করোনায় দেশে ফিরতে পারেননি বৈরুত বিস্ফোরণে নিহত রনি
লেবানান প্রবাসী ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার মাছিহাতা ইউনিয়নের ভাদেশ্বরা গ্রামের তাজুল ইসলামের ছেলে মেহেদী হাসান রনির গত মার্চ মাসে দেশে ফেরার কথা ছিল।
কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে দেশে ফিরতে পারেননি তিনি। বুধবার সকালে রনির মৃত্যুর সংবাদ আসে তার পরিবারের কাছে।
মঙ্গলবার লেবাননে বিস্ফোরণের ঘটনায় মারা গেছেন রনি। একমাত্র উপার্জনক্ষম ছেলেকে হারিয়ে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন বাবা তাজুল ইসলাম। আর মা ইনারা বেগম ছেলের মৃত্যুর সংবাদ পেয়েই বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন।
রনির পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, চার ভাই-বোনের মধ্যে সবার বড় ছিলেন রনি। গ্রামের একটি স্কুলে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। আর্থিকভাবে অসচ্ছল পরিবারের কথা ভেবে রনি বিদেশে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
সুদে পাঁচ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে ২০১৪ সালের ৯ মার্চ লেবাননে পাড়ি জমান রনি। এর মধ্যে বাবা তাজুল ইসলামও বাহরাইন থেকে দেশে ফেরত আসেন। এর ফলে পরিবারের পুরো চাপ পড়ে রনির ওপর।
তবে পরিবারের জন্য হাসিমুখেই কাজ করে যাচ্ছিলেন রনি। লেবাবনের বৈরুতে একটি বিপণিবিতানে পরিচ্ছন্নতাকর্মীর কাজ করতেন তিনি।
মাসে ২০ হাজার টাকা পাঠাতে পারতেন বাড়িতে। কিন্তু এত অল্প বেতনের টাকা দিয়ে ঋণ শোধ করতে পারছিলেন না। একটু বেশি বেতনে কাজ করার জন্য অন্য কোনো দেশে যেতে চেয়েছিলেন রনি। বাড়ির সবাইকে বলেছিলেন অনুমতি দেয়ার জন্য। কিন্তু ঋণের টাকা শোধ না হওয়ায় বাড়ি থেকে অনুমতি মেলেনি।
অভিমান করে পরিবারের কাউকে না জানিয়ে অন্য দেশে চলে যাওয়ার কথাও বলেছিলেন ছোট বোন জেসমিন আক্তার হ্যাপিকে।
রনির বাবা তাজুল ইসলাম জানান, গতকাল দুপুরে সর্বশেষ ছেলে রনির সঙ্গে মুঠোফোনে কথা হয়েছে তার। বাবার সঙ্গে কথা বলে মায়ের সঙ্গে কথা বলেছিলেন। রাতে রনির এক সহকর্মী ফোন করে জানান তিনি অসুস্থ, তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এরপর বুধবার ভোরে আবার ফোন করে জানান রনি মারা গেছেন।
রনির ছোট বোন জেসমিন আক্তার হ্যাপি বলেন, দেশে আসবে বলে দুই ভাগ্নির জন্য চকোলেট ও খেলনা কিনে রেখেছিল। বাড়ির সবার জন্য কেনাকাটা করেছিল। কিন্তু লকডাউনের কারণে দেশে ফিরতে পারছিল না।
হ্যাপি জানায়, গত পহেলা বৈশাখে ভাইয়ের জন্মদিনে মা নিজ হাতে কেক বানিয়ে ছিল। ভিডিও কলে আমরা সেই কেক কেটেছিলাম। এখন আমার ভাইয়ের লাশ চাই।
এ ব্যাপারে মাছিহাতা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আমিনুল হক পাভেল বলেন, ঘটনার পর থেকেই আমি রনির পরিবারের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছি। লাশ আনার জন্য সবধরনের ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।