Lead Newsজাতীয়

কর্মসংস্থানের সুযোগ পেলে দেশেই থাকতেন ৯৯ শতাংশ অভিবাসী

বাংলাদেশে জীবিকা নির্বাহের ভালো সুযোগ পেলে ৯৯ শতাংশ সম্ভাব্য অভিবাসী দেশেই থাকতেন বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম)।

সংস্থাটির ‘বাংলাদেশ: সার্ভে অন ড্রাইভারস্ অফ মাইগ্রেশন এন্ড মাইগ্রেন্টস্ প্রোফাইল’ শীর্ষক নতুন এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। যা আজ বুধবার এক অনুলাইন অনুষ্টানের মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, যে পাঁচটি প্রধান কারণে বাংলাদেশের মানুষ বিদেশে অভিবাসন করেন তা হলো- জীবিকার অভাব (বিশেষ করে প্রাতিষ্ঠানিক খাতে), অপর্যাপ্ত উপার্জন, অর্থনৈতিক সমস্যা, সামাজিক সেবার অভাব এবং সীমিত সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থা। 

২০১৯ সালের নভেম্বর এবং ডিসেম্বরে মোট ১১ হাজার ৪১৫ জন সম্ভাব্য অভিবাসীর সাক্ষাৎকার গ্রহণ করে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে আইওএম। সেখানে সম্ভাব্য অভিবাসীরা ২০২০ সালের জুন মাসের মধ্যে অভিবাসনে ইচ্ছা প্রকাশ করেন। অভিবাসনের ক্ষেত্রে সরকারি নিবন্ধন করেছেন কিনা তার উপর ভিত্তি করে সম্ভাব্য অভিবাসীদের নিয়মিত এবং অনিয়মিত- এ দুই খাতে ভাগ করা হয়।

আওএম বলছে, বাংলাদেশে এই প্রথম ৬৪ জেলার উপর এধরণের গবেষণা পরিচালিত হলো। এর পূর্বে বাংলাদেশে অভিবাসনের চালিকাশক্তির উপর পরিচালিত গবেষণাগুলো ছিলো পরিসর এবং মাত্রার দিক দিয়ে নির্দিষ্ট ও সীমিত।

এ গবেষণার অধিকাংশ উত্তরদাতা পুরুষ (৮৯%) এবং অংশগ্রহণকারীদের গড় বয়স ২৭। তাদের মধ্যে আবার ৬৪ শতাংশের বয়স ২০ এর কোটায়। অংশগ্রহণকারীদের প্রায় অর্ধেকই বিবাহিত। অধিকাংশ উত্তরদাতা কর্মক্ষম এবং শিক্ষার কিছু স্তর পার করেছেন।

উত্তরদাতাদের শিক্ষার সর্বোচ্চ স্তরের কথা বিবেচনা করলে, ৪১ শতাংশ মাধ্যমিক স্তর সম্পন্ন করেছেন, ২৭ শতাংশ উচ্চবিদ্যালয় স্তর এবং ২৬ শতাংশ প্রাথমিক স্তর সম্পন্ন করেছেন। উত্তরদাতাদের মধ্যে ৩ শতাংশ শিক্ষার কোন স্তরেই প্রবেশ করেননি। নিম্নমানের কর্মসংস্থান বাংলাদেশে এখনো একটি চ্যালেঞ্জ।

উত্তরদাতাদের ৪০ শতাংশ সম্ভাব্য অভিবাসী অভিবাসনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পূর্বে কর্মহীন ছিলেন এবং ৯০ শতাংশ জানান, তাদের ব্যক্তিগত কোনো উপার্জন নেই বা থাকলেও তা অপর্যাপ্ত।

আন্তর্জাতিক অভিবাসনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ পৃথিবীর ৬ষ্ঠ বৃহত্তম উৎস দেশ। ২০১৯ পর্যন্ত ৭৮ লাখ বাংলাদেশি বিদেশে অবস্থান করেছেন। প্রতিবছর এদেশে ২২ লাখেরও বেশি তরুণ জনগোষ্ঠী শ্রমশক্তিতে যুক্ত হয়। কিন্তু স্থানীয় শ্রমবাজার এই সকল কর্মসংস্থানপ্রার্থীদের জায়গা দিতে সক্ষম নয়।

কী কী পরিবর্তন করা হলে তারা দেশে থাকবেন এমন প্রশ্নের উত্তরে সম্ভাব্য অভিবাসীদের প্রায় সবাই (৯৯%) শতাংশ জানান, উন্নত কর্মসংস্থানের সুযোগ পেলে তারা বাংলাদেশেই থাকবেন।

উত্তরদাতাদের মধ্যে একজন বলেন, ‘দেশে আমি যা উপার্জন করি তা দিয়ে ভালোমতো জীবন চালাতে পারি না। বিদেশে গিয়ে অনেকেই ভালো করছে, তাই আমিও বিদেশে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’   

গবেষণায় অংশ নেয়া উত্তরদাতাদের ৩৮ শতাংশ উল্লেখ করেন, আইনের উন্নতি হলে তারা দেশে থাকবেন। ৩৬% উন্নত নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং ২৯% আরো সুলভ স্বাস্থ্যসেবার কথা উল্লেখ করেছেন দেশে থাকার জন্য।

প্রায় অর্ধেক অংশগ্রহণকারী জানান, তারা দেশে থাকবেন যদি তাদের আরো অধিক পড়াশোনার ক্ষেত্রে সহায়তা করা হয়।

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন বলেন, ‘শ্রম অভিবাসন বাংলাদেশের অর্থনৈতিক এবং সামাজিক উন্নয়নের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই খাতকে আরো ভালোমত বুঝতে, কাজের সন্ধানে বিদেশ গমনকারীদের ডাটাবেজ তৈরি প্রয়োজন। যে ডাটাবেজে তাদের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপট বিস্তারিত উল্লেখ থাকবে।’

আইওএম বাংলাদেশ-এর মিশন প্রধান গিওরগি গিগাওরি বলেন, ‘এই প্রথমবারের মতো আমরা দেশব্যাপী সম্ভাব্য অভিবাসীদের উপর জরিপ পরিচালনা করেছি। এই প্রতিবেদনটি বাংলাদেশ থেকে অভিবাসনের আর্থসামাজিক চালিকাশক্তিগুলো নিয়ে কাজ করতে সহযোগিতা করবে।’

পাশাপাশি শিক্ষা ও দক্ষতায় বিনিয়োগের গুরুত্ব সম্পর্কে উচ্চস্তরের আলোচনা ত্বরান্বিত করতে সাহায্য করবে প্রতিবেদনটি,’ যোগ করেন তিনি।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

eighteen − 17 =

Back to top button