ভাইরাল

‘ছাত্রীকে আশ্বস্ত করলাম আমিও একজন বাবা, বাচ্চাটা নিরাপদেই থাকবে’

তিনি শুধু শিক্ষক নন। তিনি গুরু, অভিভাবক ও পিতা। তাঁর কোলে শিশু নিরাপদ। এমনই একজন শিক্ষক আহমেদ মাহবুবুল আলম।

সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মাহবুবুল আলম নামের এক শিক্ষকের ফেসবুক স্ট্যাটাস ভাইরাল হয়েছে। অনেকেই তার স্ট্যাটাসটি ফেসবুকে শেয়ার করেছেন।

মাহবুবুল আলম তার পোস্টে লিখেছেন, প্রায় ১৭ বছরের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতার জীবনে আজ আমার একটা অন্য রকমের অভিজ্ঞতা হলো। ইউনিভার্সিটির আশুলিয়া ক্যাম্পাসে আন্ডারগ্রাজুয়েটের ‘বিজনেস ইংলিশ’ কোর্সের একটা ৩০ মিনিটের ক্লাস টেস্ট নেয়া হবে। ক্লাসে দেখি এক ছাত্রী তার ছোট্ট বাচ্চাটাকে নিয়ে এসেছে, বাচ্চাটা তার কোলে ঘুমাচ্ছে। পরীক্ষার দিনে বাচ্চাকে সাথে নিয়ে এসেছে কেন, এই প্রশ্ন করাতে মেয়েটা জানালো, আজ বাচ্চাটাকে কারো কাছে রেখে আসার মত তার বাসায় কেউই ছিল না। আমার কেন যেন বেশ মায়া লাগল।

মেয়েটাও বেশ কনফিডেন্সের সাথে ঘুমন্ত বাচ্চাকে কোলে নিয়েই পরীক্ষায় বসে গেল। বাচ্চাটার ডায়াপার পরানো আছে কিনা জানতে চাইলাম। তারপরে তাকে বললাম বাচ্চাটাকে আমার কোলে দিতে। মেয়েটা কোন দ্বিধা প্রকাশ না করেই আমার কোলে বাচ্চাটাকে দিয়ে নিশ্চিন্তে পরীক্ষা দিল। প্রফেশনাল পয়েন্ট অব ভিউ থেকে এই কাজটা করা আমার কতখানি সঠিক হয়েছে, তা বিচার করা আপেক্ষিক বিষয়। কিন্তু সেই মুহূর্তে আমার কাছে যেটা সঠিক মনে হয়েছে, আমি সেটাই করেছি। আমি আমার হাফ-স্লিভ জ্যাকেটটা খুলে রাখলাম এবং জামার বুক পকট থেকে কলম-মার্কার এসবও বের করে নিলাম, যাতে বাচ্চাটা কোনভাবে ব্যাথা না পায়। আমার ছাত্রীকেও আশ্বস্ত করলাম যে আমিও একজন বাবা, কাজেই আমার কোলে বাচ্চাটা নিরাপদেই থাকবে।

পরীক্ষার পরে ক্লাসের একজনকে বললাম বাচ্চাটার সাথে আমার একটা ছবি তুলে দিতে। আজকের মুহূর্তটা আমার শিক্ষকতার জীবনের একটা অন্যকমের অভিজ্ঞতা ছিল। আর বাচ্চাটার মাকে (আমার সেই ছাত্রীকে) বললাম, আর কোন পরীক্ষার সময় যেন আমিসহ আর অন্য কোন শিক্ষকের কাছে সে এমনটা আশা করে না থাকে।

আমাদের দেশের অনেক মেয়ের জীবনেই দেখেছি, বিয়ের পরে তাদের পড়াশুনা অনিয়মিত হয়ে গেছে। সেখানে এতটুকু একটা বাচ্চা কোলে নিয়ে আমার এই ছাত্রীটা যে নিজের পড়াশুনা নিয়মিত চালিয়ে যাচ্ছে, এটা আমার কাছে অনেক ভাল লেগেছে। তবে সার্বিক বিচারে মায়ের পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে এই বাচ্চাটার আমার কাঁধে মাথা রেখে পুরো সময়টা জুড়ে ঘুমানোটা আমি বেশ উপভোগ করেছি। আমার নিজের মেয়েটার এখন ৭ বছর বয়স। সবকিছু মিলে আমার জন্য একটা ভাল অভিজ্ঞতা ছিল, বলতেই হচ্ছে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

nineteen + 4 =

Back to top button