রাজনীতি

নিজের স্বাস্থ্য বিষয়ে মিডিয়ায় কথা বলতে মানা করেছেন খালেদা জিয়া

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ৬ মাসের শর্তসাপেেক্ষ মুক্তি পেয়ে গত প্রায় ২ মাসের কাছাকাছি সময় ধরে গুলশানের বাসভবন ফিরোজায় অবস্থান করছেন।

নিজের ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের অধীনে এ সময়টাতে চিকিৎসা নিলেও তার শারীরিক অবস্থার উল্লেখযোগ্য কোনও পরিবর্তন হয়নি। এখনও আগের মতো হুইল চেয়ারেই চলাফেরা করতে হচ্ছে তাকে।

তবে মানসিকভাবে তিনি আগের চেয়ে অনেক ভালো আছেন বলে জানিয়েছেন তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক। কিন্তু মহামারি অবস্থায় নিজের স্বাস্থ্যের কথা জানিয়ে দেশবাসী ও নেতাকর্মীদের উদ্বেগ বাড়াতে চান না খালেদা জিয়া।

তাই নিজের স্বাস্থ্য বিষয়ে পরিবারের সদস্য, ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও দলীয় নেতাদের মিডিয়াতে কোনও কথা বলতে বারণ করে দিয়েছেন তিনি। তার পরিবারের সদস্য ও চিকিৎসা সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।

পরিবারের সদস্য ও ব্যক্তিগত চিকিৎসকরা বলছেন, প্রায় ২ মাস আগে খালেদা জিয়া মুক্তি পেলে করোনাভাইরাসের মধ্যেও নেতাকর্মীরা বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে তাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল থেকে ফিরোজায় পৌঁছে দেন। এই সময়ের মধ্যে তার সঙ্গে পরিবারের সদস্য ও ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের বাইরে শুধু দলের মহাসচিবসহ স্থায়ী কমিটির নেতারা দেখা করতে পেরেছেন।

এর বাইরে দলের আর কারও পক্ষে তার সাক্ষাৎ পাওয়ার সুযোগ হয়নি। ফলে শীর্ষ পর্যায়ের কয়েকজন নেতা ছাড়া এমনিতে দলের সব স্তরের নেতাকর্মীরা তার ভালো-মন্দ বিষয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় রয়েছেন।

এরমধ্যে করোনাভাইরাস আতঙ্ক ও বিভিন্ন কষ্টের মধ্যে আছেন নেতাকর্মীরা। এসবের মধ্যে সারা দেশে দুস্থদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ ও দলীয় রাজনীতি সঠিক পথে রয়েছে মনে করেন খালেদা জিয়া। বর্তমান পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত নিজের শারীরিক অবস্থার কথা জানিয়ে নেতাকর্মী ও দেশবাসীকে আতঙ্কিত অবস্থায় ফেলতে চান না তিনি। এই কারণে গত ১১ মে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম মিডিয়ায় কোনও কথা বলেননি।

খালেদা জিয়ার বোন সেলিমা ইসলাম বলেন, ‘খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা আগের মতো রয়েছে। ডাক্তাররা তার নিয়মিত চিকিৎসার খোঁজ-খবর নিচ্ছেন।’

তার স্বাস্থ্যের বিষয়ে মিডিয়ায় কথা না বলার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সেলিমা ইসলাম বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক বলেন, গত ৯ মে ম্যাডাম খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে গেলে তিনি আমাকে বলেন, দেশের মানুষ এখন কত কষ্টে আছেন। করোনা আতঙ্কে রয়েছেন। এই সময় আমার স্বাস্থ্য নিয়ে কথা বলে নেতাকর্মীদের আরও আতঙ্কিত করার প্রয়োজন নেই। তোমরা এখন এ বিষয়ে আর কথা বলো না। বোনকেও বলে দেবে আমার স্বাস্থ্য নিয়ে মিডিয়ায় যেন কথা না বলে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তখন এ বিষয়ে কথা বলা যাবে।

ওই চিকিৎসক আরও বলেন, ‘এখন তো তিনি বাসায় টেলিভিশন ও খবরের কাগজ দেখতে পারেন। ফলে গত ২ মাসে টেলিভিশন ও পত্রিকায় বিভিন্ন সময় তার স্বাস্থ্যের বিষয়ে যে নিউজ হয়েছে সেগুলো তিনি দেখছেন। এই কারণে হয়তো তিনি আমাদের এ বিষয়ে কথা বলতে নিষেধ করেছেন। তবে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা আগের মতো থাকলেও মানসিকভাবে তিনি এখন বেশ ভালো আছেন। নিয়মিত ছেলে, ছেলেদের স্ত্রী, নাতনিদের সঙ্গে কথা বলছেন। দলের নেতাকর্মীদেরও খোঁজ-খবর নিচ্ছেন।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক নেতা বলেন, ‘খালেদা জিয়া মুক্তি পাওয়ার দিন রাতেই তার সঙ্গে দেখা হয়েছিল। এরপর আর এখনও দেখা হয়নি। তার ডাক্তারদের সঙ্গে কথা হলে যতটুকু পারা যায় খবর জানতে চেষ্টা করি। গত ১১ মে ম্যাডামের সঙ্গে মহাসচিব মির্জা ফখরুলের দেখা করার পরে এখনও তার সঙ্গে কোনও কথা হয়নি।’

তিনি আরও বলেন, ‘খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার পর আমরা যখন তার মুক্তির জন্য কার্যকর কোনও আন্দোলন গড়ে তুলতে পারিনি, তখন কেন্দ্র থেকে তৃণমূল সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের মনোবল ভেঙে যায়। এখন যেভাবেই হোক তার মুক্তিতে সেই হারানো মনোবল ফিরে এসেছে। তাই নেতাকর্মীদের মানসিক অবস্থার কথা বিবেচনায় নিয়েই হয়তো তার অসুস্থতার বিষয়টি বেশি বেশি বাইরে আসুক এটা তিনি চান না। এই কারণে হয়তো তার শারীরিক অবস্থা নিয়ে মিডিয়ায় কথা বলতে নিষেধ করেছেন।’

প্রসঙ্গত, গত ২৫ মার্চ শর্ত সাপেক্ষে ছয় মাসের জন্য স্থগিত করে দুই শর্তে খালেদা জিয়ার মুক্তি দেয় সরকার। শর্ত দুটি হলো তাকে বাসায় থেকে চিকিৎসা নিতে হবে এবং এই সময়ে দেশের বাইরে যেতে পারবেন না।

খবরঃ বাংলা ট্রিবিউন

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

4 × one =

Back to top button