‘আগে খেয়ে বাঁচি পরে করোনার চিন্তা’
দীর্ঘ ১৮ বছর ধরে পরিবহন সেক্টরে কাজ করছেন বাস চালক বাবু। এই দীর্ঘ সময়ে কখনোই এমন পরিস্থিতিতে পড়েননি। করোনা পরিস্থিতিতে রাস্তায় পরিবহন চলাচল না করায় অনেকটা খেয়ে না খেয়ে থাকতে হয়েছে তাকে। গণপরিবহন চলাচলের ঘোষণা আসায় অনেকটা হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছেন তিনি। করোনার ভয় থাকলেও বাবু বলেন, আগে খেয়ে বাঁচি তারপরে করোনার চিন্তা।
সায়দাবাদ বাস টার্মিনালে কথা হয় রওদা পরিবহনের বাস চালক বাবুর সঙ্গে। তখন এসব কথা বলেন তিনি। যখন বাবুর সঙ্গে কথা হচ্ছিলো তখন পাশেই রান্না করছিলেন মিজান, পাপ্পু, সমিরসহ আরো বেশ কয়েজন পরিবহন শ্রমিক।
বাবুর সঙ্গে তারাও গলা মেলান। জানান ক্ষোভের কথাও। গত দুই মাসে পরিবহন মালিক কিংবা নেতা কেউ তাদের খোঁজ নেননি। স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলরসহ কয়েকজন তাদের নাম লিখে নিয়ে গেলেও কেউ ত্রাণ দেয়নি। এই কয়মাসে বাসের ভেতরেই থাকা-খাওয়া ও ঘুমানো। অনেক কষ্টে দিনাতিপাত করছেন বলেও জানান তারা।
তবে সীমিত আকারে হলেও গণপরিবহন চালুর সিদ্ধান্তে স্বস্তিবোধ করছেন পরিবহন সংশ্লিষ্টরা। তবে সেইসঙ্গে ভর করেছে করোনা সংক্রমণের শঙ্কাও।
জসিম নামে এক চালক জানান, সরকার বাস চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে তার মালিক তাকে বুধবার রাতে জানান। তবে তাকে এটাও বলে দেন ‘বাস চালাবা তোমাদের রিস্কে। ইচ্ছে হলে চালাবা না হলে বাস বন্ধ রাখবা। আামার কোনো অসুবিধা নেই।’
এই পরিস্থিতিতে বাস চালাবেন কিনা-জানতে চাইলে বলেন, না চালিয়ে কোনো উপায় নেই। জানি বাসের ভেতর স্বাস্থ্যবিধি রক্ষা করাটা কষ্টসাধ্য হবে। কিন্তু আসন সংখ্যার অর্ধেক যাত্রী নিলে ঝুঁকি এড়ানো সম্ভব। তবে মানিক নামে এক হেলপার জানান, বাস স্টাফদের সারাক্ষণ মাস্ক পরে থাকাটা অসম্ভব হবে।
যাত্রীদের মধ্যে কে করোনাভাইরাস বহন করছে তা কেউ বলতে পারে না। অথচ যাত্রীদের কাছাকাছি যেতে হবে আমাদের। ফলে ঝুঁকিতে পড়বো আমরা। কোন রকমে খেয়ে জীবন বাঁচাচ্ছি। আমাদের ডিউটি করতেই হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক বাস মালিক জানান, যত ব্যবস্থাই আমরা গ্রহণ করি না কেনো শতভাগ ঝুঁকি এড়ানো কখনোই সম্ভব না গণপরিবহনে। এর কারণ ব্যাখ্যা করে তারা বলেন, এজন্য বাস চালক, হেলপারদের যেমন সচেতন হতে হবে, তার চাইতেও বেশি সচেতন হতে হবে যাত্রীদের। আবার প্রতি ট্রিপের পরই গাড়ির ভেতর ভালো করে জীবাণুনাশক ছিটাতে হবে। প্রতিদিনই ধুতে হবে বাসের সিটকাভার ও পর্দা।
কিন্তু বাসের ভেতর অর্ধেক যাত্রী পরিবহন করে এসব ব্যয় বহন করাটা মালিকদের জন্য দুরূহ ব্যাপার। এজন্য অবশ্যই ভাড়া বৃদ্ধি করতে হবে। কমাতে হবে জ্বালানি তেলের মূল্যও। কারণ বর্তমান বিশ্ব বাজারে তেলের মূল্য অনেক কমে গেছে। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে ভাড়া বৃদ্ধি করলে যাত্রী অসন্তোষ সৃষ্টিরও আশঙ্কা আছে। তাই সবকিছু ও সব দিক পর্যালোচনা করে এসব বিষয়ে মালিক ও শ্রমিক পক্ষ এবং সরকার সংশ্লিষ্টদের সিদ্ধান্ত নেয়ার আহ্বান জানান বাস মালিকরা। সূত্র ডেইলি বাংলাদেশ