আন্তর্জাতিককরোনাভাইরাস

এই ছবি কী প্রামাণ বহন করে করোনা উহানেই তৈরী?

করোনাভাইরাস কি উহানের ল্যাব থেকেই ছড়িয়ে পড়েছে? গোটা বিশ্বে এখন এটাই সবচেয়ে বড় প্রশ্ন। চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরের একটি সামরিক গবেষণাগারে করোনাভাইরাস তৈরি করা হয়েছে। এরপর সেখান থেকে ভুল করে ভাইরাসটি বাইরে ছড়িয়ে পড়েছে। চীন বিশ্ববাণিজ্যের দখলে নিতে ও দুনিয়াজুড়ে নিজের কর্তৃত্ব বাড়াতে এই জৈবাস্ত্র তৈরি করেছে। করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পর এমন অভিযোগ বিশ্বজুড়ে ব্যাপক চর্চার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এ রকম অভিযোগ প্রথম করেন ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সাবেক এক কর্মকর্তা। এরপর সেই তালিকায় যুক্ত হন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও। চীন শুরু থেকেই এটাকে কন্সপিরেসি থিওরি বা ষড়যন্ত্র তত্ত্ব বলে উড়িয়ে দিতে চাইলেও এবার মনে হয় ধরাই খেতে হবে। ভাইরাসটি যে চীনের ওই ল্যাবেই তৈরি হয়েছিল তার কিছু অকট্য প্রমাণ এবার সামনে চলে এসেছে।

উহান সেই ভাইরোলজি ল্যাবের ভিতরে থেকে তোলা ভিডিও ফুটেজগুলো মুছে ফেলা হয়েছে, যেখানে বিজ্ঞানীরা প্রাদুর্ভাবের আগে করোনভাইরাস নিয়ে গবেষণা করছিলেন। তবে একটি ছবি সামনে এসেছে, যেখানে মারাত্মক রোগজীবাণুর নমুনায় ঠাসা একটি ফ্রিজের ভেতর থেকে একজন গবেষককে বরফের চালি ভেঙে ক্ষতিকারক জীবাণু বের করতে দেখা যাচ্ছে। অত্যন্ত গোপনীয় চীনা ল্যাবের অভ্যন্তরের এই বিরল ছবিটি ২০১৮ সালে চীনা ডেইলি পত্রিকা প্রকাশ করেছিল। পরবর্তীতে মুছে ফেললেও, আগেই ছবিগুলো বেশ কিছু শেয়ার হয়েছিল। চীনের ল্যাবের অভ্যন্তরে মহামারি করোনাভাইরাসের সৃষ্টি হয়েছে এই তত্ত্বে যারা বিশ্বাসী তাদের সন্দেহের আগুনে এই ছবি ঘি ঢেলে দিয়েছে।

উহান ইনস্টিটিউট অফ ভাইরোলজি সার্স মহামারির পরে রোগাক্রান্ত বাদুড়দের উপর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছিল এবং এক হাজার মাইল দূরের প্রাণী থেকে প্রাপ্ত স্টেনগুলি সনাক্ত করল যেগুলি এখন মানুষের কভিড -১৯ রোগের মূল হোস্ট হিসাবে কাজ করছে বলে বিশ্বাস করা হয়।

বলা হয় যে, এই বাদুড়গুলি নিকটস্থ সামুদ্রিক বাজারে বিক্রি করা হয়েছিল। তবে এই ছবিগুলি বিশ্বে নতুন করে বিতর্কের ঝড় তুলে দেবে এতে কোন সন্দেহ নেই। ভাইরাসটি যে উহানের ওই ল্যাব থেকেই ছড়িয়েছে সেই দাবিকে এটা আরো জোরালো করবে।

ল্যাবের ফাঁস হওয়া ছবিগুলো এমন সময় আবার পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে, যখন চীনা সরকারের বিরুদ্ধে ভাইরাসটির মহামারি রূপ সম্পর্কে জনগণকে সতর্ক করতে ব্যর্থতার অভিযোগ আনা হয়েছে। ভাইরাসটির ছড়িয়ে পড়ার ছয়দিন পর চীনা সরকার স্বীকার করে যে দেশে নতুন একটি ভাইরাসের উৎপত্তি হয়েছে। ততদিনে ভাইরাসটি চীনের বাইরে ছড়িয়ে গেছে। থাইল্যান্ডে প্রথম করোনা রোগী সনাক্ত হয়েছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যারা উহানের এই ল্যাবটিতে গবেষণার জন্য ৩৭ লাখ ডলার অর্থায়ন করেছিল। দেশটি এখন বলছে মহামারির ধাক্কা কেটে গেলে তারা এই ল্যাবের অর্থায়ন প্রত্যাহার করবে। মার্কিন পররাষ্ট্র সচিব মাইক পম্পেও ল্যাব থেকে ভাইরাসটি ছড়িয়েছে কিনা সে বিষয়ে চীনকে পরিষ্কার হওয়ার জন্য অনুরোধ করছেন। পম্পেও বলেছেন, ‘চীনের উচিত ভাইরাসটি কিভাবে ছড়াতে শুরু করেছিল সেটা বিশ্বকে জানিয়ে দেওয়া।  সঠিক তথ্য পেলে পৃথিবীর বিজ্ঞানীরা এটার প্রতিরোধের উপায় বের করতে পারবে।’

করোনা ভাইরাস উহানের ল্যাব থেকেই ছড়িয়েছিল কিনা শুক্রবার সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানান, ‘আমরা এটার দিকে নজর রেখেছি, আরও বহুলোক এর দিকে নজর রেখেছে। এটা ক্রমেই বোঝা যাচ্ছে।’

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেন, ‘তারা (চীন) একটি নির্দিষ্ট ধরণের বাদুড়ের কথা বলেছেন, কিন্তু ওই বাদুড় ওই এলাকায় ছিলই না। ওই এলাকায় বাদুড় বিক্রি হয়নি, সেটা বিক্রি হয়েছিল ৪০ মাইল দূরে।’

এর আগের দিনই ফক্স নিউজ জানিয়েছিল, মারাত্মক ভাইরাসটি উহানের একটি ল্যাব থেকে ছড়িয়েছে কিনা সে সম্পর্কে আমেরিকা পুরো জোর দিয়ে তদন্ত চালাচ্ছে। বিশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলি পরীক্ষাগারগুলো ও রোগের প্রকোপ সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করছে।

ভাইরাসের উৎস প্রসঙ্গে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘অনেক অদ্ভুত জিনিস ঘটছে, কিন্তু অনেক তদন্তের কাজও চলছে এবং আমরা এটা খুঁজে বের করছি। আমি শুধু এটুকু বলতে পারি, এটা যেখান থেকেই, যে রূপেই আসুক না কেন, তা চীন থেকে এসেছে। আর যার কারণে, বিশ্বের ১৮৪ টি দেশ এর ফল ভুগছে।’  সূত্র- মেট্রো ইউকে

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

1 × two =

Back to top button