দেশবাংলা

শেষ ইচ্ছা ‘শেখের বেটিরে একবার দেখার’

প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উপহার পাকা ঘরে উঠেছেন শেরপুরের সেই ভিক্ষুক নাজিম উদ্দিন। ভিক্ষা করে ঘর মেরামতের জন্য দু’বছর ধরে জমানো ১০ হাজার টাকা করোনার দুঃসময়ে কর্মহীন মানুষের জন্য ত্রাণ তহবিলে দান করে প্রধানমন্ত্রীর নজরে আসেন তিনি। জীবদ্দশায় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে একবার দেখা করার ইচ্ছা তার।

এদিকে ভিক্ষুক নাজিম উদ্দিনের উদারতায় খুশি হয়ে তার এলাকার একটি বাজারের নামকরণ করা হয়েছে ‘নাজিম উদ্দিন বাজার’।

করোনা প্রতিরোধে লকডাউন চলাকালে ঘরবন্দি কর্মহীন মানুষদের জন্য নগদ দশ হাজার টাকা করোনা তহবিলে জমা দিয়েছিলেন ভিক্ষুক নাজিম উদ্দিন। গত ২১ এপ্রিল গণমাধ্যমে এ সংবাদ প্রচারের পর তার মহানুভবতায় খুশি হয়ে পাকা বাড়ি করে দেয়ার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকেও দেয়া হয় সম্মাননা, জীবিকার জন্য দেয়া হয়েছে দোকান।

স্ত্রী ও ৬ ছেলে মেয়ে নিয়ে জরাজীর্ণ ঘরে ভিক্ষা করে সংসার চালাতেন ভিক্ষুক নাজিম উদ্দিন। আজ জীর্ণ মাটির ঘর ছেড়ে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া পাকা ঘরে উঠেছেন তিনি। নতুন ঘরের চাবি তার হাতে তুলে দিয়েছেন জেলা প্রশাসক আনার কলি মাহবুব।

ভিক্ষুক নাজিম উদ্দিন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী খুশি হয়ে আমারে ঘর বাড়ি কইরে দিছে। আমি ম্যালা খুশি হইছি। আমি দোয়া করি আল্লাহ যেন প্রধানমন্ত্রীরে নেক হায়াত দান করেন। তারে আরো মাইনষের উপকার করার দিল দেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘ডিসি সাব আমারে একটা দোহান বানাইয়া দিছেন। মাল তুলার লাইগা ২০ হাজার টেহাও দিছেন। হেরেও আল্লাহ সহি সালামতে রাহুক। আমগো উপজেলা চেয়ারম্যান নাঈম ভাই আমারে একটা অটোরিকশা কিন্না দিছেন। হেরেও আল্লাহ ভালা রাহুক।’

এ সময় ভিক্ষুক নাজিম উদ্দিন আবেগাপ্লুত হয়ে বলেন, ‘আমার জীবনের শেষ ইচ্ছা আমি যাতে একবার শেখের বেটিরে সামনা সামনি দেহি। আমার জীবনের সব আমি পাইছি। আমি শেখের বেটির পায়ে ধইরে একবার সেলাম করতে চাই। আল্লাহ যাতে আমার জীবনের এই শেষ ইচ্ছাডা পূরণ করেন।’

এদিকে নাজিম উদ্দিনের উদারতায় খুশি হয়ে তার এলাকার একটি বাজারের নাম ‘নাজিম উদ্দিন বাজার’ করেছেন স্থানীয়রা।

স্থানীয় ব্যবসায়ী সেলিম মিয়া বলেন, ‘নাজিম চাচার উদারতায় দুনিয়ার মানুষ আমগো এলাকা চিনছে। তাই আমরা আমাগো বাজারের নাম চাচার নাম করছি।’

স্থানীয় রেজাউল করিম বলেন, ‘নাজিম চাচা আমাদের সম্পদ। প্রধানমন্ত্রীকে আমরা ধন্যবাদ জানাই, চাচাকে ঘর বাড়ি দেয়ার জন্য। আমরাও খুশি হয়ে আমাদের বাজারের নাম চাচার নামে করে দিছি।’

জীবিকা নির্বাহের জন্য স্থানীয় বাজারে একটি দোকানও করে দিয়েছে জেলা প্রশাসন। ভবিষ্যতেও তাকে সকল সহযোগিতা করবে সরকার, বলেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুবেল মাহমুদ। তিনি বলেন, ‘নাজিম চাচার প্রয়োজনীয় সকল কিছু আমরা দেখভাল করবো ইনশাআল্লাহ।’

এদিকে ব্যক্তিগত অর্থায়নে নাজিম উদ্দিনকে একটি ইজিবাইক কিনে দিয়েছেন ঝিনাইগাতী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এসএমএ ওয়ারেজ নাঈম। তিনি বলেন, ‘আমার এলাকার এরকম একজন উদার মানুষের জন্য আমার উপজেলার ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে। যেখানে সমাজের বিত্তবানরা এগিয়ে আসেননি, সেখানে তিনি এগিয়ে এসেছেন। তার যাতে আর ভিক্ষাবৃত্তি না করা লাগে, এজন্যই তাকে ইজিবাইক কিনে দিয়েছি। যাতে তিনি স্বাচ্ছন্দে জীবিকা নির্বাহ করতে পারেন।’

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে নাজিম উদ্দিনের চিকিৎসা ও জীবিকার ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক আনার কলি মাহবুব। তিনি বলেন, তার চিকিৎসা ও জীবিকা নির্বাহের জন্য সকল কিছুর ব্যবস্থা করা হয়েছে। ভবিষ্যতেও সার্বিকভাবে সহযোগিতা করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

17 − 12 =

Back to top button