করোনাভাইরাসবিচিত্র

লকডাউনের কারণে আসেনি স্বজন, হিন্দু বৃদ্ধের সৎকারে মুসলিমরা

মহামারি করোনাভাইরাস ঠেকাতে ভারতে জারি করা হয়েছে লকডাউন। এমন পরিস্থিতিতে দেশটির পশ্চিমবঙ্গের হাওড়ার উলুবেড়িয়া পৌরসভায় ব্রেন টিউমারে আক্রান্ত এক বৃদ্ধ মারা যান।

করোনা আতঙ্কে সেই মৃতদেহ সৎকারের অনুমতি দিচ্ছিল না উলুবেড়িয়া পৌরসভার কয়েকটি ওয়ার্ডের শ্মশান কর্তৃপক্ষ। বিভ্রান্ত হয়ে পড়েছিলেন মৃতের ছেলে। লকডাউনে আত্মীয়েরাও আসতে পারছিলেন না। কিন্তু তিনি পাশে পেয়ে যান মুসলমান সম্প্রদায়ের কয়েকজনকে।

সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজারে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানা যায়, হাওড়ার উলুবেড়িয়া পৌরসভার ২২ নম্বর ওয়ার্ডের কাঠ ব্যবসায়ী রবীন্দ্রনাথ পাল (৬২) আদতে বাগনানের বাসিন্দা। ব্যবসার সূত্রেই তিনি স্ত্রী-ছেলেকে নিয়ে উলুবেড়িয়ার সিজবেড়িয়ায় থাকতেন। দীর্ঘদিন ধরে ব্রেন টিউমারে ভুগছিলেন রবীন্দ্রনাথ। শনিবার রাতে তার মৃত্যু হয়।

এরপর রবীন্দ্রনাথের ছেলে তন্ময় আত্মীয়দের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তারা জানান, এই পরিস্থিতিতে তাদের পক্ষে আসা সম্ভব নয়। তন্ময়রা যে এলাকায় থাকেন, সেখানে সংখ্যালঘু মানুষেরই বাস বেশি। বাবার মৃতদেহ নিয়ে যাওয়ার জন্য তার পাশে দাঁড়ান সেই মানুষেরাই।

কিন্তু উলুবেড়িয়ার দুটি শ্মশানে দাহ করার জন্য দেহ নিয়ে যাওয়া হলে ফিরিয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেন তন্ময়। যোগাযোগ করা হয় উলুবেড়িয়ার ২২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শাশ্বতী সাঁতরার সঙ্গে। তিনি জানান, প্রথমে শতমুখী শ্মশানও সৎকারে রাজি হচ্ছিল না। তবে অনুরোধের পর অনুমতি মেলে।

তবে এই সময়ে মানবধর্মের এক নতুন দিক দেখেছেন তন্ময়। হিন্দু রীতি মেনে মুসলমান সঙ্গীদের পাশে নিয়ে রোববার বাবার সৎকার করেছেন তিনি। তন্ময় বলেন, দুর্দিনে মানুষ চেনা যায়। ছোটবেলায় পড়েছিলাম, শেষ দিনে যে সঙ্গী হয়, সেই বন্ধু। তারা হয়তো আমার আত্মীয় নন। তবে নিজের আত্মীয়দের থেকে অনেক কাছের হয়ে গেলেন। তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতার শেষ নেই।

এতো প্রশংসার কোনো কারণ দেখছেন না তন্ময়ের শ্মশান-সঙ্গী সিজবেড়িয়ার শেখ ইলিয়াস, শেখ ইউনিস আলিরা। বলেন, তারা আমাদের পাড়ার লোক। এমন পরিস্থিতিতে নিজের লোকেরা আসতে পারেননি। আমরা ছাড়া আর কাকে পাশে পাবেন তারা। এখানে সম্প্রদায় কোনো বিষয় নয়। মানুষের পাশে দাঁড়ানোটাই বড় কথা।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

1 × 2 =

Back to top button