মহানবীর (সা:) ব্যঙ্গচিত্র; ফ্রান্সকে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে বললো ইরান
ফ্রান্সকে মুসলিম উম্মাহর কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়ার কথা বলেছে ইরানের জাতীয় সংসদ। শুধু তাই নয়, রাষ্ট্রীয় মদদে ইসলাম ধর্ম ও মহানবী (সা.) এর প্রতি অবমাননাকর ব্যঙ্গচিত্র প্রদর্শন করার ঘটনায় মুসলমানদের অন্তরে যে ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে, তা সারানোর জন্য ফরাসি সরকারকে প্রচেষ্টা চালাতে বলা হয়েছে।
সংসদ সদস্যদের পক্ষ থেকে শনিবার রাজধানী তেহরানে একটি বিবৃতি দিয়ে ফ্রান্সের সরকারের প্রতি এ আহবান জানানো হয়। এতে ইসলাম অবমাননাকে ‘লজ্জাষ্কর শয়তানি ও নিকৃষ্টতম জঘন্যকাজ’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, কথিত মত প্রকাশের স্বাধীনতার নামে পশ্চিমদের ‘শয়তানি মতাদর্শ’ হলো ইসলামকে আঘাত করা। এই মানুষরূপী শয়তানরা তাদের আদর্শিক দুর্গন্ধ বিশ্বব্যাপী ছড়ানোর চেষ্টা করছে। এমন নোংরা ও কুরুচিপূর্ণ চিন্তাধারার আরেক দফা বহিঃপ্রকাশ ঘটানো হয়েছে ফ্রান্সে। খবর পার্সটুডের।
ইরানি সংসদ সদস্যরা বলেন, কেবল মুসলমানরাই মহানবী (সা.)-এর অবমাননার নিন্দা জানায়নি, অন্যান্য আসমানী ধর্মের প্রকৃত অনুসারীরাও জানিয়েছেন। এ ধরনের ধর্ম-বিরোধী কর্মকাণ্ড এখনই রুখে না দাঁড়ালে হযরত ঈসা মাসিহ (আ.) ও হযরত মূসা কালিমুল্লাহ (আ.)-এর অবমাননা করতে পারা হতে পারে।
তারা মনে করেন, পশ্চিমা বিভিন্ন দেশে একের পর এক ইসলাম ধর্ম ও মহানবী (সা.)-এর অবমাননার ঘটনা ঘটছে। এর পেছনে রয়েছে ইসরায়েল বা ইহুদিবাদীদের সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা। তারা খ্রিস্টান-মুসলমান দ্বন্দ্ব উস্কে দিয়ে সংঘাত সৃষ্টি করে ফায়দা লুটতে চায়।
সাম্প্রতিক সময়ে ফ্রান্সে রাষ্ট্রীয়ভাবে ইসলাম ধর্ম ও মহানবী (সা.) কে অবমাননার বিভিন্ন ধরনের কার্যকলাপ বেড়েছে। এর মধ্যেই কয়েকদিন আগে নবী মুহাম্মদ (সা.) এর ব্যঙ্গাত্মক কার্টুন প্রকাশ করা হয়। স্যামুয়েল প্যাটি নামক এক ফরাসি শিক্ষক ক্লাসে এমন একটি ব্যঙ্গচিত্র প্রদর্শন করলে তাকে হত্যা করে একজন সংক্ষুব্ধ শিক্ষার্থী।
এ ঘটনায় দেশটিতে ব্যাপক বিক্ষোভ দেখা দিলে কার্টুন প্রকাশের পক্ষ নিয়ে ওই হত্যাকাণ্ডের জন্য মুসলমান সম্প্রদায়কে দায়ী করেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁন। সেইসঙ্গে রাষ্ট্রীয়ভাবে মহানবী (সা.) এর ব্যঙ্গচিত্র প্রকাশ অব্যাহত রাখার ঔদ্ধত্যপূর্ণ ঘোষণা দেন তিনি। এ ছাড়াও তার সরকার হিজাব নিষিদ্ধ, মসজিদ বন্ধ করাসহ ইসলাম-বিরোধী আইন প্রণয়নে হাত দিয়েছেন বলেও জানা যায়।
এর বিরুদ্ধে মুসলিম বিশ্বে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। বিশ্ব মুসলিম নেতারাও সমালোচনায় সোচ্চার হয়েছেন। দেশে দেশে চলছে ফরাসি পণ্য বয়কটের আন্দোলন এবং দেশটির প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁনের বিরুদ্ধে নিন্দা ও প্রতিবাদ। অবশ্য আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়ার মুখে এখন সুর নরম করে ম্যাক্রোঁন বলেছেন, কার্টুন এঁকে ইসলামের নবীর (সা.) অবমাননা করলে বিশ্বের মুসলমানদের অনুভূতি কেমন হতে পারে, সেটা তিনি বুঝতে পারেন।
শনিবার আলজাজিরাকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি আরো জানান, হজরত মুহাম্মদের (সা.) কার্টুন আঁকাকে তিনি সমর্থন করেন না। তার সরকারও এ কার্টুন আঁকাকে সমর্থন করবে না বলে জোরালোভাবে জানিয়েছিল। কিন্তু সেই বক্তব্য বিকৃতভাবে উপস্থাপিত হয়েছে, আর এতে মানুষ মনে করেছে যে, তিনি কার্টুনগুলো সমর্থন করেছেন।