নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে ফুটবল জাদুকর লিওলেন মেসি ফিরলেন, দেখলেন, জয় করলেন। তার একমাত্র গোলে প্রীতি ম্যাচে ব্রাজিলকে ১-০ গোলে হারিয়ে দিয়েছে ‘আলবিসেলেস্তে’রা।
দারুণ পারফরম্যান্সে মেসির অনুপস্থিতিটা গত কয়েক ম্যাচে অবশ্য আর্জেন্টিনাকে টের পেতে দেননি আর্জেন্টাইন তরুণরা। মেসির প্রত্যাবর্তনের ম্যাচে তাই সার্জিও আগুয়েরো, পাউলো দিবালাদের বদলে লিওনেল স্কালোনি আস্থা রেখেছিলেন মার্টিনেজ-ওকাম্পোসদের ওপরই। ব্রাজিলের একাদশেও ছিল চমক, ফিলিপ কুতিনিয়োর বদলে এসি মিলানের তরুণ লুকাস পাকেতাকে নামিয়ে দিয়েছিলেন তিতে। বাজিটা আরেকটু হলেই কাজে দিত তার।
মাঝমাঠে জিওভানি লো সেলসোর পা থেকে বল কেড়ে পাস বাড়ান রবার্তো ফিরমিনোকে। সুযোসন্ধানী পাসে ডিবক্সে গ্যাব্রিয়েল হেসুসকে খুঁজে নেন তিনি। চার্জ করতে গিয়ে হেসুসকে ডিবক্সে ফেলে দেন লিয়ান্দ্রো পারেদেস। পেনাল্টির বাঁশি দেন রেফারি, আদায় করা পেনাল্টি নিতে এগিয়ে আসেন হেসুস। আটালান্টার বিপক্ষে সপ্তাহ দুয়েক আগে ১২ গজ থেকে বল বাইরে মেরেছিলেন ম্যানচেস্টার সিটির হয়ে, এবার ব্রাজিলের জার্সিতে পুনরাবৃত্তি ঘটল একই ঘটনার।
চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের বিপক্ষে ম্যাচের শুরুতেই এমন সুযোগ হাতছাড়া করার চড়া মূল্যই দিতে হয়েছে ব্রাজিলকে। হেসুসকে ফাউল করে প্রতিপক্ষকে পেনাল্টি উপহার দেওয়া পারেদেস এবার শাপমোচন করলেন, দুর্দান্ত পাসে খুঁজে নিলেন মেসিকে । ডানপ্রান্ত দিয়ে ডিবক্সে ঢুকে পড়া মেসিকে ট্যাকেল করতে গিয়ে ফেলে দিলেন অ্যালেক্স সান্দ্রো, এবার পেনাল্টি পেল আর্জেন্টিনা। ১২ গজ থেকে মেসির নেওয়া নিচু পেনাল্টি কিক অবশ্য ফিরিয়ে দিয়েছিলেন অ্যালিসন বেকার, কিন্তু জাতীয় দলে ফেরার ম্যাচে ভাগ্য সহায় ছিল মেসির। ফিরতি বল জালে পাঠিয়ে আর্জেন্টিনা এগিয়ে নেন মেসি। গোলের পর পারেদেসকে ধন্যবাদ জানাতে ভুল করেননি তিনি।
ডি পল-লো সেলসো-পারেদেস, প্রথমার্ধে আর্জেন্টাইন মিডফিল্ডাররা যেন নিজেদের ছাড়িয়ে যাওয়ার মিশনেই নেমেছিলেন। স্কালোনির মিডফিল্ডাররা যতটা উজ্জ্বল ছিলেন, ঠিক ততটাই বিবর্ণ ছিলেন কাসেমিরো-আর্থার। মিডফিল্ডারদের হতাশ করার দিনে প্রায় দ্বিগুণ পজেশন নিয়েও লাভ হয়নি ব্রাজিলের (৬৪-৩৬)। হলুদ কার্ড দেখেছেন কাসেমিরো, পারেদেসদের সামনে পাত্তাই পাননি আর্থার-পাকেতারা। প্রথমার্ধে আর্জেন্টাইনরা অ্যালিসনের গোলে শট নিয়েছিলেন ৫ বার, ফিরমিনোরা এস্তেবান আন্দ্রাদের গোলে শট নিতে পেরেছিলেন মাত্র ১ বার।
দ্বিতীয়ার্ধের প্রথম দশ মিনিটেই গোলের আশায় আর্থার-পাকেতাকে উঠিয়ে কুতিনিয়ো-ফাবিনহোকে নামিয়ে দেন তিতে। তাতে অবশ্য লাভ হয়নি খুব একটা, প্রথমার্ধের মত দ্বিতীয়ার্ধেও আক্রমণে আধিপত্য ধরে রেখেছিলেন পারেদেসরা। স্কালোনির রক্ষণে আগের ম্যাচের মতই দুর্দান্ত ছিলেন জার্মান পেৎজেলা। ফিরমিনোদের পকেটবন্দি করে রেখেছিলেন, আক্রমণেও উঠে এসে ব্রাজিলদুর্গ কাঁপিয়ে দিয়েছিলেন দু’বার।
দ্বিতীয়ার্ধে চেষ্টার কমতি রাখেনি ব্রাজিল, কিন্তু বাকি ৪৫ মিনিটে আন্দ্রাদের গোলে একবারও শট নিতে পারেনি তারা। উল্টো আর্জেন্টিনাকেই মনে হচ্ছিল ভয়ঙ্কর। দ্বিতীয়ার্ধের মাঝামাঝি সময়ে প্রায় ২৫ গজ থেকে ‘ট্রেডমার্ক’ ফ্রি-কিকে আরেকটু হলেই ব্যবধান দ্বিগুণ করতেন মেসি, কিন্তু দুর্দান্ত সেভে দলকে বাঁচিয়েছেন অ্যালিসন। ৭৩ মিনিটে রিয়াল মাদ্রিদের বিস্ময়বালক রদ্রিগো গোজকেও নামিয়ে দিয়েছেন তিতে, কিন্তু পেৎজেলাদের জমাট রক্ষণের সামনে অসহায়ই মনে হয়েছে তাকে।
ম্যাচের শেষদিকে দূরপাল্লার আরেক শটে অ্যালিসনের পরীক্ষা নিয়েছিলেন পারেদেস, কিন্তু এবারও পরাস্ত করতে পারেননি তাকে। শেষ পর্যন্ত আর্জেন্টিনার আর ব্যবধান বাড়ানো হয়নি। আর পুরো ম্যাচে আর্জেন্টিনার গোলে মাত্র ১টি মাত্র একবার শট করা ব্রাজিল আক্রমণে সেভাবে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারে এক মুহুর্তের জন্যও। কোপা জয়ের পরের ৫ ম্যাচে তাই জয়হীনই থাকল তিতের দল। অন্যদিকে সমানসংখ্যক ম্যাচে একবারও হারেনি ‘আলবিসেলেস্তে’রা। রাশিয়া বিশ্বকাপের পর মাত্র দ্বিতীয় ম্যাচ হারল ব্রাজিল, কিন্তু আর্জেন্টাইনদের কাছে এই হার হজম করতে একটু বেশি কষ্টই হয়তো হবে তিতের দল এবং ব্রাজিল সমর্থকের।