Lead Newsশিল্প ও বাণিজ্য

করোনা সংকটেও আবাসন খাতে আশার আলো

মহামারি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পরিস্থিতিতে সারাবিশ্বের মতো দেশেও ব্যবসা-বাণিজ্যে সংকট সৃষ্টি হয়েছে। তবে আবাসন খাত সেই সংকট থেকে বের হয়ে আসতে পারবে বলে আশা প্রকাশ করছেন এ খাতের ব্যবসায়ীরা। কারণ এক্ষেত্রে সাহস জোগাচ্ছে সরকারের নানা উদ্যোগ।

এরমধ্যে বাজেটে কালো টাকা সাদা করার সুয়োগ দেয়ায় নতুন আশার আলো দেখছেন এ খাতে সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা। এছাড়া বাজেটে কর্পোরেট কর হার আড়াই শতাংশ কমানো হয়েছে। এর একটা বাড়তি সুবিধা পাবে আবাসন খাত। এর বাইরে কাঁচামালের ওপর এক শতাংশ অগ্রিম কর কমানো হয়েছে। এর ফলে নির্মাণসামগ্রীর মূল্য কমারও সম্ভাবনা রয়েছে। সব মিলিয়ে আবাসন খাতের উৎপাদন খরচও কমে আসবে। 

এদিকে আবাসন খাতকে চাঙ্গা করতে আবার বাসা-বাড়িতে গ্যস সংযোগ দেয়ার চিন্তা-ভাবনা করছে সরকার। এ বছরের মধ্যেই এ গ্যাস সংযোগ দেয়া হবে বলে জানা গেছে।

২০২০-২১ অর্থবছরে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দিয়ে গতকাল মঙ্গলবার বাজেট পাস হয়। এতে আবাসন খাত চাঙ্গা হবে বলে ব্যবসায়ীরা মনে করছেন।

আবাসন খাতের নেতারা বলছেন, বিনা প্রশ্নে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেয়ায় এবার প্রচুর পরিমাণে আবাসন খাতে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগ হবে। এর ফলে কারোনাভাইরাসের কারণে বিপর্যস্ত এই খাতটি আবারো চাঙা হবে।

এ প্রসঙ্গে আবাসন ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশনের (রিহ্যাব) সভাপতি আলমগীর শামসুল আলামিন বলেন, অপ্রদর্শিত আয়ের অর্থ বিনাশর্তে বিনিয়োগ করার সুযোগ দেয়ার কারণে আশা করি, করোনার মধ্যেই আবাসন খাত চাঙা হবে। শুধু এই খাত নয়, পুরো অর্থনীতিতে এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।

তিনি বলেন, বিনাশর্তে অপ্রদর্শিত আয় বিনিয়োগের সুযোগ থাকায় প্রচুর অর্থ আমাদের অর্থনীতিতে যুক্ত হবে। অর্থনীতিকে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য সরকারের এই প্রচেষ্টাকে সাধুবাদ জানাই।

রিহ্যাব সভাপতি বলেন, আবাসন খাত চাঙা হওয়ার সঙ্গে জড়িত রড, সিমেন্ট, ইট, বালুসহ ২১১টি নির্মাণ উপখাতের কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি পাবে। এতে করে সরকারের রাজস্ব আদায় বাড়বে।

এ প্রসঙ্গে রিহ্যাবের সহ-সভাপতি লিয়াকত আলী ভূঁইয়া বলেন, করোনা কবে যাবে কেউ বলতে পারছে না। কিন্তু মানুষের জীবন ও জীবিকার প্রয়োজনে অর্থনীতিকে সচল রাখতে বিনা প্রশ্নে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ দেয়া হয়েছে। আশা করছি, আবাসন খাতে এর সুফল মিলবে।

 তিনি বলেন, করোনার মাঝেও আবাসন খাত ঘুরে দাঁড়াতে পারবে। আর এর সুফল পুরো অর্থনীতিতে আসবে।

তিনি আরো উল্লেখ করেন, দীর্ঘদিন ধরে আমরা বিনা প্রশ্নে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ প্রদানের দাবি জানিয়ে আসছিলাম। প্রায় একযুগ পর সুযোগটি এসেছে।

প্রসঙ্গত, এতদিন শুধু ফ্ল্যাট কেনার ক্ষেত্রে এই সুযোগ ছিল। এখন নির্দিষ্ট হারে কর দিয়ে জমি কেনাতেও এই সুযোগ দেয়া হয়েছে। শুধু তাই নয়, এলাকাভিত্তিক নির্দিষ্ট হারে কর দিয়ে কালো টাকা সাদা করা যাবে। এমনকি অপ্রদর্শিত অর্থে আগের কেনা সম্পদের বিপরীতেও নির্ধারিত হারে কর দিয়ে যেকোনও পরিমাণ টাকা সাদা করা যাবে। এ ব্যাপারে কোনও প্রশ্ন করবে না আয়কর বিভাগ। শুধু আয়কর বিভাগ নয়, প্রশ্ন করবে না দুদকও।

এছাড়া বাজেটে কর্পোরেট কর হার আড়াই শতাংশ কমানো হয়েছে। এর একটা বাড়তি সুবিধা পাবে আবাসন খাত। এর বাইরে কাঁচামালের ওপর এক শতাংশ অগ্রিম কর কমানো হয়েছে। এর ফলে নির্মাণসামগ্রীর মূল্য কমারও সম্ভাবনা রয়েছে। সব মিলিয়ে আবাসন খাতের উৎপাদন খরচও কমে আসবে। পাশাপাশি করোনার কারণে মুখ থুবড়ে পড়া অর্থনীতি কিছুটা চাঙা হবে। একইসঙ্গে খাতটির সঙ্গে জড়িত ৩৫ লাখ শ্রমিক-কর্মচারীর একটা অংশের বেকার হওয়ার আশঙ্কা কাটবে। উদ্যোক্তাদের মধ্যে যে হতাশা তৈরি হয়েছিল, তাও দূর হবে।

আবাসন খাতের ব্যবসায়ীরা বলছেন, বর্তমানে প্রায় সব ফ্ল্যাট প্রকল্পের নির্মাণ কাজ বন্ধ রয়েছে। নতুন ফ্ল্যাটের বুকিং নেই। ক্রেতারা বুকিং দেয়া ফ্ল্যাটের কিস্তি দিচ্ছেন না। 

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল গত ১১ জুন জাতীয় সংসদে ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য বাজেটে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দিয়েছেন। এর ফলে ঢাকার বাইরে যেকোনও সিটি কর্পোরেশন এলাকায় জমি কিনলে প্রতি বর্গমিটারে ৫ হাজার টাকা কর দিয়ে কালো টাকা সাদা করা যাবে। আর রাজধানীর গুলশান, বনানী, বারিধারা, মতিঝিল ও দিলকুশা বাণিজ্যিক এলাকায় জমি কিনলে প্রতি বর্গমিটারে ২০ হাজার টাকা কর দিতে হবে। ধানমন্ডি, প্রতিরক্ষা কর্মকর্তাদের হাউজিং সোসাইটি (ডিওএইচএস), মহাখালী, লালমাটিয়া হাউজিং সোসাইটি, উত্তরা মডেল টাউন, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা, ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট, কাওরান বাজার, বিজয়নগর, নিকুঞ্জ, ওয়ারী ও সেগুনবাগিচা এবং চট্টগ্রামে খুলশী, আগ্রাবাদ, নাসিরাবাদে জমি কিনলে প্রতি বর্গমিটারে কর দিতে হবে ১৫ হাজার ৫০০ টাকা।

অন্যদিকে, ফ্ল্যাট কিনে কালো টাকা সাদা করতে চাইলে ঢাকার গুলশান, বনানী, বারিধারা, মতিঝিল ও দিলকুশা বাণিজ্যিক এলাকায় প্রতি বর্গমিটারে ৪ থেকে ৬ হাজার টাকা কর দিতে হবে। ধানমন্ডি, প্রতিরক্ষা কর্মকর্তাদের হাউজিং সোসাইটি (ডিওএইচএস), মহাখালী, লালমাটিয়া হাউজিং সোসাইটি, উত্তরা মডেল টাউন, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা, ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট, কাওরান বাজার, বিজয়নগর, নিকুঞ্জ, ওয়ারী, সেগুনবাগিচা ও চট্টগ্রামের খুলশী, আগ্রাবাদ, নাসিরাবাদে প্রতি বর্গমিটারে ৩ হাজার থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকা কর দিয়ে কালো টাকা সাদা করা যাবে। এসব এলাকার বাইরে যেকোনও সিটি কর্পোরেশনে প্রতি বর্গমিটারে ৭০০ থেকে এক হাজার ৩০০ টাকা কর দিয়ে কালো টাকা সাদা করা যাবে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

20 + 8 =

Back to top button