দেশবাংলা

বাতিঘর খ্যাত বিদ্যালয়টি এখন শুধুই স্মৃতি

মাদারীপুরে পদ্মা নদীর ভাঙনে নদীগর্ভে বিলীন তিনতলা বিদ্যালয় ভবনটি এলাকাবাসীর কাছে এখন শুধুই স্মৃতি। বৃহস্পতিবার (২৩ জুলাই) বিকেলে নদী গর্ভে হেলে পড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির কিছু অংশ শুক্রবার (২৪ জুলাই) বিকেলেও দেখা গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত ভবনটিকে দেখতে আজও দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ নদীর পাড়ে ভিড় করছেন। এলাকার শিক্ষার বাতিঘর বলে খ্যাত বিদ্যালয়টি নদীগর্ভে চলে যাওয়ায় এলাকাবাসী হতাশ। সন্তানদের লেখাপড়া নিয়ে চিন্তিত তারা। নদী ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে একটি বাজারসহ আরও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা।

মাদারীপুরের শিবচরের বিভিন্ন এলাকায় পদ্মা নদী ও আড়িয়াল খাঁ নদের ভাঙন ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। বৃহস্পতিবার পদ্মা নদীর ভাঙনে শিবচরের চরাঞ্চল বন্দরখোলা ইউনিয়নের তিনতলা বিশিষ্ট এসইএসডিপি মডেল উচ্চ বিদ্যালয় নদীতে বিলীন হয়ে গেছে।

এলাকাবাসী ও বন্যার্তরা জানান, বর্তমানে শিবচরের সাতটি ইউনিয়নে নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙনের শিকার বন্দর খোলার বিদ্যালয়টি এখনও কিছুটা নদীর মাঝে হেলে আছে। পদ্মা তীরবর্তী উপজেলার বন্দরখোলা, কাঁঠালবাড়ী ও চরজানাজাতে নদী ভাঙন ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।

ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে বন্দরখোলা ইউনিয়ন পরিষদ ভবন, কমিউনিটি ক্লিনিক ভবন, কাজির সুরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বাজারসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। বন্দরখোলা ইউনিয়ন পরিষদ ও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্র থেকে ইতোমধ্যে শতাধিক পরিবার, গবাদি পশু ও মালামাল নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। আড়িয়াল খাঁ নদ তীরবর্তী সন্ন্যাসীর চর, শিরুয়াইল, নিলখী ও বহেরাতলা দক্ষিণেও ভাঙন দেখা দিয়েছে। প্লাবিত হয়েছে নিম্নাঞ্চল। এ পর্যন্ত নদীতে বিলীন হয়েছে সাড়ে ৪ শতাধিক ঘরবাড়ি।

বন্দর খোলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. নিজাম বেপারী জানান, ভাঙন প্রতিরোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড গত দুই বছর ধরে জিও ব্যাগ ডাম্পিং করে। তবুও শেষ রক্ষা হলো না। প্রতিদিনই পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। তীব্র স্রোত অব্যাহত থাকায় নদী ভাঙন ব্যাপক আকার ধারণ করেছে।

এসইএসডিপি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণির শিক্ষার্থী রাসেল মিয়া জানায়, আগামী বছর এই বিদ্যালয় থেকে ৩২ জন শিক্ষার্থীর এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়ার কথা ছিল। নদীতে বিদ্যালয়ের ভবনটি ভেঙে যাওয়ায় সবার সমস্যা হবে।

অভিভাবকরা জানান, এই চরের একমাত্র উচ্চ বিদ্যালয়টি নদীগর্ভে চলে গেল। এখন ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। ধারের কাছে কোথাও কোনো স্কুল নেই।

এসইএসডিপি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আফজাল হোসেন জানান, প্রায় চারশ ছেলে-মেয়ের লেখাপড়া অনিশ্চিত হয়ে গেল। পানি নেমে যাওয়ার পরপরই চরের যে কোনো স্থানে একটি বিদ্যালয়টি স্থাপনের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ নুর- ই-আলম চৌধুরীর কাছে জোর দাবি জানান তিনি।

শিবচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ওসি) আসাদুজ্জামান জানান, চরের শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ায় যাতে বিঘ্ন না ঘটে সেদিকে খেয়াল রেখে বন্যার পানি কমলে বিদ্যালয় স্থাপনের ব্যাপারে পদক্ষেপ নেয়া হবে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

thirteen + 10 =

Back to top button