Lead News

হাসপাতাল নাকি গুদাম ঘর ?

হাসপাতাল নামটি শুনলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন, ছিমছাম, গোছানো একটা পরিবেশ । এটাই তো স্বাভাবিক ? কিন্তু আমাদের দেশে নোংরা, অস্বাস্থ্যকর এবং বিশৃঙ্খল পরিবেশের জন্য রোগীরা হাসপাতালে ঠুকতেই ভয় পায় ।

রোগীরা হাসপাতালে আসে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ্য হওয়ার জন্য, কিন্তু সেই হাসপাতা্লে এসেই যদি মানুষ আর বেশী অসুস্থ্য হয়ে পড়ে তাহলে কি আর কেউ হাসপাতালে আসতে চাইবে ? কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, এমনটাই ঘটছে আমাদের দেশের হাসপাতালগুলোতে।

অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে, অব্যবস্থাপনা, ব্যাপক দুর্নীতি ও অনিয়ম, কর্মীদের উদাসীনতা এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঠিক নজরদারি ও নিয়ন্ত্রণের অভাব দেশের প্রায় সব সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে স্বাস্থ্যকর ও রোগী-বান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে প্রধান বাধা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এইসকল অব্যবস্থার জন্য রোগীরা হাসপাতালে প্রবেশের সময় আরও অসুস্থ হয়ে পড়েন। দেশে অনেক বিশ্বমানের এবং বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক থাকা সত্ত্বেও হাসপাতালগুলোর দুর্বল অবস্থা এবং পরিষেবার পাশাপাশি স্থানীয় স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থায় অবিশ্বাসের কারণে অনেক ধনী ও মধ্যবিত্ত মানুষ প্রতি বছর চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাচ্ছেন বলে মত বিশেষজ্ঞদের।

স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি ডা. ইকবাল আর্সেনাল বলেন, হাসপাতালের সুস্থ পরিবেশ মূলত এর স্থাপত্য নকশা, পরিচালনা ও পরিষেবা সরবরাহের ওপর নির্ভর করে।

ডা. ইকবাল বলেন, ‘সম্প্রতি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (ঢামেক) একটি নতুন ভবন নির্মিত হয়েছে যা দেখতে অনেকটা গুদাম ঘরের মতো।’‘এমন একটি হাসপাতাল ভবন তৈরি করে কী লাভ যেখানে রোগীরা স্বস্তি বোধ করেন না?,’ প্রশ্ন রাখেন তিনি।

বিশিষ্ট এ চিকিৎসক আরও বলেন, ‘আমাদের দেশে যারা হাসপাতালগুলোর নকশা করেন তারা চিকিৎসার দৃষ্টিকোণ থেকে রোগী-বান্ধব পরিবেশ সম্পর্কে চিন্তা করেন না। পরিচ্ছন্ন ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিশ্চিত করতে একটি হাসপাতালের স্যানিটেশন, ভেন্টিলেশন এবং কার্যকর বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সুপরিকল্পিত ব্যবস্থা থাকা দরকার, আমাদের হাসপাতালগুলোতে যার অভাব রয়েছে।’‘স্বাস্থ্যসেবার উন্নতির জন্য সরকার অনেক অর্থ বরাদ্দ দিচ্ছে, কিন্তু বিভিন্ন সিন্ডিকেট এবং অসাধু ব্যক্তিরা লুণ্ঠনে লিপ্ত। তারা ৩৫ লাখেরও বেশি টাকা দিয়ে একটি পর্দা ক্রয় করেন। দুর্নীতি ও লুণ্ঠন বন্ধ হওয়া উচিত। সব অব্যবস্থাপনা দূর করা প্রয়োজন,’ তিনি বলেন ।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাবেক আঞ্চলিক পরামর্শক অধ্যাপক ডা. মুজাহেরুল হক বলেন, রোগী-বান্ধব স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য হাসপাতালের নকশা খুব গুরুত্বপূর্ণ।

অধ্যাপক মুজাহের বলেন, ‘ত্রুটিপূর্ণ নকশা ছাড়াও বেশির ভাগ সরকারি হাসপাতালে সবসময় ধারণ ক্ষমতার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি রোগী ভর্তি করা হয়। এ জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সেখানে স্বাস্থ্যকর পরিবেশ এবং সঠিক পরিষেবা নিশ্চিত করতে পারেন না। এমনকি অনেক রোগীকে মেঝে এবং করিডোরে থেকেই চিকিৎসা সেবা নিতে হয়।’

সরকারি এবং বেসরকারি উভয় হাসপাতালে স্বাস্থ্যকর এবং মানসম্পন্ন চিকিৎসা নিশ্চিত করতে দেশের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থায় সঠিক পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং এ বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া দরকার বলে মনে করেন অধ্যাপক মুজাহের ।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

eight − five =

Back to top button