Lead Newsশিল্প ও বাণিজ্য

“সরকারি কর্মকর্তাদের বেতন ৬ মাস পর টাকা ছাপিয়ে দিতে হবে”

পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান হাবিব মনসুর বলেছেন, সরকার যেভাবে চলছে তাতে ৬ মাস পর টাকা ছাপিয়ে সরকারি কর্মকর্তাদের বেতন দিতে হবে।

‘সিপিডির বাজেট সংলাপ ২০২০’ শীর্ষক ভার্চুয়াল সংলাপে শনিবার (২০ জুন) তিনি এই মন্তব্য করেন। সিপিডির চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহানের সভাপতিত্বে সঞ্চালনা করেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন।

পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান হাবিব মনসুর বলেন, ধারাবাহিকভাবে এই সময়ে ১ বছরের বাজেট করা উচিত হয়নি। বরং ৬ মাস অন্তর অন্তর দুটি বাজেট করা উচিত ছিলো। এর মধ্যে প্রথম ৬ মাস করোনা মোকাবিলায়। পরের ৬ মাস করোনা পরবর্তী করণীয় কেন্দ্রীক করা উচিত ছিলো।

কিন্তু সরকার গতানুগতিকভাবে কেবল জিডিপি প্রবৃদ্ধিকে প্রাধান্য দিয়েছে বাজেটে। কিন্তু কারোনা ইস্যুকে প্রাধান্য দেয়া হয়নি। এই বাজেটে দিয়ে প্রবৃদ্ধি ৮ শতাংশ তো দূরের কথা পজিটিভ প্রবৃদ্ধিও হবে না।

তিনি বলেন, এবার রাজস্ব আদায়ের যে লক্ষ্যমাত্রা নেয়া হয়েছে, তা বাস্তবায়ন যোগ্য নয়। কর পরিধি বাড়ানোর জন্য আমরা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে দুই ভাগে ভাগ করার কথা বলেছিলাম। কিন্তু সরকার তা করেনি। এনবিআরের কাঠামোকে সংস্কার করতে বলেছিলাম। কিন্তু তা বাস্তবে করা হয়নি। ফলে রাজস্ব আদায় হয়নি। সামনেও আদায় সম্ভব না। এ কারণে সরকার এখনি ধার-দেনা করে চলছে। এইভাবে চললে আগামী ৬ মাস পর টাকা ছাপিয়ে সরকারি কর্মকর্তাদের বেতন দিতে হবে। এটা হবে দুর্ভাগ্যজনক। তবে এ সময় এখনও আসেনি। কিন্তু সময় আসতে বেশি দূরে নয়।

ডিসেম্বর পর্যন্ত করোনা থাকতে পারে বলে আশঙ্কা করে আহসান এইচ মনসুর বলেন, করোনার কারণে ৬-৯ মাস সময় ধরে যারা বেকার হয়েছেন। তাদের বেঁচে থাকার জন্য ৩-৫ হাজার টাকা করেও বিশেষ ফান্ড দেয়া যেতো। কিন্তু সেটা করা হয়নি।

বাজেটে কারোনায় ক্ষতিগ্রস্তদের লাইফ সাপোর্ট, স্বাস্থ্য খাতের সংস্কার ও বরাদ্দ বাড়ানোর দরকার। এক্ষেত্রে সবচেয়ে যোগ্য ও সঠিক লোকদের দিয়ে স্বাস্থ্য খাতের ম্যানেজমেন্ট করা উচিত। কারণ এখনো করোনা আক্রান্ত মানুষ গাড়ি ও রাস্তায় মারা যাচ্ছে।

আমরা ৪ থেকে ৫ মাস সময় অতিবাহিত করেছি। সঠিক পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। আরও ৩ মাস করোনার বাড়তে পারে বলে শঙ্কা করছি।

মন্দ ঋণ কমেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের এই তথ্যের সমালোচনা করে ব্রাক ব্যাংকের এই চেয়ারম্যান বলেন, করোনার ফলে ব্যাংকগুলোতে এখন মন্দ ঋণ কমেনি। বাস্তব চিত্র হলো এনপিএলের পরিমাণ দ্বিগুণ হয়েছে। কোথাও তিনগুণ হয়েছে। এটা অপ্রতাশিত।

ব্যাংকগুলোকে দুধ দেয়ার ক্যাপাসিটি দিতে হবে মন্তব্য করে আহসান এইচ মনসুর বলেন, সরকাররি ব্যাংকগুলোর মতোই বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মন্দ ঋণের পরিমাণ ৩০-৪০ শতাংশ হয়ে যায় তবে এটা দেশের ব্যাংক সেক্টরের জন্য মঙ্গল হবে না। ব্যাংকগুলোতে বাঁচাতে হবে।

এছাড়াও বেসরকারি খাতে আগমীতে ২৫ শতাংশ বিনিয়াগ সম্ভব হবে না। তার জন্য কর্মসংস্থান বাড়াতে হবে।

ভার্চুয়াল আলোচনায় অংশগ্রহণ করন, পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান, সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আমির খসরু মাহমুদ, নাইম রাজ্জাক, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহেমদ, এবং মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (এমসিসিআই) প্রেসিডেন্ট ব্যরিস্টার নিহাদ কবীর প্রমুখ।

অনুষ্ঠানের শুরুতে কোভিড-১৯ চলমান সুতরাং প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ আরও বাড়ানো প্রস্তাব করেছে সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি)। একইসঙ্গে শিক্ষা খাতের বরাদ্দ বাড়ানোর প্রস্তাব সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক মুস্তাফিজুর রহমান মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।

মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, করোনা এখনো চলমান কিন্তু প্রস্তাবিত বাজেটে করোনা প্রতিরোধ, এবং করোনা পবরর্তী যথাযথ কোনো পদক্ষেপ দেয়া হয়নি। ফলে বাজেট শুরুর ৬-৭ মাস প্রাধান্য দিয়ে রিভাইজড বাজেট করা। পাশাপাশি বড় ধরনের ঝাঁকুনি দিয়ে ঝুঁকি কমাতে হবে। পাশাপাশি চলমান বাজেটে রাখা স্বাস্থ্য ও শস্য বিমার প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করা দরকার। তা হলে দেশের মানুষ ও কৃষকরা দ্রুত করোনা মোকাবিলা করতে সক্ষম হতো। সুতরাং প্রবৃদ্ধি ও ধারাবাহিকতা কথা চিন্তা না করে সংস্কার বাড়িয়ে করোনার ঝুঁকির বাস্তবতা কামানো দরকার।

তিনি বলেন, এবারের বাজেটে আয়কর ২ লাখ থেকে ৩ লাখে বাড়ানো হয়েছে। এটা ভালো উদ্যোগ। কিন্তু ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত করার প্রস্তাব করছি। তবে বাজেটে প্রত্যক্ষকরে নিন্মবিত্তের সুবিধা কম দেয়া হয়েছে। আর উচ্চবিত্তশালীদের আরও বেশি সুবিধা দেয়া হয়েছে।

১০ শতাংশ হারে কর দিয়ে বিনা প্রশ্নে অপ্রদর্শিত অর্থ (কালো টাকা সাদা) বিনিয়োগের সুবিধা দেয়া নৈতিক, অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক কোনোভাবে কাম্য নয় উল্লেখ করে মুস্তাফিজ বলেন, কারণ অপ্রদর্শত অর্থ সুযোগ আরও আগেও দেয়া হয়েছে। তাতে এখন পর্যন্ত মাত্র ১৬ হাজার কোটি টাকা এসেছে। তার মধ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় এসেছে ৯ হাজার কোটি টাকা। সুতরাং এই সুবিধা দিয়ে কোনো লাভ হয়নি। এই সুবিধা দেয়াটা ঠিক হয়নি।

প্রস্তাবনায় বলা হয়, এডিপি বাস্তাবায়ন করার যোগ্য করা, মোবাইলের কলরেটের ওপর আরোপিত শুল্ক কমানো প্রয়োজন। ছোট ও মধ্যমেয়াদি শিল্প উদ্যোক্তাদের জন্য টার্নওভার ট্যাক্স কমানোর প্রস্তাব করছি।

নিহাদ কবীর বলেন, এতে সত্য ও ভালো ব্যবসায়ীদের কর প্রদানে নিরুৎসাহিত করছে। এতে বিশ্বের কাছে আমাদের মর্দাযা ক্ষুণ্ন হবে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

19 + thirteen =

Back to top button