Lead Newsকরোনাভাইরাসস্বাস্থ্য ও চিকিৎসা

করোনা পজিটিভ শিশুদের শরীরে দেখা দিচ্ছে ‘কাওয়াসাকি’ রোগ

এবার করোনায় আক্রান্ত শিশুদের শরীরে মিলছে নতুন রোগের অস্তিত্ব। ভারতের মুম্বাইয়ের ওয়াদিয়া হাসপাতালে ভর্তি হওয়া প্রায় ১০০ করোনায় আক্রান্ত শিশুর মধ্যে অন্তত ১৮ জনের শরীরে পেডিয়াট্রিক মাল্টিসিস্টেম ইনফ্লেমেটরি সিনড্রোম ধরা পড়েছে।

এই প্রদাহজনিত রোগকে সাধারণভাবে বলা হয়ে থাকে কাওয়াসাকি ডিজিজ। মুম্বাইয়ে এরই মধ্যে এ ধরনের উপসর্গ নিয়ে দুই শিশুর মৃত্যুও হয়েছে।

সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি এক প্রতিবেদনে জানায়, প্রথম দিকে করোনায় শিশুদের আক্রান্ত ও মৃত্যুর ঝুঁকি কম থাকার কথা বলা হলেও এখন শিশুদের জীবনও কাড়ছে। আনুপাতিক হারে কম হলেও শিশুরাও আক্রান্ত হচ্ছে। তাদের বিভিন্ন অঙ্গে প্রদাহসহ বিভিন্ন উপসর্গ দেখা দিচ্ছে, যা করোনা থেকে সৃষ্ট বলে মনে করা হচ্ছে। তেমনই একটি প্রদাহ হলো কাওয়াসাকি ডিজিজ। এ রোগে আক্রান্তদের শরীরে সাধারণত প্রবল জ্বর, প্রদাহ, ত্বকে র‍্যাশ, চোখে লাল ভাব, মাথা ধরা, ডায়রিয়ার মতো উপসর্গ দেখা দেয়। হঠাৎ করে হৃদস্পন্দনও বন্ধ হয়ে যেতে পারে আক্রান্তদের।

জাপানি পেডিয়াট্রিসিয়ান তমিস্কু কাওয়াসাকি প্রথম এই রোগের সন্ধান করেছিলেন বলে একে কাওয়াসাকি ডিজিজ বলা হয়ে থাকে।

গত মে মাসে মার্কিন সম্প্রচারমাধ্যম সিএনএন-এ প্রকাশিত এক বিশ্লেষণে বলা হয়েছিল, নিউইয়র্কে করোনা আক্রান্ত শিশুদের কারো কারো শরীরে এ ধরনের প্রদাহ দেখা গেছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, জুন মাসে মুম্বাইয়ে এই রোগ প্রথম ধরা পড়ে। এছাড়া চেন্নাই, দিল্লি ও জয়পুরেও এই ধরনের রোগ দেখা গেছে।

ওয়াদিয়া শিশু হাসপাতালের পরিচালক ডাক্তার শকুন্তলা প্রভু বলেন, ‘এরই মধ্যে দুই শিশু মারা গেছে। তাদের মধ্যে একজন করোনা ও ক্যানসারে আক্রান্ত ছিল। অন্যজন আমাদের কাছে এসেছিল খুবই আশঙ্কাজনক অবস্থায়। প্রায় দুসপ্তাহ ধরে এই উপসর্গ থাকার পরে আমাদের কাছে তাদের পাঠানো হয়। তাদের ভেন্টিলেশনে দেওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই মৃত্যু হয়। আমরা হাতে বেশি সময় পাইনি। চারজন অবশ্য এরই মধ্যে সুস্থ হয়ে উঠছে। বাকিদেরও ছেড়ে দেওয়া হবে।’

এসআরসিসি শিশু হাসপাতালের পেডিয়াট্রিসিয়ান ও ক্রিটিক্যাল কেয়ার সোসাইটির সেক্রেটারি ডাক্তার অমিশ ভোরা বলেন, ‘এই রোগে আক্রান্ত হলে দুই থেকে তিনদিন জ্বর থাকে। সেইসঙ্গে পেট ব্যথা ও ডায়রিয়া হয়। ১০০ শতাংশ রোগীরই জ্বর থাকে। ৮০ শতাংশ রোগীর ক্ষেত্রে বমি ও ডায়রিয়া দেখা যায়। এই রোগে আক্রান্ত ৬০ শতাংশ শিশুর ক্ষেত্রে চোখে লাল ভাব দেখা যায়। বাকিদের শরীরে র‍্যাশ দেখা যায়। তাই বাবা-মায়েদের উচিত এই দিকে খেয়াল রাখা। এই রকমের উপসর্গ দেখা দিলেই ডাক্তারের কাছে যাওয়া উচিত। আমরা প্রায় প্রতিদিনই এই রোগে আক্রান্ত শিশুর খবর পাচ্ছি। ওয়াদিয়া হাসপাতালে তাদের ভর্তি করা হচ্ছে।’

সাধারণত ৫ বছরের কম বয়সী শিশুরা এই রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে। তবে ভারতে ১০ মাস থেকে ১৫ বছর বয়স পর্যন্ত বাচ্চাদের মধ্যে এই রোগ দেখা যাচ্ছে। এ নিয়ে উদ্বেগে পড়েছে চিকিৎসক মহল। অনেক চিকিৎসক এরই মধ্যে গবেষণা শুরু করেছেন। তাদের যাবতীয় তথ্য তারা ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিকেল রিসার্চ বা আইসিএমআরকে দিয়েছেন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

one × 5 =

Back to top button