ডেঙ্গু নিয়েন্ত্রণে বিজ্ঞানীদের গবেষণায় সাফল্য!
পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাণঘাতী প্রাণি হচ্ছে; অতিক্ষুদ্র মশা। প্রতিবছর কমপক্ষে ১০ লাখ মানুষের মৃত্যুর কারণ হয় মশাবাহিত রোগ। আর মশককুলের ছড়ানো রোগের মধ্যে সবচেয়ে প্রাণঘাতী হয়ে উঠেছে ডেঙ্গুর জীবাণু।
মশার বংশ ও রোগ বিস্তার বন্ধে সারা বিশ্বজুড়েই গবেষণা চলছে। তারই ধারাবাহিকতায় বড় সফলতা পাওয়া গেছে ইন্দোনেশিয়ায়। সেখানে চলমান এক গবেষণায় প্রাকৃতিকভাবে পাওয়া যাওয়া একটি ব্যাকটেরিয়া বা অণুজীব মশার দেহে ঢুকিয়ে দেওয়ার পর তাদের ডেঙ্গু বিস্তারের ক্ষমতা হ্রাস পেতে দেখা গেছে।
গতবছর সরকারি হিসাব অনুসারে বাংলাদেশে ১৬৪জন ডেঙ্গু সংক্রমণে মারা যায়। এদের অনেকেই ছিল শিশু।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানায়, গত দুই দশকে ডেঙ্গুর সংক্রমণের সংখ্যা ৮গুণ বেড়েছে। ২০০০ সালে যেখানে ৫,০৫,৪৩০টি সংক্রমণের ঘটনা ঘটে, সেটাই ২০১০ সালে এসে দাঁড়ায় ২৪ লাখে। আর ২০১৯ সালে তা হয়ে যায় ৪২ লাখ। আর ২০০০ সালে ৯৬০টি মৃত্যু ঘটলেও ২০১৫ সালে তা উন্নীত হয় ৪০৩২টিতে। খবর দ্য গার্ডিয়ানের।
এ অবস্থায় ইন্দোনেশিয়ায় করা সাম্প্রতিক গবেষণা প্রাণঘাতী রোগটি নির্মূলে আশা জাগিয়েছে।
জাভা দ্বীপে অবস্থিত ইন্দোনেশিয়ার ঐতিহাসিক শহর ইয়োগইয়াকর্তা। এখানে প্রাকৃতিকভাবে প্রাপ্ত ওলবাচিয়া নামের একটি ব্যাকটেরিয়া বহুসংখ্যক মশার দেহে প্রয়োগ করে তাদের ফের অবমুক্ত করা হয়। এতে শহরটির যেসব অংশে এ মশা অবমুক্ত করা হয়েছে, সেখানে ডেঙ্গু সংক্রমণের হার যেখানে করা হয়নি-সেসব এলাকার চাইতে ৭৭ শতাংশ কমেছে।
ওয়ার্ল্ড মসকিউটো পোগ্রামের প্রভাব পর্যালোচনা শাখার পরিচালক এবং গবেষণাটিতে জড়িত শীর্ষ বিজ্ঞানী ড. কেটি অ্যান্ডার্স বলেন, নতুন আবিষ্কারের হাত ধরে সমগ্র ইয়োগইয়াকর্তা শহরে ডেঙ্গুর স্থানীয় সংক্রমণ নির্মূল করা যাবে, এ ব্যাপারে আমরা সত্যিই আশাবাদী। এনিয়ে সফল হলে পরের ধাপে ইন্দোনেশিয়ার অন্যান্য অঞ্চলকেও কার্যক্রমটির আওতায় আনা হবে।
তাছাড়া, এব্যাপারে আমাদের প্রত্যাশাও অনেক বড়। আমরা চাই পৃথিবীর যেসব দেশে ডেঙ্গু সংক্রমণের ব্যাপক উৎপাত, সেখানেও এপ্রযুক্তি ব্যবহার করতে। জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি সৃষ্টিকারী এ রোগটি সমূলে উৎপাটনের লক্ষ্য নিয়েই আমরা এগিয়ে যাচ্ছি।
যে প্রক্রিয়ায় মশার দেহে ব্যাকটেরিয়া যোগ করা হয়:
গবেষণা চলাকালে ওলবাচিয়া ব্যাকটেরিয়া প্রবেশ করানো মশার ডিম বালতিতে করে ইয়োগইয়াকর্তা শহরের নির্বাচিত এলাকার বাড়িগুলোতে পাঠানো হয়। ছয় মাস ধরে চলে নিয়মিত মশার ডিম ভর্তি বালতি পাঠানোর এ প্রক্রিয়া। বালতির আংশিক ও স্থির পানিতেই ডিম ফুটে জন্ম নেয় মশাগুলো। এভাবে ১৩ বর্গ কিলোমিটার এলাকায় প্রায় ৬০ লাখ মশা অবমুক্ত করা হয়। ব্যাকটেরিয়া আক্রান্ত এসব মশার মাধ্যমে আবার বন্য মশাও আক্রান্ত হয় ওলবাচিয়া ব্যাকটেরিয়ায়।
শহরের যেসব এলাকায় ব্যাকটেরিয়া সংক্রমিত মশা অবমুক্ত করা হয়নি, সেখানে ডেঙ্গুর প্রকোপ অব্যাহত ছিল। এবং স্বাস্থ্যকর্মীরা রোগ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালিয়ে গেছেন। মশা নিধনের স্বাভাবিক কার্যক্রমও অব্যাহত রাখে সিটি কর্পোরেশন। এসব প্রচেষ্টায় কোনো লাভ হয়নি। এমনকি মশা জনসংখ্যাও কমেনি এসব এলাকায়।
অন্যদিকে, ব্যাকটেরিয়া সমৃদ্ধ মশা ছাড়ার এলাকায় বিদ্যমান মোট মশার সংখ্যা বাড়েনি বা তাদের আচরণগত বৈশিষ্ট্যেও পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়নি। কিন্তু, ডেঙ্গু ছড়ানোর তাদের সক্ষমতা উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পায়।
সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক অণুজীবের সাহায্য নেওয়ায় বিজ্ঞানীরা বলছেন, এর ফলে পরিবেশ এবং বাস্তুসংস্থানেও কোনো বিরূপ প্রভাব পড়বে না।
ওলবাচিয়া ব্যাকটেরিয়া ঠিক কিভাবে মশার ডেঙ্গু বিস্তারের ক্ষমতা কমিয়েছে, সে বিষয়ে নিশ্চিত নন বিজ্ঞানীরা। তবে তারা জানিয়েছেন, মশার দেহে ভেতর ব্যাকটেরিয়া এবং ডেঙ্গুর জীবাণু বংশবিস্তার বা খাদ্যের পারস্পরিক প্রতিযোগীতায় লিপ্ত হওয়ার ফলে, জীবাণুটি দুর্বল হয়ে পড়তে পারে।
Source: TBS