হেফাজতে ইসলামের নতুন মহাসচিব কে হবেন?
হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমীর মুত্যুতে শূন্য হওয়া সংগঠনটির মহাসচিব পদ নিয়ে নানা হিসাব-নিকাশ শুরু হয়েছে। কে হচ্ছেন হেফাজতের নতুন মহাসচিব, কাসেমীর চেয়ারে কে আসীন হচ্ছেন- এ নিয়ে রীতিমতো অংক কষাকষি চলছে। জাতীয় কাউন্সিলের মাধ্যমে আল্লামা কাসেমীকে ওই পদে বসানোর এক মাস না পেরুতেই তার মৃত্যুতে শূন্য হওয়া এ চেয়ারটি নিয়ে জোর তৎপরতা শুরু করেছে হেফাজত।
দলের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা মহাসচিব হওয়ার দৌড়ে পাল্লা দিচ্ছেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। এমনকি সেই দৌড়ে আছেন দলটির যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মুহাম্মদ মামুনুল হকও। তবে সার্বিক প্রেক্ষাপট বিচার-বিশ্লেষণ করে শিগগিরই সংগঠনটির কেন্দ্রীয় নেতারা বৈঠকের মাধ্যমে নতুন মহাসচিব চূড়ান্ত করবেন বলে জানা গেছে।
গত ১৩ ডিসেম্বর আল্লামা কাসেমীর মৃত্যুতে হেফাজতের মহাসচিব পদে নতুন মুখ নির্বাচনের বিষয়টি আলোচনায় আসে। নানা হিসাব-নিকাশ ও জটিলতার কারণে এখনও ওই পদে দলীয়ভাবে কাউকে ভারপ্রাপ্ত হিসেবেও দায়িত্ব দেয়া হয়নি। তবে আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই শীষনেতাদের বৈঠকে নতুন মহাসচিব নির্বাচন করা হবে বলে জানিয়েছেন হেফাজতের সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী।
বর্তমানে হেফাজতের নতুন কমিটিতে চারজন যুগ্ম মহাসচিব আছেন। তারা হলেন মাওলানা জুনাইদ আল হাবিব, মাওলানা মুহাম্মদ মামুনুল হক, মাওলানা লোকমান হাকীম ও মাওলানা নাছির উদ্দিন মুনির। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, যুগ্ম মহাসচিবদের মধ্য থেকে মহাসচিব হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।
গত ১৫ নভেম্বর অনুষ্ঠিত জাতীয় কাউন্সিলের সময় মহাসচিব পদে আল্লামা কাসেমীর ছাড়াও আলোচনায় ছিলেন খেলাফত আন্দোলনের আমির ও হেফাজতের নায়েবে আমির মাওলানা আতাউল্লাহ হাফেজ্জী। কাসেমীর মৃত্যুতে শূন্য পদে হাফেজ্জী এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি আলোচনায় রয়েছেন বলে জানা গেছে। সেইসঙ্গে নতুন মহাসচিব পদে আরেক নায়েবে আমির মাওলানা নূরুল ইসলাম জিহাদী ও সম্প্রতি ভাস্কর্য ইস্যুতে বহুল আলোচিত মামুনুল হককে ঘিরেও গুঞ্জন আছে।
গত ১৮ সেপ্টেম্বর পুরান ঢাকার গেণ্ডারিয়ায় আজগর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান চট্টগ্রামের হাটহাজারীর দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম (বড় মাদরাসা) মাদরাসার মহাপরিচালক ও হেফাজতের প্রতিষ্ঠাতা আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফী। তার মৃত্যুর পর হেফাজতের নেতৃত্ব ও কর্তৃত্ব নিয়ে শীর্ষনেতাদের মধ্যে বিভক্তি তৈরি হয়। এরইমধ্যে গত ১৫ নভেম্বর দলটির জাতীয় কাউন্সিলে আল্লামা জুনাইদ বাবুনগরীকে হেফাজতের আমির ও আল্লামা কাসেমীকে মহাসচিব করা হয়। এ কমিটিকে ‘অবৈধ’ আখ্যা দিয়ে এর বিরোধিতা অব্যাহত রেখেছে হেফাজতের সাবেক যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মঈনুদ্দিন রুহী, মুফতি ফয়জুল্লাহ এবং আল্লামা শফীর ছেলে ও দলের সাবেক প্রচার সম্পাদক আনাস মাদানীসহ একটি অংশ।
এদিকে আল্লামা আহমদ শফীকে ‘পরিকল্পিতভাবে হত্যা’ করা হয়েছে- এমন অভিযোগে গত ১৭ ডিসেম্বর সকালে চট্টগ্রামে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-৩ এর বিচারক শিপলু কুমার দে’র আদালতে হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মুহাম্মদ মামুনুল হকসহ ৩৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন শফীর শ্যালক মাইনুদ্দিন। মামলায় মাওলানা নাছির উদ্দিন মুনির, মীর ইদ্রিস, হাবিব উল্লাহ, আহসান উল্লাহ, আজিজুল হক ইসলামাবাদী, জাকারিয়া নোমান ফয়েজী, নুরুজ্জামান নোমানী, আব্দুল মতিন ও মো. শহীদুল্লাহসহ ৩৬ জনের নাম উল্লেখ করে ৮০-৯০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছেন।
সকালে মামলা দায়েরের পর ওইদিন রাত ৮টার দিকে হেফাজতের সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক ইসলামাবাদীর পাঠানো এক বিবৃতিতে মামলা প্রত্যাহার করা না হলে কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা দেয়া হবে বলে হুমকি দেন সংগঠনটির যুগ্ম মহাসচিব আল্লামা জুনায়েদ আল হাবিব।
বিবৃতিতে জুনায়েদ আল হাবিব বলেন, ‘শায়খুল ইসলাম আল্লামা আহমদ শফীর মৃত্যু ছিল স্বাভাবিক, যা দেশবাসীর সামনে দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট। তাছাড়া আল্লামা শফীর ইন্তেকালের পর তার পরিবারের পক্ষ থেকে তার বড় ছেলে মাওলানা ইউছুফ এবং হাটহাজারী মাদরাসার সিনিয়র শিক্ষকবৃন্দ ভিডিও বার্তার মাধ্যমে দেশবাসীকে জানিয়েছিলেন।’
একটি কুচক্রীমহল ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা চালাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘একটি মহল আল্লামা শফীর জীবদ্দশায় তাকে ব্যবহার করে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করেছে। তাকে ব্যবহার করে নিজেদের হীনস্বার্থ হাসিল করতে গিয়ে তার আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তাকে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিয়েছে। বর্তমানে তারা আলেমদেরকে সরকারের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করে ফায়দা হাসিল করতে চাচ্ছে।’