বিবিধ

নষ্টের পথে চিত্রশিল্পী এস এম সুলতানের চিত্রকর্ম

আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন চিত্রশিল্পী এস এম সুলতানের কিছু ছবি নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে। এ ব্যাপারে অনেকটাই উদাসীন সুলতান কমপ্লেক্সের দায়িত্বপ্রাপ্তরা। মাস শেষে বেতন নিলেও প্রতিষ্ঠানের ব্যাপারে উদাসীন তারা।

বরেণ্য চিত্রশিল্পী এস এম সুলতানের নষ্ট হয়ে যাওয়া ৩টি পেইন্টিং রিপেয়ারিংয়ের জন্য ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মাধ্যমে ঢাকা থেকে নড়াইলে আসা তিন সদস্যের একটি টিম গত ২২ নভেম্বর (শুক্রবার) সকালে এ তিনটি ছবি ঢাকায় নিয়ে যায়।

ছবি তিনটি হলো- ‘জমি কর্ষণ’, ‘ধান মাড়াই’ এবং ‘গ্রাম্য কাজিয়া’। ছবি তিনটি চটের ক্যানভাসের ওপর নির্মিত এবং তেল রং-এর পেইন্টিং।

স্থানীয়রা জানায়, শিল্পীর শয়ন কক্ষের খাটের কিছু অংশ খুলে খুলে পড়ছে। শিল্পী সুলতান যে নৌকাটি শিশুদের জন্য তৈরি করেছিলেন সেটিতে রাতের অন্ধকার বখাটেরা মাদক সেবন করে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের অবগত করা সত্বেও তারা কোনো পদক্ষেপ নেয়নি, খবর ইউএনবি।

সুলতান কমপ্লেক্স সূত্র জানায়, এস এম সুলতান কমপ্লেক্সে শিল্পীর আঁকা মোট ২২টি ছবি রয়েছে। এগুলো মেরামত ও উপযুক্ত পরিবেশে স্থাপন করা জরুরি হয়ে পড়েছে। ২০১৬ সালে বাংলাদেশে শিল্পকলা একাডেমি থেকে একজন কর্মকর্তা এসে শিল্পীর সবচেয়ে বড় এবং বিখ্যাত ৩৮ ফুট লম্বা চিত্রকর্ম ‘সভ্যতার ক্রমবিকাশ’ ছবিটি মেরামতের কাজ শুরু করলেও তা সম্পন্ন হয়নি। তবে ‘চর দখল’, ‘ধান মাড়াই’, ‘জমি কর্ষণ’, ‘ফসল সংগ্রহ’, ‘মাঠ পরিষ্কার’, ‘কলসি কাঁখে নারী কাজিয়া (কাইজ্যা)’ ও মাছ শিকার ছবিগুলি প্রায় নষ্ট হতে চলেছে। বাকি ছবিগুলোও পর্যায়ক্রমে মেরামত জরুরি।

সংশ্লিষ্টরা জানান, অপরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলা গ্যালারি, আবহাওয়া, উপযুক্ত স্থানে না রাখা, ছবিগুলো বদ্ধ অবস্থায় রাখা, অবহেলাসহ বিভিন্ন কারণে ছবিগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং নষ্ট হতে চলেছে।

নড়াইল সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের শিক্ষক চিত্রশিল্পী নিখিল চন্দ্র দাস বলেন, ‘শিল্পির অনেকগুলো ছবি নষ্ট হবার উপক্রম। আমাদের দাবি ছবিগুলি যেন দীর্ঘস্থায়ী এবং সঠিকভাবে মেরামত করা হয়।’

ঢাকা থেকে আসা বাংলাদেশ ব্যাংকের টাকা মিউজিয়ামের কিউরেটর আছিয়া খাতুন বলেন, ‘চিত্রশিল্পী সুলতান কমপ্লেক্সের ৮টি ছবি নষ্ট হয়ে গেছে। এগুলো ধাপে ধাপে রিপেয়ার করা জরুরি। এরই অংশ হিসেবে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মাধ্যমে প্রথম ধাপে ৩টি ছবি রিপেয়ার করা হবে।’

তিনি বলেন, ‘এগুলো ঠিক করতে ৬ মাস অথবা এক বছর লাগতে পারে। নড়াইলে ছবিগুলো রিপেয়ার করার জন্য কোনো ল্যাবরেটরি নেই। সেজন্য ছবিগুলো ঢাকায় নেয়া হয়েছে।’

জেলা প্রশাসক আনজুমান আরা বলেন, ‘শিল্পী সুলতানের অনেকগুলো ছবি নষ্ট হওয়ার পথে। ছবিগুলো দীর্ঘস্থায়ী এবং সুন্দর করতে শিল্পকলার মাধ্যমে রিপেয়ারের জন্য ঢাকায় নেয়া হচ্ছে। আশা করছি খুব দ্রুত এগুলো মেরামত করে আবার সুলতান কমপ্লেক্সে পাঠানো হবে।’

তিনি বলেন, ‘দর্শনার্থীদের হয়ত সাময়িক সমস্যা হতে পারে। প্রায় সমস্ত ছবিই ধাপে ধাপে রিপেয়ার করা হবে। এছাড়া সুলতান কমপ্লেক্সের ছবিগুলো উপযুক্ত পরিবেশে রাখার জন্য উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।’

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

two + 15 =

Back to top button