ধর্ম ও জীবন

মহানবী সা:-এর ব্যতিক্রম ১০ গুণ

আমাদের প্রিয়নবী সা: সব নবীর সেরা। আকাইদে নসফিতে বলা হয়েছে- নবীদের মধ্যে সেরা হজরত মুহাম্মদ সা:। কেননা, আল্লাহ তায়ালা বলেছেন- তোমরাই হলে সর্বোত্তম উম্মত। মানবজাতির কল্যাণের জন্যই তোমাদের উদ্ভব ঘটানো হয়েছে। তোমরা সৎ কাজের নির্দেশ দান করবে ও অন্যায় কাজে বাধা দেবে এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান আনবে। (সূরা আলে ইমরান-১১০।

সর্বোত্তম উম্মত হওয়ার সৌভাগ্য অর্জিত হয়েছে দ্বীনের ক্ষেত্রে পূর্ণতার কারণে। আর দ্বীনের ক্ষেত্রে পূর্ণতা অর্জিত হয়েছে মুসলিমদের নবীর পূর্ণতা তথা শ্রেষ্ঠত্বের কারণে। রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন- আল্লাহ তায়ালা সব নবীর ওপর আমাকে মর্যাদা দিয়েছেন এবং সব উম্মতের ওপর আমার উম্মতকে মর্যাদা দিয়েছেন। (তিরমিজি)।

এ মর্যাদার কারণেই মুসলিম উম্মাহর মধ্যে বিজ্ঞ যারা রয়েছেন তাদের ইজমা ও কিয়াস শরিয়তের উৎস হিসেবে গৃহীত হয়েছে।

রাসূলুল্লাহ সা: আরো বলেছেন- আমি হবো বিচার দিবসে সব মানুষের নেতা (মুসলিম)। তিনি উল্লেখ করেছেন- আমি আদম সন্তানদের নেতা, এতে আমার কোনো অহঙ্কার নেই (মুসলিম, হাদিস নং ৫৯৪০)। এখানে আদম সন্তান বলতে সব মানুষ বোঝানো হয়েছে।

ব্যতিক্রম ১০ গুণ : আল্লাহ তায়ালা তাঁর প্রিয় হাবিবকে নবী রাসূলদের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করার পর ব্যতিক্রমী ১০টি গুণ দান করেছেন। দু’টি হাদিসে এ ১০টি গুণের বর্ণনা রয়েছে। আমিরুল মুমিনিন হজরত আলী রা: থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- মহানবী সা: বলেছেন- আমাকে এমন কিছু বৈশিষ্ট্য প্রদান করা হয়েছে, যা অন্য কোনো নবী-রাসূলকে প্রদান করা হয়নি। আমরা আরজ করলাম, হে আল্লাহর রাসূল! এ বৈশিষ্ট্যগুলো কী কী? তিনি প্রত্যুত্তরে বলেন-

১. মহানবী সা:-এর চেহারা মোবারকে আল্লাহ তায়ালা এমন এক আকর্ষণীয় রূপ দান করেছিলেন, যা দেখে শত্রুরা ভীত-শঙ্কিত হয়ে পড়ত। তাঁকে কিছু করার সাহস পেত না।

২. আমাকে সমগ্র দুনিয়ার চাবি দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ দুনিয়া আমার করতলগত এবং আমার অধীন হবে। এ ক্ষমতা অন্য কোনো নবী-রাসূলকে দেয়া হয়নি।

৩. আমার নাম রাখা হয়েছে আহমদ তথা অতি প্রশংসাকারী। এমন নাম কোনো নবী-রাসূলের রাখা হয়নি।

৪. আমার জন্য মাটিকে পবিত্র বলে ঘোষণা দেয়া হয়েছে। ফলে পানির বিকল্প হিসেবে আমার উম্মতের জন্য মাটি দ্বারা পবিত্রতা অর্জন করা বৈধ।

৫. আমার উম্মতকে শ্রেষ্ঠ উম্মত হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। (কুরতুবি)। রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন- আমার উম্মতকে এমন তিনটি বৈশিষ্ট্য দান করা হয়েছে যা অন্য কোনো উম্মতকে দান করা হয়নি। ১. সালাম, তা জান্নাতিদের অভিবাদন ২. সারিবদ্ধ হয়ে ইবাদত করা তা ফেরেশতাদের বৈশিষ্ট্য ৩. আমীন বলা, যা হজরত মূসা ও হজরত হারুন আ: ছাড়া কোনো নবীর সময় ছিল না। (ইবন খুজাইমা)।

মুসলিম শরিফের অপর হাদিসে বলা হয়েছে, রাসূল সা: বলেছেন- আমাকে ছয়টি জিনিস দ্বারা অন্য নবীদের ওপর মর্যাদা দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে কিছু আগে উল্লেখ করা হয়েছে। ব্যতিক্রমগুলো হলো-

৬. আমাকে সংক্ষেপে বেশি অর্থবহ কথা বলার যোগ্যতা দান করা হয়েছে।

৭. আমার জন্য গণিমত তথা যুদ্ধলব্ধ মাল হালাল করা হয়েছে। যা অন্যান্য নবী-রাসূলদের সময় হালাল ছিল না।

৮. সমস্ত জমিনকে আমার জন্য মসজিদ ও পবিত্র স্থান হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে। ফলে আমার উম্মতের জন্য যেকোনো স্থানে নামাজ পড়া জায়েজ। অন্য নবীদের সময় এ সুযোগ ছিল না, তাদের মসজিদে নামাজ আদায় করতে হতো।

৯. আমি সমগ্র সৃষ্টির প্রতি প্রেরিত হয়েছি। অর্থাৎ আমি হলাম বিশ্বনবী। আর কেউ বিশ্বনবী নয়। সবাই ছিলেন আঞ্চলিক এবং নির্দিষ্ট এলাকার নবী। একই সময়ে কয়েকজন নবী ছিলেন।

১০. আমার দ্বারা নবুয়ত সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে। রাসূল সা: বলেছেন- আমি শেষ নবী, আমার পরে আর কোনো নবী-রাসূল আসবে না। (মুসলিম)

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

sixteen − nine =

Back to top button