অন্যান্য

বিবাহের সময় মেয়েকে লেখা একজন বাবার ঐতিহাসিক চিঠি

খতিব উবায়দুল হক রহ.- এর বড় মেয়ে রায়হানা হক সিলেটে তার দাদীর কাছে থাকতেন। যখন তার বিয়ের কথাবার্তা চলছিলো; তখন তিনি মেয়েকে উপদেশমূলক চিঠি লিখেন। সময়টা ছিলো ১৯৭৫ সাল। নিজের মেয়েকে আচার-ব্যবহারে ভদ্রতা ও নিপুণতা অর্জনের ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করে নভেম্বরের ১৬ তারিখে একটি পত্র লিখেছিলেন।

আলেম, লেখক ও সাংবাদিক এহসান সিরাজ এর সৌজন্যে পাঠকের জন্য চিঠিটির আংশিক তুলে ধরা হলো।

 

                                  মরহুম খতিব উবায়দুল হক (জন্ম ১৯২৮ সালের ২ মে এবং ইন্তেকাল ৬ অক্টোবর ২০০৭)

 

স্নেহের…!
রায়হানা

এক বছর থেকে তোমার স্কুল শিক্ষা বন্ধ রয়েছে। কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে, তুমি লেখাপড়া ছেড়ে দিবে। বরং এখন আরো বেশি বেশি পড়া উচিত। লেখার চর্চাও করা দরকার। বিশেষভাবে দীনি কিতাবাদি এবং উর্দু বেহেশতী জেওর নিয়মিত পড়বে। দৈনিক দাদিজানের কাছে বসে বেহেশতী জেওর থেকে তিনি যতটুকু বলবেন ততটুকু পড়বে। তার কাছে জিজ্ঞেস করে বুঝে পড়ার চেষ্টা করবে।

কিতাব ছাড়াও আরেকটি বিষয়ের প্রতি খেয়াল রাখা অত্যাধিক জরুরী। তা অর্জন করতে না পারলে ডিগ্রি অর্জন করার কোনো মূল্য থাকে না। এ জিনিসটি হচ্ছে ‘ছালিক্বা’ তথা আচার-ব্যবহারে ভদ্রতা ও নিপুণতা অর্জন এবং গৃহস্থ বিষয়ক সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার শিক্ষা গ্রহণ। যে নারী এগুলো খেয়াল করে না, তাকে পদে পদে হোঁচট খেতে হয়। মানুষ তাকে ঘৃণা করে। পক্ষান্তরে যে মেয়ে এগুলো খেয়াল রাখে, লোকে তার তারিফ করে, সম্মান করে। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার মাধ্যমে এগুলো অর্জন হয় না, নিজের বুদ্ধি-বিবেচনার মাধ্যমেই তা শিখতে হয়।

ছালিক্বা কাকে বলে? এর অর্থ কী? ছালিক্বা মানে—
১. প্রতিটি কাজ সুষ্ঠুভাবে আঞ্জাম দেয়া।
২. নিজ দায়িত্বে ঘরের প্রতিটি কাজ সম্পাদন করা। কারো জন্য বসে না থাকা।
৩. ঘরের ছোট বড় সবার প্রতি লক্ষ্য রাখা।
৪. ঘরদোর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা।
৫. ঘরের প্রতিটি বস্তু যথাস্থানে হেফাজতে রাখা।
৬. ছোট-বড় সবার মর্জি মোতাবেক খাবার পরিবেশন করা ও তাদের অন্যান্য চাহিদার প্রতি লক্ষ্য রাখা।

৭. সবার সাথে নম্র ব্যবহার করা।
৮. বড়দের সেবা ও সম্মান এবং ছোটদের স্নেহ করা।
৯. ঘরে মেহমান আসলে তাদের সমাদর করা।
১০. ঘরে যা প্রয়োজন হতে পারে আগে থেকেই খেয়াল রাখা। এক সপ্তাহ পর কিসের প্রয়োজন হতে পারে, তা এখনই স্মরণ করিয়ে দেয়া।
১১. যে কাজে একবার দোষারোপ করা হয়, সে কাজে আবার যেন দোষারোপ করতে না হয়।

মোটকথা, ছলিক্বাসমৃদ্ধ মেয়ে সবসময় সুখে থাকবে। অন্যের সন্তুষ্টি পাবে। তার ঘর বেহেশতের নমুনা হবে। এসব বই পড়ে অর্জন করা যায় না। বুদ্ধি দিয়ে শিখতে হয়, আচার ব্যবহার থেকে শিখতে হয়। যার বয়বহার ভালো, তার কাছ থেকে শিক্ষা নিবে, যার ব্যবহার মন্দ, তার অনুসরণ করবে না।

আমার এ পত্রটি বুঝে শুনে দু’তিনবার পড়বে। যা বুঝে আসবে না, দাদী অথবা মাকে জিজ্ঞেস করে বুঝে নেবে। পত্রটি হেফাজত করে রাখবে। উপরোক্ত বিষয় সামনে রেখে নিজের মধ্যে কী কী ত্রুটি আছে, তা ভেবে দেখবে। নিয়মিত নামাজ পড়বে এবং কোরআন তেলাওয়াত করবে। এতে যেন ত্রুটি না হয়। এখানে সবাই ভালো আছে।

ইতি
উবায়দুল হক
১৬/১১/১৯৭৫

 

সূত্রঃ নয়াদিগন্ত

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

20 + 16 =

Back to top button