আন্তর্জাতিক

অস্ট্রেলিয়ায় পার্লামেন্টে ধর্ষণ; প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমা প্রার্থনা

প্রায় দুই বছর আগে অস্ট্রেলিয়ার পার্লামেন্ট ভবনে সেদেশের প্রধানমন্ত্রীর সাবেক একজন রাজনৈতিক উপদেষ্টা ধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন। তখন নিজের ক্যারিয়ারের কথা চিন্তা করে তিনি পুলিশে অভিযোগ করেননি। গত সোমবার এ নিয়ে কথা বলার পর সমালোচনার ঝড় উঠে অস্ট্রেলিয়া। এই পরিস্থিতিতে ওই নারীর কাছে ক্ষমা চেয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন।

২৬ বছর বয়সী ওই নারীর অভিযোগ, ওই ঘটনার পর চাকরি চলে যাবার ভয়ে তিনি চুপ ছিলেন ও পুলিশে অভিযোগ করেননি। সে সময় তিনি তাঁর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছ থেকে সামান্যই সহযোগিতা পান। ঘটনাটি নিয়ে আবার নতুন করে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।

ওই নারী বলেন, অভিযোগ করার পর মন্ত্রী রেনল্ডসের কার্যালয় পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করে। মন্ত্রণালয় বিষয়টিকে রাজনৈতিক সমস্যা হিসেবে দেখার চেষ্টা করে।

বিবিসি ও রয়টার্স সূত্রে জানা যায়, স্থানীয় সময় গত সোমবার টিভিতে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সে সময়ের বেদনাদায়ক অভিজ্ঞতার কথা বলেন ওই নারী।

জানা যায় ২০১৯ সালে ওই নারীর বয়স ছিল ২৪ বছর। তিনি জানান, ঘটনার কয়েক সপ্তাহ আগে তিনি তৎকালীন প্রতিরক্ষা শিল্পবিষয়কমন্ত্রী (বর্তমান প্রতিরক্ষামন্ত্রী) লিন্ডা রেনল্ডসের দপ্তরে কাজ শুরু করেন। ঘটনার দিন তিনি কয়েকজন সহকর্মীর সঙ্গে এক অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন। রাতে অনুষ্ঠান শেষে এক পুরুষ সহকর্মী তাঁকে বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে পার্লামেন্টে মন্ত্রী লিন্ডা রেনল্ডসের কার্যালয়ে নিয়ে যান। মদ পান করায় তিনি ক্লান্তিতে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। ঘুম ভেঙে যাওয়ায় তিনি বুঝতে পারেন, ওই সহকর্মী তাঁকে ধর্ষণ করেছেন।

ওই নারী বলেন, ‘বিষয়টি বুঝতে পারার পর আমি কাঁদতে শুরু করি। ওই সহকর্মী তখন ঘটনাস্থল থেকে চলে যান।’

ওই নারী আরও বলেন, অভিযোগ করার পর মন্ত্রী রেনল্ডসের কার্যালয় পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করে। মন্ত্রণালয় বিষয়টিকে রাজনৈতিক সমস্যা হিসেবে দেখে।

ওই নারী বলেন, যে কক্ষে তাঁকে ধর্ষণ করা হয়, সেখানেই মন্ত্রী তাঁর সঙ্গে কথা বলেন। এটি তাঁর মানসিক কষ্টকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছিল। ধর্ষণকারী ক্ষমতাসীন দলের একজন উদীয়মান নেতা ছিলেন। এ ঘটনার পর ওই নারী মরিসনের লিবারেল পার্টির আরেক মন্ত্রীর কার্যালয়ে কাজ করেন। একপর্যায়ে তিনি রাজনীতি ছেড়ে দেন।

ওই নারীর ঘটনাটি জানার পর বিশেষ করে সরকারের তরফ থেকে তাঁর প্রতি যে আচরণ করা হয়েছে, সে জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন প্রধানমন্ত্রী মরিসন। গতকাল মঙ্গলবার ক্যানবেরায় সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘ওই নারীর প্রতি যা ঘটেছে, তা শুনে আমি মর্মাহত। আমি আশা করব, ওই নারীর বেদনাদায়ক অভিজ্ঞতা আমাদের সবাইকে সচেতন করবে।’

নারীরা যাতে পার্লামেন্ট ভবনে নিরাপদে কাজ করতে পারেন, তা নিশ্চিত করতে চান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী মরিসন আরও বলেন, তিনি ওই নারীর অভিযোগ নিয়ে তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন। স্ত্রীর কথায় তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি বদলে গেছে। মরিসন জানান, স্ত্রী তাঁকে বলেছেন, প্রথমে ঘটনাটি তাঁর একজন বাবা হিসেবে বিবেচনা করা উচিত। ভাবতে হবে যদি তাঁর মেয়েদের সঙ্গে এমন ঘটনা ঘটত, তাহলে তিনি কী করতেন।

তবে মরিসনের এই বক্তব্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটারে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। সাহিত্যিক জামিলা রিজভী টুইটারে বলেন, হয়রানির শিকার নারীদের কথা বুঝতে একজন পুরুষের মেয়েসন্তান থাকতে হবে, এমন কোনো কথা নেই।
অস্ট্রেলিয়ার ক্ষমতাসীন রক্ষণশীল দলে নারীদের প্রতি সহিংস আচরণ করা হয় বলে সমালোচনা রয়েছে। ২০১৯ সালে বেশ কয়েকজন নারী আইনপ্রণেতা দায়িত্ব থেকে সরে যান।

পার্লামেন্টের সাবেক সদস্য জুলিয়া ব্যাংকস গতকাল এক টুইটে বলেন, পার্লামেন্ট হাউস নারীদের জন্য কতটা অনিরাপদ, তা আবার প্রমাণিত হলো।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

5 + two =

Back to top button