ভারতে তৈরি করোনার সম্ভাব্য ভ্যাকসিন, মানবদেহে পরীক্ষার অনুমোদন
কোভিড-১৯-এর ভ্যাকসিন তৈরির দৌড়ে যুক্ত হলো ভারতের নাম। ভারতে সরকারি উদ্যোগে তৈরি করোনার সম্ভাব্য প্রতিষেধক ‘কোভ্যাক্সিন’ মানবদেহে পরীক্ষামূলক প্রয়োগ বা ট্রায়াল চালানোর অনুমোদন দিয়েছে ভারতের ওষুধ নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ। ভারতের হায়দরাবাদ ভিত্তিক ভারত বায়োটেক, ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ (আইসিএমআর) ও ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজির (এনআইভি) সমন্বিত উদ্যোগে করোনাভাইরাসের এ সম্ভাব্য প্রতিষেধকটি তৈরি করা হয়েছে।
জানা গেছে, কোভ্যাক্সিনের সব খুটিনাটি দেখেশুনে, প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ের ট্রায়াল চালানোর অনুমতি দিয়েছে ড্রাগ কন্ট্রোলার জেনেরাল অব ইন্ডিয়া। এসব পর্যায়ে চালানো হবে হিউম্যান ট্রায়াল বা মানবদেহে ভ্যাকসিনটি প্রয়োগ করে পরীক্ষা করা হবে। সব ঠিক থাকলে আসন্ন জুলাই থেকেই শুরু হয়ে যাবে পরীক্ষা। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া ও দ্য ওয়াল এ খবর জানিয়েছে।
পোলিও, র্যাবিস, জাপানিজ এনসেফেলাইটিস, জিকা ও চিকুনগুনিয়ার মতো বিভিন্ন রোগের প্রতিষেধক উদ্ভাবনে খ্যাতি রয়েছে ভারত বায়োটেকের।
‘কোভ্যাক্সিন’ তৈরি হওয়ার কথা গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় ঘোষণা করেন ভারত বায়োটেকের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. কৃষ্ণ এল্লা। তিনি বলেন, ‘আমরা কোভিড-১৯ প্রতিরোধ করতে প্রথম দেশজ প্রতিষেধক আবিষ্কার করতে পেরে গর্বিত। কোভ্যাক্সিন তৈরির কাজে আইসিএমআর ও এনআইভি আমাদের সহযোগিতা করেছে। পাশাপাশি মালিকানাগত যে প্রযুক্তি আমাদের আছে, তা এ ব্যাপারে কাজে লাগাতে আমাদের রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট টিম এবং উৎপাদক টিমও অক্লান্ত পরিশ্রম করেছে।’
জানা গেছে, পুনের এনআইভি-তে নভেল করোনাভাইরাসের বিশেষ স্ট্রেইনকে রোগীদের নমুনা থেকে আলাদা করে তা পাঠিয়ে দেওয়া হয় ভারত বায়োটেকে। এরপরই সর্বাধিক জৈব নিরাপত্তায় কোভ্যাক্সিন তৈরির কাজ শুরু হয় হায়দরাবাদের জেনোম ভ্যালিতে। ভারত বায়োটেকের হাইকনটেইনমেন্ট ব্যবস্থার মধ্যেই পুরো কাজ হয়। প্রাণিরদেহে প্রয়োগ করে ভাইরাসের কার্যকারিতা পরীক্ষা করার পর্ব এরই মধ্যে শেষ হয়ে গেছে।
এরপর কোভ্যাক্সিনের প্রি-ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল এবং নিরাপত্তা ও প্রতিরোধ ক্ষমতা সংক্রান্ত ট্রায়ালের ফলাফল সরকারকে জমা দেয় বায়োটেক। এরপরই ভারতের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন সেন্ট্রাল ড্রাগ স্ট্যান্ডার্ড কন্ট্রোল অর্গানাইজেশন (ডিসিজিআই) মানবদেহে প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ের পরীক্ষা চালানোর অনুমতি দিয়েছে।
চলতি বছরের ৯ মে ভারত বায়োটেকের এ গবেষণার কথা জানিয়েছিল আইসিএমআর।
তবে কোভ্যাক্সিন সংক্রান্ত পরবর্তী পদক্ষেপগুলোতে কতটা সময় লাগতে পারে, কিংবা ভ্যাকসিনটি কবে নাগাদ বাজারে আসতে পারে, সে বিষয়ে এখনো কিছু জানা যায়নি। কেউ কেউ আবার মানবদেহে কোভ্যাক্সিন পরীক্ষা পর্বের নেতিবাচক ফলাফলেরও আশঙ্কা করছেন। তবে ভারত বায়োটেক এরই মধ্যে যে গতিতে কাজ করেছে, তাতে সব ঠিক থাকলে পরবর্তী পর্যায়ের পরীক্ষাগুলো সম্পন্ন করতে খুব বেশি সময় লাগার কথা নয়।
প্রথম দফায় মানবদেহে প্রয়োগ করে দেখা হবে, কোভ্যাক্সিন কেমন আচরণ করছে। ভ্যাকসিনটি প্রয়োগের ফলে কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ঘটছে কি না। ঘটলে ওষুধের উপাদানে পরিবর্তন আনা হবে। এরপর দ্বিতীয় দফায় কোভ্যাক্সিন মানবদেহে কী পরিমাণে প্রয়োগ করতে হবে, তা নির্ধারণ করা হবে। সবমিলিয়ে চার-পাঁচ মাস লাগতে পারে কোভ্যাক্সিনের সব রকম পরীক্ষা শেষ হতে।