Lead Newsদেশবাংলা

সাগরে মাছধরায় নিষেধাজ্ঞাঃ কর্মহীন ৭০ ভাগ জেলে, খাদ্যসংকটে পরিবার

সরকারি সহায়তার বাইরে ৪০ শতাংশ জেলে

মৎস্য আহরণে বঙ্গোপসাগরে চলমান ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞার কারণে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন প্রায় ৭০ ভাগ জেলে। আয় না থাকায় এবং সরকারি সহযোগিতাপ্রাপ্তদের তালিকায় নাম না থাকায় উপকূলের প্রায় অর্ধেক জেলে পরিবার তিনবেলা ঠিকমতো খাবার সংগ্রহ করতে পারছেন না।

বেসরকারি সংস্থা কোস্ট ট্রাস্টের সাম্প্রতিক এক গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে।

উপকূলীয় অঞ্চলের কক্সবাজার, লক্ষ্মীপুর, ভোলা, পটুয়াখালী, খুলনা ও বাগেরহাট জেলার মোট ২৮৪টি জেলে পরিবার থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে গবেষণা প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে।

এতে উল্লেখ করা হয়, স্বাভাবিক অবস্থায় সবচেয়ে বেশি ৪২.৪ শতাংশ জেলে পরিবারেরই মাসিক গড় আয় ৬ থেকে ১০ হাজার টাকা থাকলেও নিষেধাজ্ঞা চলাকালীন একেবারেই কোনো আয় নেই ৬০.৮ শতাংশ পরিবারের। ফলে আগে যেখানে তিনবেলা খেতেন ৯৫.৮ শতাংশ সেখানে এই সময়ে তিনবেলা খেতে পারছেন ৫১ শতাংশ পরিবার।

গবেষণায় আরো বলা হয়েছে, নিষেধাজ্ঞা চলাকালীন জেলে পরিবারগুলোকে সহযোগিতা করতে সরকার ৪৩ কেজি করে চাল দিচ্ছে। কিন্তু সহায়তাপ্রাপ্তদের মধ্যে এই সহায়তা এখনো পাননি ৩৪.২ শতাংশ পরিবার। যারা পেয়েছেন তাদের অর্ধেক আবার সেটা পেয়েছেন নিষেধাজ্ঞা শুরুর প্রায় এক মাস পরে।

অন্যদিকে ৪০ শতাংশ জেলের নাম এই সরকারি সাহায্যপ্রাপ্তদের তালিকায় ওঠেনি, ফলে তারা কিছুই পাননি। ৬৭.৫ শতাংশ বলেছেন যে এই চাল তাদের সংসার চালানোর জন্য যথেষ্ট নয়, কারণ সংসারের অন্যান্য খরচের জন্য নগদ কোনো সহায়তা নেই এবং ৯৬.১ শতাংশ জেলেই এ সময়ে সামাজিক নিরাপত্তা খাতের আওতায় আর কোনো ধরনের সহায়তা পাননি।

ফলে সংসারের প্রয়োজনীয় খরচ মেটাতে সুদের ওপর ধার করেছেন ৭৯.৯ শতাংশ জেলে। আগাম শ্রম বিক্রি করেছেন ৪২.১ শতাংশ। মহাজনের কাছে চড়া সুদে ঋণ করেছেন ৪৫.৭ শতাংশ। গবেষণায় আরো দেখা গেছে, নিষেধাজ্ঞা চলাকালীন সময়ে ৫১.৮ শতাংশ জেলে পরিবারে পারিবারিক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে এবং ৭২.৬ শতাংশের সংসারে অশান্তির সৃষ্টি হচ্ছে।

জানা গেছে, সমুদ্রে মত্স্য আহরণ ছাড়া ৯৫.৪ শতাংশ জেলেরই বিকল্প কোনো আয়ের উত্স নেই। তাই গবেষণা প্রতিবেদনে নিষেধাজ্ঞা চলাকালীন জেলেদের জন্য বিকল্প আয় নিশ্চিত করার সুপারিশ করা হয়। এছাড়া নগদ সহায়তা, সহজ শর্তে ঋণ বা আর্থিক সাহায্য দেওয়ার সুপারিশ করা হয়। কোস্ট ট্রাস্টের নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, মাছ ধরা নিষিদ্ধকালীন সময়গুলোতে জেলেদের বেশির ভাগই মানবেতর জীবন যাপন করে। তাই শুধু চাল সাহায্য যথেষ্ট নয়, কারণ সংসারের অন্যান্য খরচের জন্য নগদ সহায়তা প্রয়োজন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

one × 1 =

Back to top button