দেশে তাপমাত্রা বাড়ায় বাড়ছে বিদ্যুতের চাহিদা। রাজধানী ঢাকায় লোডশেডিং তেমন না হলেও ঢাকার বাইরের বিভিন্ন বিভাগের গ্রামাঞ্চলে ব্যাপকভাবে বেড়েছে লোডশেডিং। ঘন ঘন লোডশেডিংয়ে গ্রামাঞ্চলের সাধারণ মানুষের জীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠছে। চলছে এসএসসি পরীক্ষা। দিনে-রাতে আট থেকে ১০ ঘণ্টা লোডশেডিংয়ে বিপাকে পড়েছে পরীক্ষার্থীরা। গরমের কারণে ঠিকমতো পড়াশোনা করতে পারছে না তারা। ব্যাটারিচালিত ভ্যান ও অটোচালকরা ঠিকমতো চার্জ দিতে না পারায় দিনের অর্ধেক সময়ও গাড়ি চালাতে পারছেন না। এতে কমে গেছে তাঁদের আয়।
বিপিডিবির দৈনিক উৎপাদন প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, গত দুই দিনের ব্যবধানে গতকাল সোমবার এক হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা বেড়েছে। দেশে গত শনিবার বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদা ছিল ১৪ হাজার মেগাওয়াট, গতকাল তা ছিল ১৫ হাজার মেগাওয়াট। গতকাল সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদন ছিল ১৪ হাজার ৮২৬ মেগাওয়াট। সেই হিসাবে সারা দেশে ঘাটতি ছিল মাত্র ১৭৪ মেগাওয়াট; কিন্তু আরইবির কর্মকর্তারা বলছেন, গতকাল দিনের বেলা তাঁদের বিতরণ এলাকায়ই প্রায় এক হাজার ৫০০ মেগাওয়াট লোডশেডিং ছিল।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বিপিডিবি দৈনিক যে বিদ্যুতের চাহিদা প্রতিবেদন আকারে প্রকাশ করে, বাস্তব চাহিদা তার চেয়ে এক থেকে দেড় হাজার মেগাওয়াট বেশি। তাঁরা মূলত উৎপাদনের সঙ্গে সমন্বয় রেখে চাহিদা তৈরি করে প্রকাশ করেন।
ঢাকার বাইরে ঘন ঘন লোডশেডিংদেশের ৮০ শতাংশের বেশি গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহের দায়িত্বে রয়েছে দেশের সবচেয়ে বড় বিতরণ কম্পানি পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি)। প্রতিষ্ঠানটির বিতরণ এলাকায় সবচেয়ে বেশি লোডশেডিং হচ্ছে। আরইবির কর্মকর্তারা বলছেন, এখন চাহিদা বাড়লেও বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) বিদ্যুতের উৎপাদন সেভাবে বাড়াচ্ছে না। এতে তাদের চাহিদার সঙ্গে বিদ্যুতের ঘাটতি তৈরি হয়েছে প্রায় এক হাজার ৫০০ মেগাওয়াট।
ঢাকার বাইরের বিভিন্ন জেলার আমাদের প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, তাঁদের এলাকায় আগের তুলনায় গত দুই দিনে লোডশেডিং অনেক বেড়েছে। সেখানে এখন আট থেকে ১০ ঘণ্টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ পাচ্ছে না মানুষ। কোথাও কোথাও ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ না পাওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রচণ্ড গরমের মধ্যে বিদ্যুৎ না থাকায় রাতে ঠিকমতো ঘুমাতে পারছে না। এসএসসি শিক্ষার্থীরা বসতে পারছে না পড়ার টেবিলে। ভালোভাবে পড়ালেখা করতে না পারায় চিন্তিত শিক্ষার্থীরা।
অতিরিক্ত লোডশেডিংয়ের বিষয়টি স্বীকার করে আরইবির এক পরিচালক নাম প্রকাশ না করার শর্তে গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আবার বিদ্যুতের চাহিদা অনেক বেড়েছে। চাহিদা বাড়লেও বিপিডিবি বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়াচ্ছে না। এতে চাহিদা অনুযায়ী আমরা বিদ্যুৎ পাচ্ছি না। ফলে আমাদের লোডশেডিং দিতে হচ্ছে।’
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় লোডশেডিংয়ের খবর পেলেও বিদ্যুৎ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলো এগুলোকে লোডশেডিং না বলে কারিগরি ত্রুটি বলছে।
জানতে চাইলে ঢাকা পাওয়ার ডিস্টিবিউশন কম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) বিকাশ দেওয়ান গতকাল রাতে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এখন চাহিদা বাড়লেও আমাদের বিতরণ এলাকায় কোনো লোডশেডিং নেই। আজ (গতকাল) আমাদের চাহিদা ছিল এক হাজার ৭৭০ মেগাওয়াট। চাহিদার পুরোটাই আমরা সরবরাহ করতে পেরেছি। তাই কোনো লোডশেডিং করতে হয়নি। তবে বিভিন্ন এলাকায় কারিগরি ত্রুটির কারণে স্বল্প সময়ের জন্য বিদ্যুিবভ্রাট হতে পারে।’
ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার বিদ্যালয়ের এক প্রধান শিক্ষক সাইফুল আলম তুহিন গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘দুই দিন ধরে ত্রিশাল উপজেলার গ্রাহকরা দিনের বেশির ভাগ সময়ই বিদ্যুৎ পাচ্ছে না। প্রচণ্ড গরমের মধ্যে ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে রাতে ঠিকমতো ঘুমানোও যাচ্ছে না। এসএসসি পরীক্ষার্থীরা ঠিকমতো পড়াশোনা করতে পারছে না। এর প্রভাব পড়তে পারে তাদের পরীক্ষার খাতায়।’
তিনি বলেন, ‘লোডশেডিংয়ের পাশাপাশি লো ভোল্টেজ সমস্যায় চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে গ্রাহকদের। লো ভোল্টেজ থাকায় বাসাবাড়িতে ব্যবহৃত সাবমারসিবলগুলোতে ঠিকমতো পানি উঠাতে পারছে না। এদিকে প্রয়োজনীয় পানি তুলতে ভোল্টেজ বৃদ্ধির আশায় গভীর রাত পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হচ্ছে ভুক্তভোগীদের।’
সিলেটের মৌলভীবাজারের গ্রাহক রফিকুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ঈদের মধ্যে আমাদের এলাকায় লোডশেডিং কম থাকলেও কয়েক দিন ধরে ঘন ঘন লোডশেডিং হচ্ছে। একবার গেলে আর বিদ্যুৎ আসার খবর থাকে না। এলেও আধাঘণ্টার বেশি থাকে না। এতে গরমে বাচ্চাদের নিয়ে রাতে ঘুমাতে পারি না। দিনের বেলায় বেশি লোডশেডিং হয়।’
আরইবির বিতরণ এলাকায় লোডশেডিং : গতকাল দিনের বেলা আরইবির ৮০টি সমিতির মধ্যে ৪৬টি সমিতিতে চাহিদার তুলনায় এক হাজার ২১৬ মেগাওয়াট বিদ্যুতের ঘাটতি ছিল। তাদের মধ্যে আরইবির কয়েকটি সমিতির লোডশেডিং চিত্র তুলে ধরা হলো-
জানতে চাইলে বিপিডিবির এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না শর্তে বলেন, আবার তাপমাত্রা বাড়তে থাকায় বিদ্যুৎ চাহিদা ও উৎপাদনে কিছুটা ঘাটতি হচ্ছে। মূলত দক্ষিণাঞ্চলের রামপাল ও বরগুনার বিদ্যুৎ কেন্দ্র উৎপাদনে নেই। এ দুটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের সক্ষমতা প্রায় এক হাজার মেগাওয়াট। এর মধ্যে রামপালের ৬৬০ মেগাওয়াট (প্রথম ইউনিট) ও বরগুনার ৩০৭ মেগাওয়াট। এসব অঞ্চলে আরইবির অন্তত ২০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি রয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে চাহিদা অনুযায়ী এসব সমিতি কিছুটা বিদ্যুৎ সরবরাহ কম পাচ্ছে। এতে সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের গ্রাহকদের মধ্যে লোডশেডিং করে সমন্বয় করতে হচ্ছে।
সূত্রঃ কালেরকন্ঠ