আমার খারাপ কিছু হয়ে গেলে রাষ্ট্র যেন আমার সন্তানের দায়িত্ব নেয়
‘আমি ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে জরুরী বিভাগে কর্মরত একজন মেডিকেল অফিসার। আমার কোভিড টেস্টের রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে। আমার পূর্বে জরুরি বিভাগের আরও ২ জন মেডিকেল অফিসার, ১ জন আনসার সদস্য পজিটিভ হয়েছে। বাকি ৭ জন মেডিকেল অফিসারের রিপোর্ট আসবে হয়তো রাতে। এখন পর্যন্ত কোন লক্ষণ নেই।
আমি একজন হাঁপানি ও উচ্চ রক্তচাপের রোগী। আমার ২ বছরের সন্তান রয়েছে। রাষ্ট্রের নিকট প্রণোদনা চাই না। বেঁচে থাকলে আবার চিকিৎসা সেবা দিতে যাব কিন্ত খারাপ কিছু হয়ে গেলে রাষ্ট্র যেন আমার সন্তানের দায়িত্ব নেয় আমার সকল সহকর্মীদের নিকট এই আবেদন। কারণ আমি সন্তানের জন্য কিছু করে রাখতে পারিনি। চিকিৎসা সেবা দিতে যেয়ে আজ আমি আক্রান্ত। আমার পরিবার,শিশু সন্তান হয়তো আক্রান্ত হতে পারে। সবাই আমাদের জন্য দোয়া করবেন।’
রোববার নিজের করোনা পরিক্ষায় পজেটিভ জানতে পেরে ফেসবুকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা.বিলাস কুমার সাহা এই আবেগঘন স্ট্যাটাস দেন। স্ট্যাটাসটি তার সহকর্মীরা শেয়ার করছেন।
আক্রান্ত চিকিৎসকের সহকর্মী ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডাক্তার সৈয়দ হাসানুল ইসলাম বলেন, ‘বিপদ জেনেও আমরা সেবা দিয়ে যাচ্ছি। দিয়ে যাবো। রোগীদের প্রতি আমাদে অনুরোধ তারা যেনো চিকিৎসা সেবা নিতে এসে কোন তথ্য গোপন না করে।’
জানা যায়, ময়মনসিংহ জেলায় এখন পর্যন্ত ২৪জন চিকিৎসকসহ ৪০ জন নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী ও স্টাফ আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসক ১৫ জন, নার্স ১২ জন ও অন্যান্য স্বাস্থ্য কর্মী ১৭ জন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সেবা নিতে আসা রোগীরা তথ্য গোপন করছেন, বা তারা অনেকেই নিজেরাও জানছেন না যে তারা করোনা আক্রান্ত। তারা হাসপাতালে সেবা নিতে আসছেন আর এর সঙ্গে ছড়াচ্ছেন করোনা। আর এতে বিপদের মুখে পড়ছেন চিকিৎসকরা।
গত সপ্তাহে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতলে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ১২ চিকিৎসকসহ ৩৯ জন। এছাড়া, আইসোলেশনে আছেন ২৪ জন এবং কোয়ারেন্টিনে চিকিৎসক, নার্সসহ অন্তত ৪০ জন।
এদিকে, করোনা রোগীদের সেবা দিতে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছেন জেলার দুটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ৬ চিকিৎসকসহ ১৫জন।গফরগাও উপজেলা স্বাস্থকমপ্লেক্স হয়েছে লকডাউন।
ময়মনসিংহ স্বাস্থ্য বিভাগের পরিচালক ডা. মো. আবুল কাশেম বলেন, ‘কোন একজনের যদি করোনা পজেটিভ আসে, তাহলে কিন্তু তার আসেপাশের সবাইকেই টেস্ট করাতে হয়। এতে আতঙ্ক এবং বিপদের শঙ্কা বেড়ে যায়। সকল শঙ্কাকে মোকাবেলা করেই আমাদের কাজ করতে হবে।’
ময়মনসিংহ শাখার বিএমএ সভাপতি ডা. মতিউর রহমান ভূঁইয়া বলেন, চিকিৎসকদের পিপিই এবং মাস্ক সরবরাহ বাড়াতে হবে। এছাড়া জনগণকেও সচেতন করতে হবে তারা যেন তাদের কোন ধরণের তথ্য গোপন না করে।