অলি-গলির অভুক্ত কুকুরগুলোকে নিয়মিত খাবার দেন একদল তরুণ-তরুণী
দেশের অন্যান্য এলাকার মতো বগুড়াতেও যেমন বন্ধ রেস্টুরেন্টগুলো, তেমনই বন্ধ পাড়া মহল্লার রেওয়ারিশ কুকুরগুলোর খাওয়া। এ অবস্থায় অলি-গলিতে থাকা বেওয়ারিশ কুকুরগুলোর একবেলা খাবার নিশ্চিত করতে পাশে দাঁড়িয়েছেন বগুড়ার একদল তরুণ-তরুণী এবং স্থানীয় সরকারি কর্মকর্তারা।
বগুড়া জেলা স্কুল ও সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি ২০১৩ ব্যাচের ১৬ জন শিক্ষার্থী নিজেরা ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা করে চাঁদা দিয়ে মানবিক এ কাজ শুরু করেন ৯ এপ্রিল থেকে। এখন দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে তাদের পরিচিতরা টাকা দিচ্ছেন কাজটি চালিয়ে যেতে।
বগুড়া জেলা স্কুলের প্রাক্তন ছাত্র ও দিনাজপুরের হাজি দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মো. এশরাকুল হক জানান, প্রতিদিন অন্তত ২০০ কুকুরের এক বেলার খাওয়া তারা নিশ্চিত করেছেন।
বগুড়া শহর ও আশেপাশের এলাকার বেওয়ারিশ কুকুরগুলোর বহু বছর ধরেই খাদ্যের সংস্থান রেস্টুরেন্টগুলোর উচ্ছিষ্ট আর কসাইখানা থেকে ফেলে দেওয়া গবাদি পশুর শরীরের বিভিন্ন অংশ। কখনো কখনো বাসা-বাড়ি থেকেও দেওয়া হয় নানা খাবার। কিন্তু রেস্টুরেন্ট বন্ধ থাকার পাশাপাশি করোনাভাইরাসের কারণে বাসা-বাড়ির কাছে ঘেঁষতে পারছে না বোবা প্রাণীগুলো।
বগুড়া সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আজিজুর রহমান জানান, ওই শিক্ষার্থীদের এমন মানবিক উদ্যোগ দেখে তিনি নিজেও সহকর্মীদের নিয়ে প্রতি রাতেই বিভিন্ন ধরনের খাবার দিচ্ছেন অলি-গলিতে থাকা কুকুরগুলোকে। ছোটদের দেখানো মানবিক এ পথ ধরে শুধু প্রশাসনিক এ কর্মকর্তারা নন, এলাকার অন্য তরুণরাও এগিয়ে এসেছেন। যার পক্ষে যতটুক সম্ভব, সেটুকু নিয়েই বেওয়ারিশ ককুরদের পাশে দাঁড়াচ্ছেন তারা।
বগুড়ায় ঐহিত্যবাহী আকবরিয়া গ্র্যান্ড হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্টও কিছু কুকুরকে নিয়মিত খাবার দিচ্ছে। শতবর্ষী এ প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার মো. শামীম তালুকদার জানান, সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করে প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে প্রতি রাতেই দুস্থ মানুষদের খাবার দেওয়া হয়। এ সময় বেশ কিছু কুকুরকেও দেওয়া হয় টাটকা খাবার।
শহরের শিববাটি এলাকাতেও রাতে কুকুরগুলোর খাবার ব্যবস্থা করেছেন এলাকার তরুণ শিক্ষার্থীরা। বগুড়া আজিজুল হক কলেজের ছাত্র রায়হান হোসেন জানান, গত ৮-৯ দিন ধরে তারা ৫-৭ বন্ধু চাঁদা দিয়ে এলাকার ২০-২৫টি কুকুরকে খাবার দিচ্ছেন।
“আমাদের মধ্যে এ কাজের স্পৃহা জেগেছে অগ্রজ মো. এশরাকুল হক ও তাদের বন্ধুদের উদ্যোগ দেখে। কারণ তাদের সংগঠন ‘ফিড ফর অ্যানিমেল’ খুব বড় কাজ করছে”- বললেন রায়হান।
শহরের চেলোপাড়া এলাকার মো. শোয়েব হোসেন জানান, তারা ৫ বন্ধু মিলে চেলোপাড়া, নাটাইপাড়া ও জলেশ্বরীতলা এলাকার বেওয়ারিশ কুকুরগুলোর খাবারের ব্যবস্থা করছেন। তিনি বলেন, ‘এক সপ্তাহ পরপর আমার শহরের বেশি কিছু এলাকায় কুকুরগুলোকে খাবার দিচ্ছিলাম; কিন্তু আর্থিক অনটনে এ মুহূর্তে অল্পসংখ্যক কুকুরের খাওয়ার ব্যবস্থা করছি।’