প্রত্যেক সংসদ সদস্য (এমপি)গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নে ২০ কোটি টাকা বরাদ্দ পেতে যাচ্ছেন। পাঁচ কোটি করে প্রতি বছর আগামী ৪ বছরে এ অর্থে নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় প্রকল্প বাস্তবায়ন করবেন তারা।
এটি রোববার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে উপস্থাপন করা হচ্ছে। ‘অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গুরুত্বপূর্ণ পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প-৩’ শীর্ষক প্রকল্পটি জুলাই থেকে শুরু হয়ে ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়ন করা হবে।
সিটি কর্পোরেশন এলাকার ২০ এমপি এবং সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্যরা এ বরাদ্দের বাইরে থাকবেন। এ হিসাবে ২৮০ এমপির জন্য ৬ হাজার ৪৭৬ কোটি ৬৫ লাখ টাকার একটি প্রকল্প হাতে নিতে যাচ্ছে স্থানীয় সরকার বিভাগ।
তবে এভাবে বরাদ্দ দেয়াকে সংবিধানবিরোধী বলে উল্লেখ করেছেন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার। বৃহস্পতিবার তিনি বলেন, এটা সম্পূর্ণরূপে সংবিধানবিরোধী। এ নিয়ে আদালতে একটি রায়ও আছে।
সেখানে বলা হয়েছে, জাতীয় সংসদ সদস্য বা চিফ হুইপ তারা স্থানীয় উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারবেন না। এরপরও এরকম প্রকল্প নিলে কি করার আছে? এটা অরাজকতার বহির্প্রকাশ। এটা অন্যায় ও আমাদের দুর্ভাগ্য। এসব কর্মকাণ্ডের ফলে লুটেরা তৈরি হচ্ছে।
জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, প্রকল্পটি পল্লী অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য। তাই সিটি কর্পোরেশনের আওতার বাইরে। আর সংরক্ষিত মহিলা আসনের এমপিদের নির্দিষ্ট কোনো এলাকা নেই। তারা কোথায় প্রকল্প বাস্তবায়ন করবেন?
এজন্য তাদের বাইরে রাখা হয়েছে। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘প্রকল্পের আগের দুই পর্যায় নিয়ে আমাদের কাছে কোনো অভিযোগ নেই। তবে দুর্নীতি ও অনিয়মের সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ পেলে তদন্ত করে দেখা হবে।’
সূত্র জানায়, সংসদ সদস্যরা নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকার রাস্তাঘাট, সেতু, কালভার্ট নির্মাণে বছরে ৫ কোটি টাকা করে বরাদ্দ পাবেন। এর আগে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ প্রথম সরকার গঠনের পর প্রত্যেক এমপি নিজ আসনের অবকাঠামো উন্নয়নে ১৫ কোটি টাকা করে পেয়েছিলেন।
সে সময় প্রকল্পের ব্যয় ছিল ৪ হাজার ৮৯২ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। এটি ২০১০ সালের মার্চ থেকে ২০১৬ সালের জুনে শেষ হয়। আওয়ামী লীগ সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদে এমপিদের ২০ কোটি টাকা করে বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল। এ পর্যায়ে প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ৬ হাজার ৭৬ কোটি ৪৪ লাখ টাকা।
২০১৫ সালের জুলাই থেকে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদে এটি চলমান রয়েছে। এ প্রকল্পটি শেষ না করেই তৃতীয় মেয়াদে এমপিদের ফের ২০ কোটি টাকা করে দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, এ প্রকল্পের আওতায় এমপিরা সরাসরি টাকা পাবেন না।
এমপিরা শুধু তাদের নির্বাচনী আসনে পছন্দ মোতাবেক প্রকল্পের নাম দেবেন। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর।
জানতে চাইলে ২৫ কুড়িগ্রাম-১ আসনের সংসদ সদস্য আসলাম হোসেন সওদাগর বলেন, এ প্রকল্পের আওতায় সরাসরি টাকা আমরা হাতে পাই না। বাস্তবায়নকারী সংস্থাকে যেসব প্রকল্পের তালিকা দেয়া হয় সে অনুযায়ী তারা বাস্তবায়ন করে।
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, বাংলাদেশের কোথায় অনিয়ম-দুর্নীতির সুযোগ নেই? তবে আমি নিশ্চিত করেই বলতে পারি, আমার আসনে এ প্রকল্পে কোনো অনিয়ম করতে দেইনি।
পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের সদস্য (সচিব) জাকির হোসেন আকন্দ বলেন, মন্ত্রণালয় থেকে কেন সিটি কর্পোরেশন ও সংরক্ষিত মহিলা আসনের এমপিদের বাদ রাখা হয়েছে সেটির ব্যাখ্যা আমার জানা নেই। তারা যেভাবে প্রস্তাব দিয়েছে আমরা সেভাবেই প্রক্রিয়াকরণ করেছি।
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, দ্বিতীয় পর্যায়ে প্রকল্পটি আগামী বছর জুনে শেষ হয়ে যাবে। এ পর্বের মূল্যায়ন করছে আইএমইডি। সাধারণত একটি ফেজের মূল্যায়ন প্রতিবেদন ভালো না এলে আমরা অন্য একটি ফেজে যাই না। এক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হয়নি।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, তৃতীয় দফার এ প্রকল্পের আওতায় নতুন করে উপজেলা সড়ক নির্মাণ করা হবে ৩০৫ দশমিক ২১ কিলোমিটার। ইউনিয়ন সড়ক নির্মাণ করা হবে ৬৬০ দশমিক ৩৭ কিলোমিটার। গ্রাম সড়ক উন্নয়ন হবে ৫ হাজার ৭৫ দশমিক ৭৬ কিলোমিটার। গ্রামীণ সড়ক রক্ষণাবেক্ষণ হবে ১ হাজার ৯০ দশমিক ৭৭ কিলোমিটার। গ্রামীণ সড়কে ১০০ মিটারের কম দৈর্ঘ্যরে সেতু ও কালভার্ট নির্মাণ করা হবে ৭ হাজার ৯৯২ দশমিক ২২ মিটার।