দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে অর্থনৈতিক কূটনীতিতে বেশি গুরুত্ব
দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক কূটনৈতিক সম্পর্ক বেশ গুরুত্ব পাচ্ছে। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক বাড়ার পাশাপাশি কূটনীতিক সম্পর্কও জোরদার করা হচ্ছে।
এ লক্ষ্য নিয়েই কোরিয়ার প্রধানমন্ত্রী লি নাক-ইয়োন তিন দিনের সরকারি সফরে শনিবার বিকালে এসে পৌঁছান। এই সফরে বাংলাদেশ ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে বেশ কয়েকটি অর্থনৈতিক ও বিনিয়োগ চুক্তি স্বাক্ষর হবে। একই সঙ্গে দুই দেশের ব্যবসায়ীদের মধ্যে যোগাযোগ বাড়ানোর মাধ্যমে আমদানি-রফতানি বাণিজ্যও বাড়ানো হবে।
যুগান্তরে মনির হোসেনের এক রিপোর্ট থেকে জানা যায়, বাংলাদেশে কোরিয়ার বিনিয়োগ বাড়ানো, বাণিজ্যিক সম্পর্ক উন্নয়ন এবং অর্থনৈতিক কুটনীতিকে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে এই সফরে। এ কারণে সরকারের পদস্থ কর্মকর্তাদের পাশাপাশি বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলাদা বৈঠক করবেন কোরিয়ার প্রধানমন্ত্রী। তিনি ২১ জুলাই পর্যন্ত বাংলাদেশ, তাজিকিস্তান, কিরগিজস্তান, কাতার- এই চার দেশ সফর করবেন।
এদিকে শনিবার সন্ধ্যায় হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে ঢাকায় অবস্থানরত কোরিয়ান কমিউনিটির প্রতিনিধিদের সঙ্গে নৈশভোজে অংশ নেন লি। রবিবার সকালে সাভার ইপিজেডে ইয়ানগুন হাইটেক সোয়েটার ওয়্যার এবং ঢাকার মুগদায় অ্যাডভান্স নার্সিং এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ পরিদর্শন করবেন। দুপুরে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে এফবিসিসিআই আয়োজিত বাংলাদেশ-কোরিয়া বিজনেস ফোরামে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করবেন লি। এখানে দুই দেশের ব্যবসায়ীদের মধ্যেও বিনিয়োগ নিয়ে আলোচনা হবে।
এদিকে গত মাসে দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সিউলে আমদানি পণ্যের মেলায় প্রথমবারের মতো অংশ নিয়েছে বাংলাদেশ। দেশটির বাংলাদেশ দূতাবাসের সহযোগিতায় কোরিয়া-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (কেবিসিসিআই) ১০টি কোম্পানি এ মেলায় অংশ নেয়। সিউলের কো এক্স মলে ২৭ থেকে ২৮ জুন এ মেলা অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে ঢাকায় কোরিয়ান পণ্যের প্রদর্শনী হয়ে গেছে।
কোরিয়া থেকে বাংলাদেশ বিভিন্ন ধরনের পণ্য আমদানি করে। গত অর্থবছরে কোরিয়া থেকে ১ হাজার ৪৬ কোটি টাকার পণ্য আমদানি করা হয়েছে, যা দেশের মোট আমদানি ব্যয়ের ২ দশমিক ৬ শতাংশ। এর আগের অর্থবছরে এর পরিমাণ ছিল ৯ হাজার ৮৬৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে বিভিন্ন শিল্পের যন্ত্রপাতি, কম্পিউটার সামগ্রী, কাঁচামাল, কাপড় আমদানি করা হয়েছে সবচেয়ে বেশি।
বিদায়ী অর্থবছরের জানুয়ারি-মার্চ সময়ে কোরিয়ায় বাংলাদেশ রফতানি করেছে ৪৬৮ কোটি টাকার পণ্য। আগের অর্থবছরের একই সময়ে আমদানি করা হয়েছিল ৩৮২ কোটি টাকার পণ্য। এর মধ্যে পাট ও পাটজাত পণ্য, তৈরি পোশাকসহ বিভিন্ন পণ্য রফতানি করা হচ্ছে।
দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য বাড়াতে ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশে ব্যাংকিং কার্যক্রম শুরু করেছে কোরিয়ার সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক ব্যাংক ওরি ব্যাংক। কোরিয়ায় তাদের ৮৯৪টি এবং বিভিন্ন দেশে ২৩টি শাখা রয়েছে। শুরুতেই তারা অফশোর ব্যাংকিং কার্যক্রম শুরু করেছে। ফলে তারা দেশে বিনিয়োগ বৃদ্ধি করেছে। এ ব্যাংকের মাধ্যমে বছরে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকার রেমিটেন্স আসছে বিদেশ থেকে। গত বছর পর্যন্ত তাদের আমানতের পরিমাণ ছিল ৯৩১ কোটি টাকা। এর মধ্যে ঋণ হিসেবে বিতরণ করেছে ৫৫৯ কোটি টাকা। মোট আমানতের ৬০ শতাংশ বিনিয়োগ করেছে। তাদের হাতে আরও ২২ শতাংশ বিনিয়োগযোগ্য অর্থ রয়েছে। এর মধ্যে তারা শিল্প খাতে চলতি মূলধন, শিল্পঋণ, কৃষিঋণ ও এসএমই খাতে তারা বিনিয়োগ করেছে। নারী উদ্যোক্তাদের দিয়েছে দেড় কোটি টাকা। কোরিয়ার সঙ্গে আমদানি-রফতানি বাণিজ্যের প্রায় পুরোটাই তাদের সঙ্গে হয়ে থাকে। বাংলাদেশে কোরিয়ান ইপিজেট হয়েছে। এখন কোরিয়ান ইজেড হচ্ছে। এগুলোয় কোরিয়ান বিনিয়োগ আরও বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে। কোরিয়া বিশেষ উন্নত প্রযুক্তির পণ্যগুলো বাংলাদেশে তৈরি করে বিদেশে রফতানি করবে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ রফতানিকারক সমিতির সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী যুগান্তরকে বলেন, কোরিয়ার সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়ছে, এটি একটি ইতিবাচক খবর। এখন কোরিয়ায় আমাদের রফতানি খুবই কম। এটি বাড়ানোর সুযোগ আছে। বিশেষ করে পোশাক রফতানি বাড়ানো গেলে খরচও কম হবে।
এছাড়া পোশাক রফতানির বিপরীতে ওই দেশ থেকে কাঁচামাল হিসেবে কাপড় আমদানি করা যাবে। এতে দুই দেশের আমদানি-রফতানি বাণিজ্যের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা পাবে। তিনি আরও বলেন, কোরিয়ার সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বাড়ানোর আরও বড় একটি দিক হচ্ছে, কোরিয়ান বিনিয়োগ আকর্ষণ করা। কোরিয়ার বিনিয়োগ এনে দেশে উন্নত প্রযুক্তির পণ্য উৎপাদন করে রফতানি করা গেলে দেশের ভাবমূর্তি যেমন বাড়বে, তেমনি বাড়বে কর্মসংস্থান ও ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিধি। কোরিয়ান মুদ্রার নাম হচ্ছে ওন। ওরি ব্যাংকের মাধ্যমে এই মুদ্রায় আমদানি-রফতানি ব্যবসা করা যাচ্ছে। এতে দুই দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের মধ্যকার খরচ কমে যাচ্ছে। বর্তমানে প্রতি কোরিয়ান মুদ্রা ওন ১২ টাকা ১৪ পয়সায় বেচাকেনা হচ্ছে। এক বছর আগে ছিল ১৪ টাকা ৬ পয়সা। গত এক বছরে কোরিয়ান মুদ্রার বিপরীতে বাংলাদেশের টাকার মান বেড়েছে। ফলে ওই দেশ থেকে পণ্য আমদানি ব্যয় কমেছে।