ভ্রমন

বিশ্বের বিস্ময় টাঙ্গুয়ার হাওর

বাংলাদেশে সুবিশাল গামলা আকৃতির অগভীর জলাভূমিকে হাওর বলা হয়। যা প্রতিবছর বর্ষার পানিতে প্লাবিত হয়ে ঢেউহীন সাগরের আকার ধারণ করে। বছরে সাত মাস হাওরগুলো পানিতে ডুবে থাকে। আবার শীত ও গ্রীষ্মে হাওরগুলিকে মনে হয়ে সীমাহীন প্রান্তর। পানি কমে গেলে হাওরের মধ্যে থাকা বিলগুলোর পার জেগে ওঠে। যেগুলোকে স্থানীয় মানুষ বলে কান্দা। কান্দা দিয়ে ঘেরা বিলগুলোর ভেতর জমে থাকে পানি। তাতে থাকে মাছ। শুকিয়ে যাওয়া জমিতে গজিয়ে ওঠে সবুজ ঘাস। সুবিশাল প্রান্তর হয়ে ওঠে গবাদি পশুর চারণভূমি। জেগে ওঠে হাওরের বুকে লুকিয়ে থাকা গ্রামগুলো। প্লাবনের ফলে জমা  উর্বর পলিমাটির বুকে কৃষকরা ফলান রবিশস্য ও বোরো ধান। 

বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে দেখতে পাওয়া যায় সুবিশাল কিছু হাওর। কাওয়া দীঘি হাওর, ছাইয়ার হাওর, টাঙ্গুয়ার হাওর, ডাকের হাওর, তল্লার হাওর, নলুয়ার হাওর, পচাশোল হাওর, মইয়ার হাওর, মাকার হাওর, মাহমুদপুর হাওর, রায়ের গাঁও হাওর, সুরমা বাউলার হাওর, হাকালুকি হাওরের মতো আরো কত হাওর। এসবের মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত হাওর হলো টাঙ্গুয়ার হাওর।

সুনামগঞ্জ জেলার ধর্মপাশা ও তাহিরপুর উপজেলার মাঝে, প্রায় ১০০ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে ঘন নীল জলরাশি নিয়ে শুয়ে আছে টাঙ্গুয়ার হাওর। আসলে এটি ৫১টি ছোট হাওরের সমন্বয়ে তৈরি বিস্তীর্ণ এক জলাভূমি।

মূল হাওর অবশ্য আছে ২৮ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে। বাকি অংশে আছে কিছু গ্রাম ও কৃষিজমি। প্লাবনের পানিতে গ্রামগুলো বিচ্ছিন্ন দ্বীপে পরিণত হয়।

স্থানীয় মানুষেরা টাঙ্গুয়ার হাওরকে বলেন নয়কুড়ি কান্দার ছয়কুড়ি বিল। যার গায়ের কাছে হাতছানি দেয় মেঘালয়ের পাহাড়।

বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মিষ্টি জলের জলাভূমি এই টাঙ্গুয়ার হাওর। যে হাওরে মেঘালয় পাহাড় থেকে নেমে এসেছে  ত্রিশটিরও বেশি ঝরনা।

জীববৈচিত্র্যে ভরপুর টাঙ্গুয়ার হাওর। প্রায় ১৪০ প্রজাতির মাছ, ১২ প্রজাতির ব্যাঙ, ১৫০ প্রজাতির বেশি সরীসৃপ ও ২০৮ প্রজাতির পাখির আবাস এই টাঙ্গুয়ার হাওর। শীতকালে সুদূর সাইবেরিয়া থেকে টাঙ্গুয়ার হাওরে উড়ে আসে প্রায় ২৫০ প্রজাতির পরিযায়ী পাখি।

টাঙ্গুয়ার হাওরের মধ্যে আধডোবা গাছেদের মধ্যে রয়েছে আছে শাপলা, গুইজ্জাকাঁটা, উকল, হেলেঞ্চা, বনতুলসী, নলখাগড়া, বল্লুয়া, চাল্লিয়া, সিংড়া, শালুক, হিজল, করচ, বরুণ, পানিফল ইত্যাদি।

টাঙ্গুয়ার হাওর বেড়ানোর আদর্শ সময় বর্ষাকাল। কারণ এই সময় টাঙ্গুয়ার হাওর জলে টইটম্বুর থাকে। তবে পাখি দেখতে হলে যেতে হবে শীতকালে।

টাঙ্গুয়ার হাওর যেতে হলে ঢাকা বা সিলেট থেকে যেতে হবে সুনামগঞ্জ। সেখান থেকে অটো করে পৌঁছে যান তাহিরপুর ঘাট। সেখান থেকে আপনাকে যন্ত্রচালিত নৌকা ভাড়া করে যেতে হবে টাঙ্গুয়ার হাওর। নৌকা যতই এগোতে থাকবে, ততই হাওরের পানি কাচের মতো স্বচ্ছ হতে থাকবে। দেখতে পাবেন পানির তলায় মাছেদের খুনসুটি। কাঁকড়াদের গাম্ভীর্যপূর্ণ চলাফেরা।

সারা দিন টাঙ্গুয়ার হাওরের বুকে ঘোরাফেরার পর, হাওরের বুকে নয়নাভিরাম সূর্যাস্ত স্মৃতির পাতায় অক্ষয় হয়ে থাকবে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ten − four =

Back to top button