ভাইরাল

৫৮ বছরের পুরনো খবর যে কারণে ভাইরাল

লাদাখের গালওয়ান উপত্যকা ও সংলগ্ন এলাকায় চীনা বাহিনী ‘ডিসএনগেজমেন্ট’ বা সৈন্য প্রত্যাহারের প্রক্রিয়া শুরু করলেও ভারত এখনো তাতে পুরোপুরি আশ্বস্ত হতে পারছে না এবং পরিস্থিতির ওপর সতর্ক নজর রাখছে।

পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ১৯৬২ সালের জুলাই মাসেও গালওয়ান থেকে প্রাথমিকভাবে পিছু হঠে যেভাবে মাস তিনেক পরেই চীন পুরোদস্তুর যুদ্ধ শুরু করেছিল – ইতিহাসের সেই অভিজ্ঞতাই ভারতকে এবার অনেক সাবধানী করে তুলেছে।

ওই বছরের জুলাই মাসের একটি ভারতীয় পত্রিকার শিরোনামও ইতোমধ্যে সে দেশে ভাইরাল হয়ে উঠেছে – যা এখন ভারতের জন্য সতর্কবাণীর কাজ করছে।

ভারতের সাবেক সেনা কর্মকর্তারাও বলছেন, সীমান্তে সেনা মোতায়েনের ক্ষেত্রে চীনকে বিশ্বাস করা আসলে প্রায় ‘অসম্ভব’।

৬২ সালের ১৫ জুলাই, রোববারের ‘দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়া’ পত্রিকাতে বিরাট শিরোনাম হয়েছিল ‘গালওয়ান পোস্ট থেকে চীনের সৈন্য প্রত্যাহার’।

দিল্লির হুঁশিয়ারিতেই এটা সম্ভব হয়েছে, পত্রিকাতে বলা হয়েছিল সে কথাও। ভূয়সী প্রশংসা করা হয়েছিল ভারতীয় সেনাদের সাহসিকতারও।

কিন্তু এর ঠিক ৯৬ দিনের মাথায় সে বছরেরই ২০ অক্টোবর চীন-ভারতের পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়, আর তারও সূচনা হয় সেই গালওয়ান থেকেই।

এবারেও চীন ও ভারতের মধ্যে বেশ কয়েক দফা আলোচনার পর অবশেষে গালওয়ান ও পার্শ্ববর্তী গোগরা ও হট স্প্রিং এলাকা থেকে চীনা সৈন্য অবশেষে পিছু হঠতে শুরু করেছে ঠিকই, কিন্তু ৬২-র সেই অভিজ্ঞতাই ভারতকে কিছুতেই নিশ্চিন্ত থাকতে দিচ্ছে না।

দিল্লিতে স্ট্র্যাটেজিক থিঙ্কট্যাঙ্ক ভিআইএফের সিনিয়র ফেলো শ্রীরাধা দত্ত বলেন, “এবারেও আমরা বারবার দেখছি গালওয়ানে ডিসএনগেজমেন্টের ব্যাপারে সমঝোতা হওয়ার পরও চীন নতুন করে সামরিক স্থাপনা তৈরি করছে, আবার সেনা রিএনফোর্সমেন্ট নিয়ে আসছে।”

“ফলে যে শর্তে সমঝোতা হয়েছে সেটা চীন মেনে চলবে এমন কোনো ভরসা কিন্তু পাওয়া যায়নি। গালওয়ানে হয়তো এক পা পিছিয়েছে, কিন্তু প্যাংগং সো-তে আবার দু-পা এগিয়ে এসেছে।”

ঠিক সেই কারণেই টাইমস আব ইন্ডিয়ার সেই ৫৮ বছরের পুরনো প্রথম পাতাটি ভারতে এখন আবার ভাইরাল হয়ে উঠেছে, দিল্লিকে মনে করিয়ে দিচ্ছে ইতিহাসের শিক্ষা।

দিল্লিতে পর্যবেক্ষকরা একথাও বলছেন যে আসন্ন শীতে চীন আবার পূর্ণশক্তিতে ফিরে আসতে পারে।

কারণ ৬২-র যুদ্ধে ভারতের শোচনীয় পরাজয়ের একটা বড় কারণ ছিল যুদ্ধটা হয়েছিল শীতে, ভারতীয় সৈন্যরা হিমাঙ্কেরও ২০-৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস নীচের তাপমাত্রায় লড়ার জন্য প্রস্তুতই ছিল না।

সে অবস্থা এখন অবশ্য অনেকটাই পাল্টেছে বলে শ্রীরাধা দত্তের দাবি।

তার কথায়, “ওই প্রচন্ড শীতে এই সীমান্ত পোস্টগুলো ধরে রাখা খুবই কঠিন কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু তার পরেও কিছু করার নেই – ভারতের সেনাকে ওখানে কমব্যাট-রেডি বা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত রাখতেই হবে।”

“শীতে গালওয়ানে রিসোর্স বা ট্রুপ মোবিলাইজ করা দুপক্ষের জন্যই কঠিন। কিন্তু তারপরও এমন হতেই পারে যে তুলনামূলকভাবে এগিয়ে থাকতে পারে, এই বিবেচনায় চীন হয়তো শীতের জন্যই অপেক্ষা করছে,” বলেন শ্রীরাধা দত্ত।

শুধু ৬২ নয়, তার ১৩ বছর পরও অরুণাচল সীমান্তে চীনা বাহিনী অতর্কিতে ভারতীয় ভূখন্ডের অনেকটা ভেতরে ঢুকে আসাম রাইফেলসের ওপর হামলা চালিয়েছিল।

তখন সেখানে মোতায়েন ভারতীয় সেনা ব্রিগেডের দায়িত্বে ছিলেন মেজর জেনারেল দীপঙ্কর ব্যানার্জি।

তিনি জানাচ্ছেন, “এই যে এখন বলা হয় গালওয়ানের আগে চীনের সঙ্গে শেষবারের মতো প্রাণঘাতী সংঘর্ষ হয়েছিল ৪৫ বছর আগে অরুণাচলে, আমি তখন সেখানে সেলা পাসে ব্রিগেড মেজর হিসেবে দায়িত্বে ছিলাম।

“হঠাৎ খবর এল যে সীমান্তের কাছে একটা অ্যাকশন হয়েছে, ফাইভ আসাম রাইফেলসের একটা টহলদার বাহিনীর কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। আমি নির্দেশ পেলাম তাদের খবর নিতে হবে, খুঁজে বের করতে হবে।”

“তখন নিয়মিত সেনারা নয়, সীমান্তে টহল দিত আধা-সামরিক আসাম রাইফেলসই। আমি সঙ্গে সঙ্গে আমার রেজিমেন্টেরই কমান্ডিং অফিসার, হিমাচলের লোক বলীরাম শাহ-কে এক কোম্পানি সেনা সমেত তুলুং লা-র দিকে পাঠালাম।”

সাবেক এই সেনা কর্মকর্তা আরো বলেন, ওই তুলুং লা-তেই চীনের সেনাবাহিনী বিনা প্ররোচনায় সেই অভিযান চালায় – আসাম রাইফেলসের টহলদারির বাহিনীর গোর্খা সেনাদের বেশির ভাগই তাতে মারা যান।

“পরে আমরা দেখতে পাই চীনা বাহিনী ভারতের ভেতরে প্রায় চার-পাঁচ কিলোমিটার ভেতরে ঢুকে ওই অ্যামবুশ চালিয়েছিল। অথচ তখন পিস-টাইম (শান্তিকালীন সময়), আমরাও ছিলাম ডিফেন্সিভ পোজিশনে,” বলেন দীপঙ্কর ব্যানার্জি।

ফলে, ’৬২-র গালওয়ান বা ‘৭৫-র তুলুং লা-তে চীনকে নিয়ে ভারতের যে অভিজ্ঞতা, সেই পুরনো ইতিহাসের ভিত্তিতেই এই ২০২০ সালের গ্রীষ্মেও ভারতীয় সেনাবাহিনী মনে করছে চীন পুরোপুরি সেনা সরিয়ে না-নেওয়া পর্যন্ত এবং তারপরেও অন্তত বেশ কয়েক মাস না-দেখে তাদের ভরসা করা যাবে না। বিবিসি

আরও শুনুনঃ কর্পোরেট নিউজ ভাইরাল নিউজ

Viral News Bd, Viral News Bd, Viral News Bd

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

three + 12 =

Back to top button