নগরজীবন

কোয়ারেন্টাইন শেষে যা বললেন ডা. ফেরদৌস

১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইন থেকে মুক্ত হলেন করোনা সংকটকালে যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশের মানুষকে সেবা দিতে আসা ডা. ফেরদৌস খন্দকার। রবিবার সকালে তিনি কোয়ারেন্টাইন মুক্ত হন।

মুক্ত হবার পর ফেসবুকে তিনি জানান, দেশে আসার পেছনে তার রাজনৈতিক কোনো অভিলাষ ছিল না। এছাড়া কারো বিরুদ্ধে তার কোনো অভিযোগ নেই বলেও জানান।

ডা. ফেরদৌসের ফেসবুক স্ট্যাটাসটি তুলে ধরা হলো:

‘অবশেষে কোয়ারেন্টাইন মুক্ত হলাম আমি। কেটে গেলো ১৪টি দিন। সময়তো কাটবেই। থেকে যাবে কেবল স্মৃতি। এই মুহূর্তে কোন অভিযোগ নয়, কেবল ধন্যবাদই দিতে চাই সবাইকে। যারা গত ১৪টি দিন আমার সাথে ছিলেন। বিভিন্নভাবে সহায়তা দিয়েছেন, মানসিকভাবে শক্ত থাকতে প্রেরণা যুগিয়েছেন। তবে একথা আমাকে বলতেই হবে যে, শুরুটা বেশ কঠিনই ছিল আমার জন্যে। আমার বিরুদ্ধে ‘অহেতুক’ এবং ‘মিথ্যা অভিযোগে’ বিরাট ঝড় উঠেছিল। সব ভুল প্রমাণিত হয়েছে। ঝড়ও হয়তো থেমে গেছে।’

‘যা বলছিলাম, দেশে আসার পর আমাকে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে দেয়া হয়েছে; এই বিষয়টি আমি প্রথম পাঁচদিন মানতেই পারছিলাম না। কেননা আমার এন্টিবডির সনদ ছিল। তখন মানসিকভাবে রীতিমতো বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছিলাম। পরিবার, সহকর্মী, বন্ধু, সুধীজন, সহযোদ্ধারা, সাংবাদিক এবং দেশের মানুষের সহায়তা ও সমর্থন আমাকে সাহস জুগিয়েছে।’

‘দেশে এসেছিলাম কয়েক সপ্তাহ দেশবাসীর জন্যে কাজ করবো বলে। সাথে ছোট্ট একটি স্বাস্থ্য কেন্দ্র গড়ে তুলে যাবো, এমন আশা ছিল। সেই লক্ষ্যেই দুই থেকে তিন সপ্তাহের জন্যে এসেছিলাম। যদিও সময় কিছুটা ক্ষেপণ হয়ে গেছে। এরপরও আমি মনে করি, কোন আক্ষেপ নেই আমার। দ্রুততম সময়ের মধ্যে কিছুটা কাজ শুরু করতে চাই। তবে সাথে নিয়ে যাবো গত দুটি সপ্তাহে ঘটে যাওয়া অনেক কিছু ও অভিজ্ঞতা।’

‘বিশেষ করে যেসব সৈনিক ভাইয়েরা আমার সাথে ছিলেন, তারা অনেক ভালোবাসা দিয়েছেন। অনেক সহযোগিতা করেছেন। আপনাদের মমতা কোনদিন ভুলবার নয়। সেই সাথে কুয়েত প্রবাসী কিছু ভাই শেষের দিকে কোয়ারেন্টাইনে যোগ দিয়েছিলেন। তাদের ভালোবাসায় ভরা স্মৃতিগুলোও বাকি জীবন আমার সাথে থাকবে। কখনো যদি দেখা হয়, নিশ্চয়ই ভালো লাগবে; বুকে জড়িয়ে ধরবো আপনাদের। দেখা না হলেও, আপনাদেরকে আমার সবসময় মনে থাকবে।’

‘দেখুন আমি অতি সাধারণ একজন চিকিৎসক। তবে দেশকে, দেশের মানুষকে খুব ভালোবাসি। এসেছিলাম, দুর্যোগের এই সময়টায় কেবলই দেশের মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য। কোন রাজনৈতিক অভিলাষ বা ইচ্ছা আমার ছিল না; নেইও। ফলে যারা তেমনটি ভেবেছিলেন, আশা করছি আপনাদের ভুলটা ভেঙেছে। বাংলাদেশের চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী ও সম্মুখসারির যোদ্ধারা করোনার এই সময়টায় রীতিমতো জীবন বাজি রেখে লড়াই করছেন। তাদের আত্মত্যাগ, এই জাতি সবসময়ই মনে রাখবে। সামনের দিনগুলোতেও তারা এমনভাবে লড়ে যাবেন বলে আমার বিশ্বাস।’

‘আমি এই মুহূর্তে স্বাস্থ্য বিষয়ক ছোট্ট একটি সেটআপ করবো। কারো বিরুদ্ধে আমার কোন অভিযোগ নেই। মায়ের বিরুদ্ধে সন্তানের কোন অভিযোগ থাকে না। আমারো নেই। আবারো দেখা হবে। ভালোবাসা বাংলাদেশ। সবাই ভালো থাকুন। নিরাপদে থাকুন। আপনাদের মঙ্গল হোক।’

ডা. ফেরদৌস খন্দকার নিউইয়র্কের মাউন্ট সিনাই হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ। সেবাদানের উদ্দেশ্যে ৭ জুন বাংলাদেশে আসেন তিনি। এন্টিবডির সনদ থাকার পরেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাকে কোয়ারেন্টাইনে নিয়ে যান।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

4 × 1 =

Back to top button