বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য অপসারণের দাবি যারা তুলেছে, সেই মৌলবাদীদের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ না নিলে দেশ ও জাতির ‘সমূহ বিপর্যয়ের’ আশঙ্কা প্রকাশ করেছে একাতত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি।
গতকাল রবিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে কমিটি বলেছে, আমরা গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভের সঙ্গে লক্ষ্য করছি, রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে মুজিববর্ষ উপলক্ষে জাতির পিতার ভাস্কর্য স্থাপনে বাধা প্রদান এবং স্থাপিত ভাস্কর্য ভেঙে ফেলার ভয়ঙ্কর হুমকি দিয়েছে চিহ্নিত স্বাধীনতাবিরোধী, মৌলবাদী ও সাম্প্রদায়িক অপশক্তি।
নির্মূল কমিটির বিবৃতিতে বলা হয়, গত ১৩ নভেম্বর করোনাকালীন যাবতীয় বিধিনিষেধ লঙ্ঘন করে তারা (ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন) যেভাবে গেণ্ডারিয়ার ধূপখোলার মাঠে সমাবেশ করেছে এবং যে ভাষায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতি বিষোদ্গার করেছে, তা রাষ্ট্রদ্রোহিতাতূল্য অপরাধ হলেও এখন পর্যন্ত এর বিরুদ্ধে সরকারি কিংবা সরকারদলীয় কোনও প্রতিবাদ আমাদের নজরে পড়েনি।
গেল ১৩ নভেম্বর জুমার নামাজ শেষে রাজধানীর ধূপখোলা মাঠে এক সমাবেশ থেকে ধোলাইপাড়ে বঙ্গবন্ধুর নামে স্থাপিত ভাস্কর্যকে ‘মূর্তি’ আখ্যা দিয়ে তা অপসারণের দাবি তুলে ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন।
‘তৌহিদী জনতা ঐক্যপরিষদের’ ব্যানারে অনুষ্ঠিত ওই সমাবেশে বক্তরা বলেন, মূর্তির বদলে আল্লাহ, কোরআন ও হাদিসের বাণী সম্বলিত মিনার স্থাপন করতে হবে। বাংলাদেশ মসজিদের দেশ, আউলিয়ার দেশ, মাদরাসার দেশ। এদেশে কোনও মূর্তি থাকতে দেয়া হবে না।
ওইদিনই রাজধানীর বিএমএ অডিটোরিয়ামে বাংলাদেশ খেলাফত যুব মজলিস ঢাকা মহানগরীর উদ্যোগে শানে রিসালাত কনফারেন্সে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব ও বাংলাদেশ খেলাফত যুব মজলিসের কেন্দ্রীয় সভাপতি মাওলানা মামুনুল হকও প্রকাশ্যে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপনের বিরোধিতা করেন।
ধূপখোলার মাঠে সমাবেশে আয়োজনকারী ‘তৌহিদী জনতা ঐক্যপরিষদ’কে ‘হেফাজত-জামায়াত-বিএনপির মদদপুষ্ট’ হিসেবে বিবৃতিতে আখ্যা দিয়ে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি বলেছে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও সংবিধানবিরোধী ধৃষ্টতাপূর্ণ উক্তির তীব্র নিন্দার পাশাপাশি আমরা মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক অপশক্তির এহেন রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয় অবস্থানের জন্য সরকারেরও নিন্দা করছি।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশ সরকারের নিষ্ক্রিয়তা এবং কখনও প্রশ্রয়ের কারণে মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক অপশক্তি যেভাবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী এবং সংবিধানবিরোধী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে তাতে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শূন্য সহিষ্ণতার ঘোষণা অচিরেই প্রহসনে পরিণত হবে।
সেখানে নির্মূল কমিটি বলে, যারা বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপনে বাধা দিচ্ছে এবং ইতোমধ্যে স্থাপিত ভাস্কর্য ভেঙে ফেলার হুমকি দিয়েছে এদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হলে, আমরা দেশ ও জাতির জন্য সমূহ বিপর্যয় আশঙ্কা করছি; যা আমাদের জাতীয় ও আঞ্চলিক নিরাপত্তার জন্য মারাত্মক হুমকি হতে পারে।
ওই বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন- বিচারপতি মোহাম্মদ গোলাম রাব্বানী, বিচারপতি সৈয়দ আমিরুল ইসলাম, বিচারপতি শামসুল হুদা, বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, লেখক সাংবাদিক আবদুল গাফফার চৌধুরী, অধ্যাপক অনুপম সেন, কথাশিল্পী হাসান আজিজুল হক, শিল্পী হাশেম খান, শিল্পী রফিকুন নবী, অধ্যাপক পান্না কায়সার, অধ্যাপক মাহফুজা খানম, ক্যাপ্টেন আলমগীর সাত্তার বীর প্রতীক, ক্যাপ্টেন সাহাবউদ্দিন আহমেদ বীর উত্তম, ক্যাপ্টেন আকরাম আহমেদ বীর উত্তম, অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আবদুর রশীদ, লেখক শাহরিয়ার কবির, অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন, শহীদজায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী, শহীদজায়া সালমা হক, সমাজকর্মী আরমা দত্ত, অধ্যাপক আবুল বারক আলভী, সমাজকর্মী কাজী মুকুল, মেঘনা গুহঠাকুরতা, বীর মুক্তিযোদ্ধা মকবুল-ই এলাহী, ডা. মামুন আল মাহতাব, ডা. নুজহাত চৌধুরী শম্পা, শহীদ সন্তান তৌহিদ রেজা নূর, শমী কায়সার, আসিফ মুনীর তন্ময়, তানভীর হায়দার চৌধুরী শোভন প্রমুখ।