Lead Newsজাতীয়

হাটে গরু আর গরু, নেই স্বাস্থ্যবিধি-ক্রেতা!

ত্যাগের মহিমায় ভাস্বর এই ঈদ উদযাপনের প্রধান লক্ষ্য কোরবানি। ধর্মপ্রাণ মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ সাধ ও সাধ্য অনুযায়ী পশু কোরবানি করবেন।  

হাটগুলোতে মানুষ ও কোরবানির পশুতে একাকার হয়ে যায় এসময়। কিন্তু এবারই প্রথম কোবানির ঈদ এসেছে ভিন্ন আবহে।করোনার কারণে কোরবানির ব্যাপারে এখনও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ এক রকম সিদ্ধান্তহীতায় ভুগছেন। ফলে এরই মধ্যে হাটে পর্যাপ্ত পশু উঠলেও ক্রেতা নেই!

এক শ্রেণির মানুষ করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার ভয়ে পশুহাটে যাচ্ছেন না। এক শ্রেণির মানুষ ঈদের দিন কাদের দিয়ে কোরাবানির কাজ করাবেন সেই ভাবনায় সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না। আবার সমাজের বড় একটি বড় অংশ প্রবল ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও শুধু অর্থাভাবেই কোরবানির পশু কিনতে হাটে যেতে পারছেন না। এছাড়া প্রস্তুতির অনেক কথা বলা হলেও মূলত কোরবানির হাটে ন্যূনতম কোনো স্বাস্থ্যবিধি নেই। সব মিলিয়ে কোরবানির পশুর হাটে পর্যাপ্ত গরু থাকলেও এখনও ক্রেতা নেই।

উত্তরাঞ্চলের সবচেয়ে বড় পশুর হাট হচ্ছে- ‘রাজশাহী সিটি হাট’। প্রতিবছর এমন সময় পশুহাটের কেনাবেচা জমজমাট হয়ে ওঠে। কিন্তু এবার ঈদের মাত্র এক সপ্তাহ আগেও সেখানে ব্যস্ততার লেশমাত্র নেই। এখন কোরবানির পশুতে চারিদিক গমগম করলেও জমেনি রাজশাহী সিটি হাটের কেনাবেচা। ঢিলেঢালাভাবেই চলছে কোরবানির পশুর দর-দাম। কেনাবেচার এ অবস্থা থাকলে কোরাবনির জন্য তৈরি গরু হাট থেকে ফিরিয়েই নিয়ে যেতে হবে। আর শেষমেশ পথে বসতে হবে স্থানীয় অনেক খামারিকে। এমন আশঙ্কাই ভর করেছে তাদের মাথায়।

সিটি হাটে আসা পবা উপজেলার পারিলার গ্রামের খামারি মাসুদ রানা বলেন, প্রথম দিকে হাটে গরু কম উঠছিল। কিন্তু ঈদের সময় যত ঘনিয়ে আসছে হাটে গরুর সরবরাহ ততই বাড়ছে। তার মতো অনেকেই জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে গরু নিয়ে আসছেন হাটে। কিন্তু দিন শেষে আবারও ফিরিয়ে নিয়ে যেতে হচ্ছে। প্রতিদিন কিছু মানুষ হাটে এলেও দর-দাম করেই চলে যাচ্ছেন।

এতে কেনাবেচা হচ্ছে খুবই কম। আর রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় কোরবানির সময় কিছু অস্থায়ীভাবে হাট বসে। সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা রাজশসহীর এই সিটিহাট থেকেই পাইকারি দরে কোরবানির পশু কিনে ট্রাকে করে নিয়ে যান। কিন্তু করোনা পরিস্থতিতে এবার তাদের আনাগোনা নেই। ফলে শেষ সময়ে কেনাবেচা না জমে ওঠায় সবদিক থেকেই লোকসানে পড়তে যাচ্ছেন স্থানীয় গরুর খামারি ও ব্যবসায়ীরা। হাটের এই চিত্র বহাল থাকলে তার মতো অনেক খামারিকেই এবার পথে বসতে হবে বলেও জানান মাসুদ রানা।

রাজশাহীর পুঠিয়ার ভাল্লুকগাছি ইউনিয়নের চকপাড়া গ্রামের হোসেন আলী নামের এক খামারি জানান, পরিবহনে করে গরুর নিয়ে আসা, হাটে তোলা, খাওয়ানো ও ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলা- এই পুরো সময়টা জুড়ে তাদের হাড়ভাঙা পরিশ্রম করতে হয়। এসময় মুখে নাকে-মুখে মাস্ক পরে থাকা তাদের জন্য কষ্টসাধ্য। যে কারণে হাটে আসা অধিকাংশ ব্যবসায়ী ও খামারিই নাকে-মুখে মাস্ক ব্যবহার করতে পারছেন না। এছাড়া সব সময় গরুর দড়ি ধরে থাকা, তাকে সামলানো এবং গরুর গোবর তোলাসহ নানান কারণে তারা হাতও পরিচ্ছন্ন রাখা যাচ্ছে না।

এদিকে, কোরবানির পশুর দাম এবার বেজায় চড়া বলে জানাচ্ছেন ক্রেতারা। মহানগরীর শালবাগান এলাকার জসিম উদ্দিন বলেন, গত বছর ছোট গরু ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা, মাঝারি আকৃতির গরু থেকে ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা এবং বড় আকৃতির গরু ৯০ থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকার মধ্যেই বিক্রি হয়েছে। কিন্তু এবার এই গরুগুলো আকৃতি হিসেবে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা করে বেশি দাম চাইছে। করোনা পরিস্থিতির কারণে এমনিতেই অর্থনৈতিক মন্দা চলছে। এই অবস্থায় গরুর দাম বেশি হলে অনেক সাধারণ মানুষই ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও এবার ঈদে পশু কোরবানি দিতে পারবেন না।  

রাজশাহী সিটি হাটের ইজারাদার আতিকুর রহমান বলেন, হাটে এবার দেশি গরুর প্রাধান্যই বেশি। অল্প কিছু ভারতীয় গরু বিভিন্নভাবে এসেছে। কিন্তু বেচাকেনা খুবই খারাপ। মৌসুমের শেষ পর্যায়ে এসেও গরুর হাট জমে ওঠেনি। এই অবস্থায় যারা দেশীয় পদ্ধতিতে খামারে গরু মোটাতাজা করেছেন তারা সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন।

ঈদের মধ্যে গরুগুলো বিক্রি করতে না পারলে অনেকেই ক্ষতির মুখে পড়বেন। তবে শেষ মুহূর্তে কোরবানির পশু কেনাবেচা জমে উঠবে বলেও প্রত্যাশা করেন সিটি হাট ইজারাদার।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

3 + 2 =

Back to top button