একজন আনছারী যেভাবে লাখো হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছিলেন
জুবায়ের আহমদ আনছারী। শুধু একটি নাম নয়, একটি সোনালী অধ্যায়,বর্ণালী ইতিহাস, বাঙলার ইসলামি অঙ্গনে জ্বলজ্বল করা এক মহান তারকা।
‘খ্যাতিমান বক্তা, সফল রাজনীতিবীদ, আদর্শ শিক্ষক, সমাজ সেবক‘- ৫৬ বছরের এক জীবনে পৃথিবীতে যেন কয়েক জীবন কাটিয়ে গেলেন এ কিংবদন্তী।
সিলেটের জামেয়া হুসাইনিয়া গহরপুর থেকে দাওরায়ে হাদীস (মাষ্টার্স) পাশ করার পর শিক্ষকতার পাশাপাশি প্রিয় উস্তাদ মাওলানা তাজুল ইসলাম গৌহরী রহ. ও মাওলানা আব্দুল খালিক বাহুবলীর অনুপ্রেরণায় ইলমি খেদমতের অন্যতম মাধ্যম ‘ওয়াজ- মাহফিলে’ যুক্ত হন তিনি।
এরপর ৯০-এর দশক থেকে আমৃত্যু কুরআন হাদিসের বাণী ছড়িয়ে দিতে চষে বেড়িয়েছেন ৫৬ হাজার বর্গমাইল। বাচন ভঙ্গিমায় মন ছুঁয়েছেন দেশের কোটি জনতার। রসবোধ-যুক্তির মিশেলে সাধারণের মাঝে ধর্মীয় চেতনা জাগিয়ে তোলা অনন্য গুণের অধিকারী এক কথার জাদুকর ছিলেন তিনি।
বক্তা জীবনের তিন দশকে প্রতি বছর ৭/৮ হাজার প্রোগ্রামের অফার এলেও বেছে বেছে প্রায় পাঁচ শতাধিক মাহফিলে যোগ দিতেন বলে এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন তিনি নিজেই।
ইসলাম প্রিয় মানুষের হৃদয়ে ভালবাসার সৌধ গড়ে তোলা এ মানুষটি হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন ২০১৪ সালে। উন্নত চিকিৎসার জন্য ২০১৬-তে দেশের বাইরে যান ।এতে সাময়িক সুস্থ হলেও ফিরতে পারেননি পূর্বের তেজদ্দীপ্ত কণ্ঠস্বরে। তবে জীবদ্দশায় নিরাশ করেননি ভক্ত-শ্রোতাদের, অসুস্থ শরীরে কুরআন হাদিসের ব্যাখ্যা ছড়িয়ে দিতে ছুটেছেন বিভিন্ন মাহফিলে। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আকিদা প্রতিষ্ঠায় ভিন্ন মতাবলম্বীদের রোষানলে পড়তে হয়েছে তাকে বারবার। তবে দমে যাননি ,আমৃত্যু লড়েছেন বাতিলের আতঙ্ক হয়ে।
২০১৪ সালে গুরুত্বর অসুস্থ হলেও ছাত্র জীবনেই গালে সমস্যা ধরা পড়ে। বিভিন্ন সময় চিকিৎসা করলেও দীর্ঘ মেয়াদি কোন ফলাফল আসেনি। জীবনের শেষ মুহূর্তে ক্যান্সার হয়ে আত্মপ্রকাশ হয় এরোগের।এব্যাধিতে আক্রান্ত হয়েই মহান রবের ডাকে সাড়া দিয়ে পরপারে পাড়ি জমান দেশের বরেণ্য এ মুফাস্সির।
তার মৃত্যুতে শোকে ভাসছে সোস্যাল মিডিয়া। দেশের বরণীয় আলেম থেকে সাধারণ যুবক, আপামর জনতা সবাই শোকে মুহ্যমান বাঙলার ইসলামি অঙ্গনের খসে পড়া এই তারকার মৃত্যুতে।