গোকুলের জীবন চলতো চুল কেটে। কিন্তু করোনাভাইরাস মহামারিতে অক্সিজেনের চাহিদা রয়েছে তা টেরে পেয়ে বাদ দিয়েছেন সেই কাজ।
অক্সিজেন সিলিন্ডারের বিক্রি ও মজুত শুরু করেছেন সেলুনেই। তবে অনুমোদন ছাড়া অধিকমূল্যে অক্সিজেন সিলিন্ডার বিক্রির অপরাধে গুনতে হয়েছে মোটা অঙ্কের জরিমানা।
রাজধানীর তেজগাঁও ‘কলোনি বাজার মার্কেট’ বা ‘হকার্স মার্কেট’ নামে পরিচিত এলাকায় মঙ্গলবার (১৬ জুন) দুপুরে অভিযান চালানো হয়।
র্যাপিড অ্যাকশান ব্যাটালিয়ন (র্যাব-৩) সদস্যদের সহযোগিতায় এবং ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের সহকারী পরিচালক আব্দুল মালেকসহ তিন কর্মকর্তার উপস্থিতিতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ কুমার বসু। অভিযানে ওই এলাকায় অক্সিজেন সিলিন্ডার মজুত বিক্রি ও ভাড়ায় চালানোর অভিযোগে একটি সেলুনসহ তিন প্রতিষ্ঠানকে মোট ১১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।
অভিযানের বিষয়ে ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ বসু বলেন, তেজগাঁও কলোনি বাজারের পাশেই একটি সেলুন। কিন্তু সেই সেলুন ব্যবসার আড়ালে ভেতরে অক্সিজেন সিলিন্ডার মজুত দেখা যায়, যা বিক্রির জন্য রেখেছেন বলে স্বীকার করেন সেলুনের মালিক গোকুল। তবে এ কাজের জন্য প্রতিষ্ঠানটির কোনও অনুমোদন নেই। তাছাড়া সেলুনের আড়ালে অক্সিজেন সিলিন্ডার বিক্রি এক ধরনের প্রতারণা। এ অবস্থায় সেলুনের মালিক গোকুলকে ভোক্তা অধিকার আইনে দুই লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। এছাড়া একই মার্কেটের এসএসকে এন্টারপ্রাইজ নামে আরেকটি প্রতিষ্ঠানকেও একই অভিযোগে এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।
তিনি আরও জানান, মেসার্স তাহের এন্টারপ্রাইজ মূলত এলপি গ্যাসের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। কিন্তু তারা করোনাকালে ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের অনুমোদন না নিয়ে এলপি গ্যাসের ব্যবসার আড়ালে অক্সিজেন সিলিন্ডারও বিক্রি করছিলো। সঙ্গে ভাড়ায় সিলিন্ডার সরবরাহও করছিলো। এজন্য প্রতিষ্ঠানটির মালিক আবু তাহের কুরাইসিকে পাঁচ লাখ টাকা ও সহযোগী ইয়াসিনকে তিন লাখ টাকা জরিমানা করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।
একই এলাকায় ইন্ডাস্ট্রিয়াল অক্সিজেন সিলিন্ডারের ব্যবসায়ী এসএসকে এন্টারপ্রাইজের মালিক ইমাম হোসেন শাকিলকে মেডিক্যাল সিলিন্ডার বিক্রির জন্য এক লাখ টাকা জরিমানা করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।
অপরদিকে, ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের অনুমোদন ছাড়া অক্সিজেন সিলিন্ডার মজুত ও বিক্রির অপরাধে গুলশান-২ এলাকার নার্সিংহোম মায়শা কেয়ার লিমিটেডের দুই কর্মকর্তাকে জেল ও জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ কুমার বসু জানান, অভিযানকালে আমরা প্রতিষ্ঠানটির কার্যালয়ে ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের অনুমোদনবিহীন অক্সিজেন সিলিন্ডার মজুত দেখতে পাই। শুধু তাই নয়, জিজ্ঞাসাবাদে জানতে পারি যে তারা অবৈধভাবে ওই অক্সিজেন সিলিন্ডারগুলো প্রায় তিনগুণ দামে অনেকের কাছে বিক্রি করেছেন।
তিনি বলেন, সব কিছুর প্রমাণ ও দায় স্বীকারের ভিত্তিতে মায়শা কেয়ার লিমিটেড নামক নার্সিং প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজিং ডিরেক্টর মো. মহিবুল ইসলামকে এক বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এছাড়া প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজার কাম অ্যাকাউনটেন্ট শাহাদাত হাবিবকে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনের বিভিন্ন ধারায় চার লাখ টাকা জরিমানা অনাদায়ে ৩ মাসের কারাদণ্ড প্রদান করা হয়। নগদ চার লাখ টাকা পরিশোধ করায় তিনি মুক্তি পান।