার চেষ্টা করেছে তারা। ধর্মকে পুঁজি করে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের মাধ্যমে রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়ন করাই ছিল তাদের মূল উদ্দেশ্যে। এহেন ন্যাক্কারজনক ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’
তিনি বলেন, ‘হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজাকে ঘিরে গোপনে নাশকতার ছক কষেছিল স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তির দোসর বিএনপি-জামায়াত চক্র। দুর্গাপূজায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে বহির্বিশ্বে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার অপচেষ্টা চালানো হয়েছে। বিএনপি-জামায়াত সেই সুযোগটাকে ইস্যু বানিয়ে আন্দোলনে নেমে সরকারের পতন ঘটানোর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। এজন্য কুমিল্লা থেকে শুরু করে দেশব্যাপী বিশৃঙখলা শুরু করেছে বিএনপির-জামাতের ক্যাডাররা। কুমিল্লায় মন্দিরে পরিকল্পিতভাবে কোরআন শরীফ রেখে সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনার মাধ্যমে বিএনপি-জামায়াতের প্রকৃত চরিত্র জাতির সামনে উন্মোচিত হয়েছে। কুমিল্লা, ফেনী ও চট্টগ্রামে মন্দিরে-বাড়িঘরে হামলা এবং সর্বশেষ ঢাকায় বায়তুল মোকাররমের সামনে পুলিশের ওপর হামলা-সব একই সূত্রে গাঁথা।’
মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক মোঃ আল মামুনের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল।
প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ অধ্যাপক ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন, আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সম্প্রীতি বাংলাদেশ এর সদস্য-সচিব অধ্যাপক ডা: মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল ও বিশিষ্ট ভাস্কর শিল্পী রাশা। জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মাধ্যমে আলোচনা সভা শুরু করা হয়।