শিক্ষাঙ্গন

চান্স পেয়েও টাকার অভাবে ঢাবিতে অনিকের ভর্তি অনিশ্চিত

কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার দরিদ্র ও মেধাবী ছাত্র অনিক মিয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ (ঢাবি) একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেলেও টাকার অভাবে তা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ (ঢাবি) জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন অনিক। তবে তার ইচ্ছা তিনি ঢাবিতে ভর্তি হবেন। এ বছর ঢাবিতে ‘খ’ ইউনিটে ১৮৬৩তম স্থান অর্জন করেছেন অনিক। এদিকে গরীব-অসহায় বাবা-মা কিভাবে ছেলেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি ও পড়াশোনার খরচ জোগান দিবেন এমন চিন্তায় হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন।

অভাব-অনটন অনিকের মেধাশক্তিকে দাবিয়ে রাখতে না পারলেও অর্থের অভাবে উচ্চশিক্ষার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পথ রুদ্ধ হতে বসেছে অনিকের। দরিদ্রতার কাছে শেষ পর্যন্ত হার মেনে নিজের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ ফ্যাকাসে হয়ে পড়বে এমন আশঙ্কায় দিন কাটছে অনিকের।

অনিক মিয়া ফুলবাড়ী উপজেলার শিমুলবাড়ী ইউনিয়নের তালুক শিমুলবাড়ী গ্রামের দিনমজুর আব্দুস ছালামের ছেলে। মা রেনুকা বেগম গৃহিনী। তারা চার ভাইবোন। তিন ভাইয়ের মধ্যে অনিক বড়। ছোট ভাইদের মধ্যে একজন ৫ম শ্রেণিতে ও অন্যজন ২য় শ্রেণিতে পড়ে। সবার বড় বোন। পাঁচ বছর আগে বাবা-মা অনেক ক’ষ্টে তাকে বিয়ে দিয়েছেন। বর্তমানে তিন ভাই ও বাবা-মাসহ পাঁচ সদস্যের সংসার। তিন ছেলের পড়ালেখা ও জীবন বাঁ’চার তাগিতে স্ত্রী’-সন্তানকে ছেড়ে ঢাকায় একটি রাইস মিলে শ্রমিকের কাজ করছেন অনিকের বাবা।

অনিক ২০১৭ সালে শিমুলবাড়ী মিয়াপাড়া নাজিমউদ্দিন বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে এসএসসিতে জিপিএ ৪.৭৩ পায়। এরপর অনিক রংপুরে বন্ধুদের মেস ও মানুষের বাসাবাড়িতে পড়াশোনা করে ২০১৯ সালে রংপুর সরকারি কলেজ থেকে মানবিক বিভাগে এইচএসসিতে জিপিএ ৪.৪২ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীদের কাছে ধারদেনা করে ঢাকাসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা অংশ নেন। এরপর একে একে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পান তিনি।

অনিক জুমবাংলাকে বলেন, কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিও সুযোগ পেয়েছি ঠিকই কিন্তু আমার ইচ্ছা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার। তবে এখনও ভর্তির টাকা যোগাড় করতে পারিনি।

কিভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিসহ ঢাকা শহরে থাকা ও পড়াশোনার খরচ যোগাবে তার হতদরিদ্র পরিবার, সেই চিন্তায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন অনিক।

নিজের হতাশা আর সীমাবদ্ধতার কথা জানাতে গিয়ে অনিক জুমবাংলাকে বলেন, আমার বাবার তেমন কোনও আয় নেই। সামান্য দিন মজুরের কাজ করে সংসার চালান। জানি না বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারবো কিনা। ভবিষ্যতে প্রশাসনিক কর্মকর্তা হওয়ার ইচ্ছা রয়েছে তার।

অনিকের মা রেনুকা বেগম জুমবাংলাকে বলেন, ঘরে জমানো অর্থ না থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। ভিটাবাড়ি ছাড়া নিজেদের কোনও সম্পদ নেই। অভাবের কারণে ছেলের পড়াশোনা চালাতে পারবো কিনা জানি না।

মোবাইল ফোনে কথা হয় অনিকের বাবা আব্দুস ছালামের সাথে। তিনি জুমবাংলাকে বলেন, স্ত্রী ও তিন সন্তানের পড়াশোনার খরচ যোগাতে ঢাকায় একটি রাইস মিলে দিনমজুরের কাজ করছি। এই টাকায় সংসারই ঠিকমতো চলছে না। ছেলেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিসহ তার থাকা খাওয়ার খরচ জোগাড় করা আমার মতো অসহায় গরীব পিতার পক্ষে অসম্ভব।

এ প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোছা. মাছুমা আরেফিন জুমবাংলাকে জানান, তারা কেউ উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে এ ব্যাপারে যোগাযোগ করেননি। যদি কেউ যোগাযোগ করেন তাহলে অনিকের ভর্তির ব্যবস্থা করা হবে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

eight + four =

Back to top button