আলটিমেটাম নয়, মিশা সমঝোতা চান
সম্প্রতি চলচ্চিত্রের ১৮ সংগঠন মিশা সওদাগর ও জায়েদ খানকে বয়কট করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে মিশা-জায়েদ সংবাদ সম্মেলন করে সাত দিনের মধ্যে সম্মানজনক সমাধান না হলে ১৮ সংগঠনের সঙ্গে কোনো শিল্পী কাজ করবেন না বলে ঘোষণা দেন।
গত রোববার সেই আলটিমেটামের সাত দিন পার হয়েছে। তবে শিল্পী সমিতির সেই আলটিমেটাম নিয়ে এখনো কোনো ঘোষণা আসেনি। এ নিয়ে মিশা সওদাগরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, সংঘাত নয়, সিনিয়র শিল্পীদের নিয়ে সমঝোতা চান। শুধু তা-ই নয়, কেউ অন্যায় করলে তাঁকে ছাড় দেওয়া হবে না বলেও জানান তিনি।
মিশা সওদাগর বলেন, ‘করোনার কারণে অনেক দিনই চলচ্চিত্র নির্মাণ বন্ধ ছিল। তবে এখন বেশ কিছু কাজ শুরু হচ্ছে। কিছুদিনের মধ্যে আমি ও শাকিব খান নতুন চলচ্চিত্র শুরু করছি। চলচ্চিত্রে আমাদের যে সংগঠনগুলো রয়েছে, সেগুলো কিন্তু চলচ্চিত্র ও আমাদের পেশাগত উন্নয়নের জন্য। আমাদের নিজেদের মধ্যে কোনো ঝগড়াঝাঁটি বা কোনো বিরোধ নেই। আমাদের মধ্যে যে ভুল বোঝাবুঝি হবে বা হয়েছে, তা আমরা আমাদের চলচ্চিত্রের যাঁরা মুরব্বি আছেন, তাঁদের নিয়ে দূর করে ফেলব।’
মিশা বলেন, ‘আমি সব সময়ই বলি, প্রযোজকেরা হচ্ছেন আমাদের আত্মা, পরিচালকেরা আমাদের মাথা আর শিল্পীরা হচ্ছেন চোখ। অন্য সংগঠন যে রয়েছে, তাঁরা হলেন আমাদের হাত, পা, লিভার, কিডনি। আমরা সবাই মিলেই পরিপূর্ণ মানবদেহ। আমরাই চলচ্চিত্র। আমাদের মাঝে কোনো বিভেদ নেই, ভুল বোঝাবুঝি হলে সেটার সমাধান আমরাই করব। এরই মধ্যে সিনিয়রদের অবগত করা হয়েছে, আশা করি আমাদের মধ্যে সুস্থ সমাধান হয়ে যাবে।’
এ অভিনেতা আরো বলেন, আমি কখনো কোনো অনৈতিক কাজ করিনি, কোনোদিন সমর্থনও করিনি। দীর্ঘ চলচ্চিত্র ক্যারিয়ারে আমার কোনো অপবাদ নেই। যে অন্যায় করেছে, তার প্রতিকার করতে হবে। অনৈতিক কাজকে সমর্থন করব না, তা সে যে-ই হোক। আমার সমিতির কেউ বা আমার কমিটির কেউ হলেও আমি তা প্রশ্রয় দেব না।’
শিল্পীদের সুবিধা কমানোর বিষয়ে মিশা বলেন, ‘আমরা কিন্তু বিষয়টি আগেই মেনে নিয়েছিলাম। কারণ, এর সঙ্গে চলচ্চিত্র নির্মাণ জড়িত। আমাদের কিছু সদস্য কনভেন্সের বিষয়ে দ্বিমত প্রকাশ করেছিল। তবে চলচ্চিত্র নির্মাণের স্বার্থে কোনো বিষয়ে আমাদের একমত হতে সমস্যা নেই।’
চলচ্চিত্রের কোনো সংগঠনকে ছোট করে নিজেকে বড় করা যায় না বলেও মনে করেন মিশা সওদাগর। ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই ধৈর্য নিয়ে সম্মানের সঙ্গে কাজ করছেন। আগামী দিনেও তা অব্যাহত থাকবে বলে জানান তিনি। চলচ্চিত্রের গুরুজনদের নিয়ে অচিরেই সব সমস্যার সমাধান হবে এবং এগিয়ে আসবেন চলচ্চিত্রের সিনিয়র শিল্পী ও কলকুশলীরা, এমনটাই আশা মিশার।
মিশা সওদাগর-জায়েদ খানকে বয়কটের প্রতিবাদে গত ১৯ জুলাই সন্ধ্যায় চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি বিএফডিসির জহির রায়হান কালার ল্যাব অডিটোরিয়ামে সংবাদ সম্মেলন করে। সেখানে চলচ্চিত্রের ১৮ সংগঠনকে সাত দিনের আলটিমেটাম দেন সমিতির সভাপতি মিশা সওদাগর। সম্মানজনক সমাধান না হলে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির কেউ ১৮ সংগঠনের সঙ্গে কাজ করবেন না বলে ঘোষণা দেন মিশা।
ওই দিন সংবাদ সম্মেলনে সাত দিনের আলটিমেটাম দিয়ে মিশা সওদাগর বলেন, ‘কার্যনির্বাহী পরিষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামী সাত দিনের মধ্যে বয়কটের বিষয়ে সম্মানজনক সমাধান না হলে আমরা চলচ্চিত্রের শিল্পী সমিতির সব সদস্য অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতিতে যাব।’ তিনি সবাইকে সঙ্গে নিয়ে চলচ্চিত্রশিল্পকে বাঁচানোর আহ্বানও জানান। এ সময় মিশা সওদাগর ‘স্বার্থবিরোধী’ কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেন।
এর আগে গত ১৫ জুলাই বিএফডিসিতে সংবাদ সম্মেলন করে চলচ্চিত্রের ‘স্বার্থবিরোধী কর্মকাণ্ডে’র অভিযোগে অভিনেতা মিশা সওদাগর ও জায়েদ খানকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বয়কটের ঘোষণা দেয় চলচ্চিত্র-সংশ্লিষ্ট ১৮টি সংগঠন। ঘোষণায় বলা হয়, যদি এ দুই অভিনেতাকে নিয়ে কোনো পরিচালক বা প্রযোজক কাজ করেন, তাহলে তাঁদেরও সদস্যপদ বাতিল করা হবে। এরই প্রতিবাদে গতকাল এফডিসিতে সংবাদ সম্মেলন করে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি।
অন্যদিকে, শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খান ও সভাপতি মিশা সওদাগরের পদত্যাগ চেয়ে রাস্তায় নামেন সদস্যপদ হারানো শিল্পীরা। তাঁদের দাবি, ক্ষমতার অপব্যবহার করে ১৮৪ জনের সদস্যপদ বাতিল করেছেন জায়েদ খান। এই কাজে তাঁকে সহায়তা করেছেন মিশা সওদাগর। তাই এ দুজনের পদত্যাগ চেয়ে একত্র হন তাঁরা।