Lead Newsক্রিকেটখেলাধুলা

লাভ নাকি ক্ষতি হলো ক্রিকেটারদের?

ক্রিকেটারদের সঙ্গে আলোচনার পর গত বুধবার রাতে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান শুরুতেই বলেছিলেন, ‘আলোচনা ফলপ্রসূ হয়েছে। আগেই বলেছিলাম তারা এলেই তাদের দাবি মেনে নেওয়া হবে।

সেটাই হয়েছে।’ সাকিব আল হাসানও বলেন, ‘আলোচনায় আমরা সবাই খুশি। এখন বাস্তবায়ন হলেই সব ঠিক।’ ক্রিকেটারদের দাবি সহজে মেনে নিয়ে পরিবেশ শীতল করার চেষ্টা করবে বিসিবি, এটাই অনুমিত ছিল। বুধবার রাত ১১টায় সংবাদ সম্মেলনে দুই পক্ষের কারও মুখেই হাসি দেখা যায়নি। বরং কয়েকজন ক্রিকেটার শঙ্কায় রয়েছেন। কেউ কেউ নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবতে শুরু করেছেন।

সংবাদমাধ্যম দৈনিক ইত্তেফাক এক প্রতিবেদনে জানায়, ক্রিকেটারদের অনেকেই এরই মধ্যে বুঝে ফেলেছেন অভিভাবকের বিরুদ্ধে বিরোধে গিয়ে ক্ষতি হয়েছে তাদের। মুখে তাই কিছু না বললেও ভেতরে ভেতরে ক্রিকেটাররা শঙ্কিত।

বিসিবির পরিচালকরা বুধবার সকাল থেকে ক্রিকেটারদের অপেক্ষায় ছিলেন। সাকিব-তামিমদের বিসিবিতে আসার সময় হয় রাত ৯টায়। বিসিবির সভাকক্ষে প্রায় একশ ক্রিকেটারের সবাই প্রবেশ করার পর সভাপতির অগ্নিমূর্তি দেখতে পান।

এক এক করে ক্রিকেটারদের প্রতি প্রশ্ন ছুড়ে দেন বিসিবি সভাপতি। স্পষ্ট বলে দেন, তার কাছে আর কোনো ব্যক্তিগত কারণ নিয়ে যেন কোনো ক্রিকেটার না আসেন। এখন থেকে কর্পোরেট পদ্ধতিতে কাজ চলবে বলে জানান।

কয়েকজন ক্রিকেটারের ওপর একটু বেশি ক্ষেপে যান তিনি। এরমধ্যে রয়েছেন অলরাউন্ডার মেহেদী হাসান মিরাজ। বিসিবি সভাপতি রাগান্বিত হয়ে কথা বলার সময় কোনো খেলোয়াড় প্রতিবাদ করার সাহস পাননি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিসিবির এক পরিচালক যুগান্তরকে বলেন, প্রত্যেক খেলোয়াড়েরই কিছু না কিছু দুর্বলতা রয়েছে। এদের যারা নেতৃত্ব দিচ্ছে তাদের সবাই আমাদের কাছ থেকে আলাদা সুবিধা নিয়ে থাকে। তাদের জোর থাকলে অবশ্যই বিসিবি সভাপতি উত্তেজিত হওয়া পর প্রতিবাদ করত।’

আগেরদিন ক্রিকেটারদের নতুন মুখপাত্র ব্যারিস্টার মোস্তাফিজুর রহমান বিসিবিতে যে ১৩ দাবি পাঠিয়েছেন সেগুলোর নিচে ৪৯ জন ক্রিকেটারের নাম রয়েছে। অনেক ক্রিকেটার কাল সেই তালিকা থেকে নিজেদের নাম বাদ দিয়েছেন।

এরমধ্যে রয়েছেন ইমরুল কায়েস। ঘরোয়া ও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পারিশ্রমিক বাড়ানো, প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অনুশীলন সুযোগ সুবিধা বাড়ানো, ঘরোয়া ক্রিকেটে কাঠামো বদলসহ দেশের সার্বিক ক্রিকেট সংস্কৃতির বদল চান ক্রিকেটাররা।

সর্বোপরি তাদের দাবি, প্রাপ্য সম্মান যেন ক্রিকেটারদের দেয় বোর্ড। তবে বিসিবির সঙ্গে যে আলোচনা হয়েছে তাতে নাকি জাতীয় দল ও জাতীয় দলের আশপাশে থাকা ক্রিকেটারদের জন্য সুযোগ-সুবিধা বেড়েছে। ঘরোয়া আসরে খেলা ক্রিকেটাররা খুব বেশি আলো দেখছেন না।

সংবাদ সম্মেলনে সাকিবকে প্রশ্ন করা হয় প্রথম শ্রেণির ম্যাচে যে এক লাখ টাকা বেতন করার দাবি ছিল সেটা কি বিসিবি মেনে নিয়েছে? সাকিব পাশ কাটিয়ে যান। এই প্রশ্নের উত্তর দিতে রাজি হননি।

এতে শঙ্কা আরও বেড়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ক্রিকেটার বলেন, ‘আমাদের তো প্রধান দাবিই ছিল বেতন বাড়ানো। কিন্তু সেখানে কিছু হবে বলে আমার মনে হচ্ছে না। যা হয়েছে সব জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের জন্য।’ এতগুলো দাবি মেনে নেয়ার পর সাধারণত ক্রিকেটারদের মুখে হাসি থাকার কথা। কিন্তু তাদের সঙ্গে কথা বলতে গেলে উল্টো দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো। এক ক্রিকেটার বলেন, ‘লাভ তো কয়েকজনের হবে।

কিন্তু আমাদের ঘরোয়া আসরের ক্রিকেটারদের কি হবে সেটাই এখন দেখার।’ সংবাদ সম্মেলন শেষে বেরিয়ে যাওয়ার সময় কেউ কেউ বললেন, কি হল এটা!

গত পরশু রাতে আলোচনার পর সংবাদ সম্মেলন শেষে সিনিয়র কয়েকজন ক্রিকেটার বিসিবির প্রধান নির্বাহী নিজামউদ্দিন চৌধুরীর কক্ষে কিছু আনুষ্ঠানিকতা সারেন। এরপর আবার ক্রিকেটাররা ড্রেসিংরুমে একত্রিত হয়ে নিজেদের আরও জোটবদ্ধ হওয়ার শপথ নেন। বিসিবি থেকে এখন কতটুকু তারা নিতে পারবেন এবং কতটুকু হারাবেন সেই হিসাব-নিকাশের গোলকধাঁধায় রয়েছেন তিনদিন আন্দোলন করা ক্রিকেটাররা।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

8 + 3 =

Back to top button