খেলাধুলা

জয়ের কাছাকাছি থেকেও হেরেছে বাংলাদেশ!

মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে চতুর্থ ইনিংসে ২০৯ রানের বেশি তাড়া করে জেতার রেকর্ড নেই। সেই মিরপুরে দ্বিতীয় টেস্টে বাংলাদেশকে জয়ের জন্য ২৩১ রানের লক্ষ্য ছুঁড়ে দিয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ! চতুর্থ দিন সেটি তাড়া করতে নেমে শুরুটা দুর্দান্ত করলেও ব্যাটসম্যানদের অযথা শট খেলার তাড়ায় ধীরে ধীরে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ চলে যেতে থাকে তাদের নাগালের বাইরে। তার পরেও শেষ বিকালে রোমাঞ্চ সৃষ্টি করে ১৭ রানে হেরে গেছে বাংলাদেশ।

এর ফলে দুই ম্যাচের টেস্টে হোয়াইটওয়াশ হয়েছে মুমিনুল হকের দল।

দুই ওপেনারে ভর করে সূচনাটা উড়ন্তই ছিল। একটা সময় জয়ের লক্ষ্যে ভরসাও দিচ্ছিল এই জুটি। কারণ ১৪ ইনিংস পর বাংলাদেশ দেখলো ৫০ রানের পার্টনারশিপ। জুটি গড়তে তামিম খেলেছেন হাত খুলে। সৌম্য ছিলেন ধীরস্থির। ১৩তম ওভারে ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েটের বলেই তালুবন্দি হয়ে ফিরেছেন তিনি। ওভার পিচড বল কাট করতে গিয়েছিলেন। কিন্তু বল ব্যাটের কানায় লেগে কিপারের গ্লাভস ছুঁয়ে উঠে যায় ওপরে। প্রথম স্লিপ থেকে সেই ক্যাচ নিয়ে নেন ব্র্যাথওয়েট।

সৌম্যর বিদায়ের পরেও তামিম খেলছিলেন স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে। কিন্তু ২৮তম টেস্ট হাফসেঞ্চুরি তুলে বিদায় নিয়েছেন অভিজ্ঞ এই ওপেনারও। খণ্ডকালীন স্পিনার ব্র্যাথওয়েটের বলে ড্রাইভ করতে গিয়ে শর্ট কাভারে ক্যাচ তুলে দেন মোসেলির হাতে! তামিম ফিরেছেন ৫০ রানে।

ওপেনিং জুটি ভাঙার পর হতাশ করেন নাজমুল শান্ত। দ্বিতীয় সেশনের শেষ বলে কর্নওয়ালের ঘূর্ণিতে শর্ট লেগে ক্যাচ দিয়ে তিনি বিদায় নেন ১১ রানে।

তাতে চাপে পড়ে যায় বাংলাদেশ। মুশফিক-মুমিনুল মিলে কিছুটা প্রতিরোধ গড়েছিল ঠিকই। কিন্তু দলীয় সংগ্রহ ১০০ পার হওয়ার পরই ওয়ারিকানের বলে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন মুশফিক। অথচ মুশফিক রিভিউ নিয়েছিলেন এই আশায় যে বল তার ব্যাটে লাগেনি। কিন্তু মুশফিক নিজেও বিশ্বাস করতে পারেননি বল ব্যাটে লেগেছে তার! মুশফিক ফেরেন ১৪ রানে। এরপর বাংলাদেশের বিপদ আরও বাড়িয়ে দিয়ে যান মিঠুন। ১০ রান করে কর্নওয়ালের বলে ক্যাচ দিয়ে ফিরেছেন!

এমন পরিস্থিতিতে বড় জুটি স্বস্তি ফেরাতে পারতো বাংলাদেশের। মুমিনুল-লিটন প্রতিরোধ গড়ে আশাও দেখিয়েছিলেন। কিন্তু ৩২ রানের জুটি ভাঙে মুমিনুলের বিদায়েই (২৬)। ওয়ারিকানের বলে ডিফেন্ড করতে গিয়েছিলেন। বল ইনসাইড এজ হয়ে জমা পড়ে ব্যাকওয়ার্ড শর্ট লেগে থাকা কর্নওয়ালের হাতে! লিটন অবশ্য ফিরেছেন কিছুক্ষণ পর। অযথা বাইরের বল খেলতে গিয়ে গ্লাভসবন্দি হয়েছেন ২২ রানে!

ব্যাটসম্যানদের আসা-যাওয়ার মিছিলে তার পর যোগ দেন তাইজুল। কর্নওয়ালের বলে লেগবিফোরের ফাঁদে পড়েন তিনি। নাঈমও ফিরে যান দ্রুত। কিন্তু এক প্রান্ত আগলে মেহেদী মিরাজ জয়ের সম্ভাবনা জাগিয়ে তুলেছিলেন শেষ বিকালে। এর পরেও শেষ রক্ষা হয়নি। মিরাজ (৩১) ওয়ারিকানের বলে স্লিপে ক্যাচ দিয়ে ফিরলে জয়ের সম্ভাবনা তখনই শেষ হয়ে যায় স্বাগতিকদের। ১৭ উইকেট পতনের দিনে বাংলাদেশের দ্বিতীয় ইনিংস শেষ হয়েছে ২১৩ রানে। 

রাকিম কর্নওয়াল এই ইনিংসে নিয়েছেন ৪ উইকেট। তিনটি নিয়েছেন জোমেল ওয়ারিকান, ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েট।

অথচ ক্যারিবীয়দের অল্পতে রুখে দিতে চতুর্থ দিনের শুরুতে ঠিকই সফল ছিল বাংলাদেশ। ৩ উইকেটে ৪১ রান নিয়ে ব্যাটিংয়ে নেমেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। দিনের শুরুতেই জোড়া আঘাতে সাফল্য এনে দেন আবু জায়েদ। লাঞ্চ বিরতির পর ১০ রানে শেষ ৪ উইকেট হারিয়ে ১১৭ রানে দ্বিতীয় ইনিংসে গুটিয়ে যায় ক্যারিবীয়রা।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৪০৯ (বনার ৯০, ডা সিলভা ৯২; রাহী ৯৮/৪, তাইজুল ১০৮/৪) ও ১১৭ (বনার ৩৮; তাইজুল ৪/৩৬, নাঈম ৩/৩৪)
বাংলাদেশ: ২৯৬ (লিটন ৭১, মিরাজ ৫৭; কর্নওয়াল ৫/৭৪), ২১৩ (তামিম ৫০, মিরাজ ৩১; কর্নওয়াল ১০৫/৪)

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

twelve + 14 =

Back to top button