Lead Newsপ্রকৃতি ও জলবায়ূ

ঘূর্ণিঝড় বুলবুলকে দুর্বল করে দিয়েছে সুন্দরবন

নভেম্বর মাস প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ের অভিজ্ঞতা বাংলাদেশের কাছে নতুন না। সিডর কিংবা ১৯৭০ সালের ভয়ঙ্কর ঘূর্ণিঝড় এ মাসেই বঙ্গোপসাগর থেকে সৃষ্টি হয়ে ছোবল মারে বাংলাদেশে। ঘূর্ণিঝড় বুলবুল ঠিক তেমনি।

প্রায় দিন দশেক আগে উত্তর আন্দামান সাগরে একটি লঘুচাপের সৃষ্টি হয়। তখন সাগর ছিল উত্তপ্ত। আর লঘুচাপটি এই উত্তপ্ত সাগর থেকে প্রয়োজনীয় উপাদান পেয়ে নিজেকে শক্তিশালী করে নেয়। ৫ নভেম্বর লঘুচাপ পরিণত হয় নিম্নচাপে। সেখান থেকেই শুরু হয় উপকূলের দিকে এগিয়ে চলা। মাত্র দুদিনের মধ্যে নিম্নচাপটি বঙ্গোপসাগরে চলে আসে। সেখানে পরিণত হয় ঘূর্ণিঝড়ে।

সাগর থেকে যতই উত্তর–পশ্চিম দিকে এগোচ্ছিল, ততই যেন বুলবুল নামের এই ঘূর্ণিঝড় শক্তিশালী হয়ে উঠছিল। প্রথমে আবহাওয়াবিদেরা মনে করেছিলেন, ঘূর্ণিঝড় বুলবুল হয়তো ভারতের ওডিশা রাজ্য হয়ে পশ্চিমবঙ্গে আঘাত হানবে। কিন্তু বুলবুল সেই পথে এগোয়নি। উত্তর-পশ্চিম দিকে এগিয়ে যেতে যেতে বুলবুল কিছুটা ডানদিকে সরে যায়। আর তখন থেকেই লক্ষণ দেখা যায়, ঘূর্ণিঝড়টি বাংলাদেশে ছোবল মারবে। বুলবুল এগিয়ে চলতে চলতে বাতাসের গতি উঠে যায় ১৫০ কিলোমিটার। এতে করে আবহাওয়া বিশেষজ্ঞদের ধারণা, বুলবুল সিডরের মতো অতটা শক্তিশালী না হলেও খুব একটা শান্ত থাকবে না। তাণ্ডব চালাবে উপকূলীয় এলাকায়।

কিন্তু তেড়েফুড়ে আসা বুলবুল প্রথম ধাক্কাটা খায় ভারতের পশ্চিমবঙ্গে আঘাত হেনে। তবে আবহাওয়াবিদ আবদুল মান্নান মনে করেন, পশ্চিমবঙ্গ উপকূল ঘেঁষে আঘাত হানার কারণে দুর্বল কিছুটা হয়েছিল। কিন্তু বুলবুলকে বেশি দুর্বল করে দেয় সুন্দরবন।

আজ রোববার সকালে আবহাওয়াবিদ আবদুল মান্নান প্রথম আলোকে বলেন, পশ্চিমবঙ্গের উপকূল ঘেঁষে প্রথম আঘাত হানার পর বুলবুল প্রায় ১৫০ কিলোমিটার বেগে বাংলাদেশের দিকে এগিয়ে আসছিল। কিন্তু বুলবুলের পূর্ব এবং পশ্চিম দুদিকেই তিন কোনার মতো অবস্থানে ছিল সুন্দরবন। সুন্দরবনের গাছপালার কারণে বুলবুল বেশ দুর্বল হয়ে যায়।

আবদুল মান্নান বলেন, উত্তর আন্দামান সাগরে যখন এই নিম্নচাপের সৃষ্টি তখন সেখানকার সাগর ছিল বেশ উত্তপ্ত। আর এই উত্তপ্ত থাকার কারণেই নিম্নচাপ থেকে খুব দ্রুতই ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়। ঘূর্ণিঝড়টি যদি সরাসরি সাগর থেকে বাংলাদেশ উপকূলে আঘাত হানত, তাহলে সিডরের মতো না হলেও এর কারণে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হতে পারত। কিন্তু এটি থেকে রক্ষা পাওয়া গেছে।

এদিকে আজ সকালে আবহাওয়া অধিদপ্তরে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক শামসুদ্দীন আহমেদ বলেন, বুলবুল প্রথম আঘাত হানে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে। আঘাতের কারণে এটি দুর্বল হয়ে যায়।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বুলবুল বাংলাদেশে আঘাত হানার সময় বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১১০ থেকে ১৩০ কিলোমিটার পর্যন্ত। তবে অল্প সময়ের মধ্যে এই গতি ৮০ কিলোমিটারের মধ্যে নেমে আসে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

three × two =

Back to top button