Lead Newsজাতীয়

‘আল্লামা শাহ আহমদ শফীকে হত্যা করা হয়েছে’

হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের প্রতিনিধি সম্মেলনকে (কাউন্সিল) ‘অবৈধ’ বলে আখ্যায়িত করেছেন সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফীর অনুসারীরা। তাঁরা এই সম্মেলনে যাচ্ছেন না বলে জানিয়েছেন। আল্লামা শাহ আহমদ শফীকে হত্যা করা হয়েছে বলেও মন্তব্য করেছেন তারা।

হেফাজতের একটি অংশের ডাকে অনুষ্ঠিতব্য সম্মেলনের একদিন আগে আজ শনিবার সকালে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই মন্তব্য করেন শফীপন্থি হিসেবে পরিচিত আলেমরা। এ সময় তাঁরা অভিযোগ করে বলেন, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফীকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। তাঁরা এ ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্তও দাবি করেন।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়েন আল্লামা শাহ আহমদ শফীর ছোট শ্যালক মো. মঈন উদ্দিন। এ ছাড়া সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মঈনুদ্দীন রুহী। এ সময় হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় কয়েকজন নেতাও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। 

আগামীকাল রোববার সকালে হাটহাজারীর আল জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম মাদ্রাসায় হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের কাউন্সিল আহ্বান করেছে সংগঠনটির বর্তমান মহাসচিব জুনাইদ বাবুনগরীর অনুসারীরা। সারা দেশে জেলা পর্যায়ে হেফাজতের নেতাদের আমন্ত্রণ জানানো হলেও এতে দাওয়াত না পাওয়ার কথা জানিয়েছেন আল্লামা শফীর অনুসারীরা। আল্লামা শফীর জায়গায় নতুন নেতৃত্ব ঠিক করার কথা রয়েছে এই কাউন্সিলের মধ্য দিয়ে।

এ ব্যাপারে আজ সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মঈনুদ্দীন রুহী বলেন, ‘হেফাজতে ইসলামের সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক মাওলানা মহিবুল্লাহ বাবুনগরী ২০১৬ সালে হেফাজতে ইসলাম থেকে পদত্যাগ করেন। তিনি হেফাজতে আর ফিরে আসেননি। তাঁর ডাকে কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হলে তা হবে অবৈধ।’

গত ১৮ সেপ্টেম্বর দেশের সর্বজন শ্রদ্ধেয় শতবর্ষী আল্লামা শাহ আহমদ শফী রাজধানীর আজগর আলী হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন। সেদিনই তাঁকে চট্টগ্রামের একটি হাসপাতাল থেকে ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়েছিল। পরদিন জানাজা শেষে হাটহাজারীর দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম মাদ্রাসার ভেতর উত্তর মসজিদ সংলগ্ন কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়।

এর আগে থেকেই আল্লামা শফীর অনুসারী ও জুনাইদ বাবুনগরীর অনুসারীদের বিরোধ নানা সময়ে প্রকাশ্যে আসে। যার প্রভাব পড়ে হেফাজতে ইসলামের নেতৃত্বের ওপরও। 

আল্লামা শফী মারা যাওয়ার পর তাঁর ছেলে ও হেফাজতে ইসলামের প্রচার সম্পাদক আনাস মাদানী অভিযোগ করে বলেছিলেন, তাঁর বাবা পরিকল্পিত হত্যার শিকার হয়েছেন। যদিও পরে হাটহাজারীর দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম মাদ্রাসার বাবুনগরীর সমর্থকেরা এ ধরনের অভিযোগ অস্বীকার করে এক বিবৃতিতে জানিয়েছিলেন, আল্লামা শফীর স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে।

আজকের সংবাদ সম্মেলনে আজ আবার সেই অভিযোগ সামনে এনেছেন আল্লামা শাহ আহমদ শফীর ছোট শ্যালক মো. মঈন উদ্দিন। তিনি লিখিত বক্তব্যে অভিযোগ করে বলেন, ‘গত ১৬ সেপ্টেম্বর হাটহাজারী মাদ্রাসার কিছু ছাত্রকে উসকে দিয়ে জামায়াত-শিবিরের ক্যাডার বাহিনী মাদ্রাসা অবরুদ্ধ করে। এ সময় আল্লামা শফীর কক্ষ ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, লুটতরাজ ও জোরপূর্বক তাঁকে (আল্লামা শফী) পদত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে।’

মঈন উদ্দিন আরো বলেন, ‘হুজুরের ছাত্র ও অত্যন্ত পছন্দের জুনাইদ বাবুনগরী মাদ্রাসায় অবস্থান করে মীর ইদ্রিস, নাছির উদ্দিন মুনীর, মুফতি হারুন ইজাহার, ইনআমুল হাসান গংদের দিয়ে একের পর এক মাদ্রাসার তহবিল লুটতরাজ ও ভাঙচুর করে। দুর্বৃত্তরা হজরতের খাস কামরায় প্রবেশ করে ভাঙচুর, লুটতরাজ, গালিগালাজ, হুমকি-ধামকি ও নির্যাতন চালায়।‘

‘এতে তিনি (আল্লামা শফী) ভীষণভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন। অসুস্থ অবস্থায় হজরতের অক্সিজেন লাইন বারবার খুলে দেওয়ায় তিনি মৃত্যুর দিকে ঝুঁকে পড়েন এবং কোমায় চলে যান। অনেক কষ্ট করে চিকিৎসার জন্য বের করা হলেও রাস্তায় পরিকল্পিতভাবে অ্যাম্বুলেন্স আটকিয়ে সময়ক্ষেপণ করে নিশ্চিত মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া হয়’, যোগ করেন মঈন উদ্দিন।

এদিকে হাটহাজারী মাদ্রাসায় হেফাজতে ইসলামের প্রতিনিধি সম্মেলনে সংগঠনটির মূলধারাকে বাদ দিয়ে কমিটি গঠন করা হলে তা দেশের আলেমসমাজ মেনে নেবে না বলে ঘোষণা করেছেন হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম-মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ। আজ বিকেলে রাজধানীতে জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ ঘোষণা দেন। 

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

two × 3 =

Back to top button